দুদকেও দুর্নীতি!

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৬, ১২:১৯ এএম

দুর্নীতি দমন কমিশ দুদকের কাজ দেশের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু সেই দুদকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নির্মূল করার কথা সে প্রতিষ্ঠান যদি নিজেরাই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে, তখন আর রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হয় না।

দুদক সূত্রে জানা যায়, দুদকের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের চেয়ে কর্মচারীরা বেশি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন, তারা ওপরের কর্মকর্তাদের না জানিয়ে ভুয়া নোটিশ পাঠিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে টাকা দাবি করেন। এজন্য অনেক কর্মচারীকে একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, কোন কোন মামলার ক্ষেত্রে তিনজন ব্যক্তি অভিযুক্ত হলে ওই অভিযুক্তদের সাথে আরো দুই একজন বাড়তি নাগরিককে মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। তাদেরকে দুদক থেকে বলা হয় তিনজন ছাড়াও মামলায় আপদের নাম দেয়া হবে। আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে মামলা থেকে আপনাদের নাম বাদ দেওয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগি নাগরিক বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ ডটকমকে এসব তথ্য জানান।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দুদকের উদ্দেশ্য, কিন্তু টাকা ক্ষমতাসহ বিভিন্ন অশুভ শক্তির কাছে প্রায় হেরে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

সম্প্রতি দুদকের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারি অভিযানসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিলেও, দালিলিক প্রমাণের দুষ্প্রাপ্যতাসহ বিভিন্ন কারণে চূড়ান্ত বিচারে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন ৫৭ ভাগ মামলার আসামি।

গত ৭ বছরের তথ্য থেকে জানা গেছে, ওই বছরগুলোতে দুদকের দায়ের করা মামলার মধ্যে ১১৪৬টি মামলার বিচারকার্য সম্পাদন হয়েছে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়া ৬৫২টি মামলার আসামি খালাস পেয়েছে, যা বিচার সম্পাদন হওয়া মামলার ৫৭ ভাগ। এছাড়া শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে ৪৯৪টি মামলার আসামি।

দুদকের কিছু কর্মকর্তা–কর্মচারির অনিয়মের করণে অপরাধিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। তবে এ থেকে বেরিয়ে আসতে দুদকের বর্তমান কমিশ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর অনেক বড় বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, এখনো সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না, দুদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমরা সে রকম কাজ করতে এখনো পারিনি বলেই এই বিশ্বাসহীনতা। এটা স্বীকার করতে লজ্জা নেই, এটাই বাস্তবতা।

তিনি বলেন, সরকারি বড় বড় প্রকল্পসহ সকল দুর্নীতি দূর করতে আমরা সক্ষম নই। বিষয়টি আপনারাই দেখবেন। কোন কোন প্রকল্পে দুর্নীতি হতে পারে তা জানানোর দায়িত্ব আপনাদেরই। আপনাদের উচিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা ও সোচ্চার হওয়া। তাহলে দুর্নীতির প্রকোপ কিছুটা হলেও কমবে। শুধু সরকারের পক্ষে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়। এর বিরুদ্ধে সবাইকে একযোগে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বিডি টুয়েন্টিফোর লাইভ ডটকমকে বলেন, দেশের দুর্নীতি নির্মূল করতে হলে আগে দুদকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে। তবে দুদকের সব কর্মকর্তা- কর্মচারী দুর্নীতির সাথে জড়িত নয়। দুদকের কিছু অংশের দুর্নীতির কারণে গোটা দেশের ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, দুদক আথবা সরকারের পক্ষে কখনো একা দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়। সব নগরিককে নিজ অবস্থান থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: