রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র : জনবল যানবাহনে ব্যয়ের অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৬, ০২:৩০ পিএম

নিউজ ডেস্ক: দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগেই ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন থাকে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাত সৃষ্টি করে ব্যয় বেশি প্রস্তাব করা হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পেও একই প্রশ্ন উঠেছে। প্রকল্পটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও সময়ের দাবি হলেও এই প্রকল্পে জনবল নিয়োগ, যানবাহন ক্রয়সহ বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিন হাজারের বেশি জনবল, শতাধিক গাড়ি, জনবলের ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ বিভিন্ন খাতের ব্যয়ের পরিমাণ নিয়ে মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সম্প্রতি এক কার্যপত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে এক লাখ ১৫ হাজার ৫০৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পের আওতায় সম্ভাব্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন।

জনবল : প্রকল্পের আওতায় বেতনভাতা খাতে ৬৯৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। জনবলের ব্যয়ের মধ্যে বেতন ৩৬ শতাংশ এবং বাকি ৬৪ শতাংশ রাখা আছে ভাতার জন্য। এতে শুধু প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিটের জন্যই জনবল ৩৬৯ জন। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কমিশনিং, স্টার্টআপ এবং পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে জনবলের সংখ্যা ২ হাজার ৫৩৫। এখানে ব্যবস্থাপনার জনবলের সর্বোচ্চ মাসিক বেতন হলো ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন বেতন ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার টাকা। ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জনবলের বেতনভাতা জাতীয় বেতন স্কেলের সংশ্লিষ্ট গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই প্রকল্পে সেটার বাইরে উচ্চহারে বেতনভাতার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সরকারি অর্থে এ ধরনের উচ্চহারে বেতন দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মতামত নেয়ার জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়েছে।-নয়াদিগন্ত।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ব্যবস্থাপনার (পিএমইউ) বাইরে প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কমিশনিং, স্টার্টআপ এবং পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতের জন্য যে জনবল প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের জন্য আলাদা বেতনভাতার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে মাসিক বেতন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১৬ হাজার টাকা মূল বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া বার্ষিক সর্বোচ্চ মূল বেতনের সমান তিন মাসের চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা মাসিক ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা, শিক্ষা ভাতা মাসিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, মূল বেতনের ৪০ শতাংশ হারে মাসিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তেজস্ক্রিয় ভাতা, ২০ শতাংশ হারে শিফট ভাতা প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব সংস্থান প্রকল্পের আওতায় রাখার কোনো সুযোগ নেই বলে পিইসি থেকে জানানো হয়েছে।

যানবাহন : প্রকল্পের জন্য শতাধিক বিভিন্ন ধরনের যানবাহন কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে ৮০ লাখ টাকা মূল্যের ১৮টি জিপ, ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ১০টি মাইক্রোবাস, ৬৫ লাখ টাকা মূল্যের ২০টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ৬৫ লাখ টাকা মূল্যের ২০টি মিনিবাস, ১ কোটি টাকা মূল্যের ৫টি বাস, ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি কার, ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি অ্যাম্বুলেন্স, ৬৫ লাখ টাকা মূল্যের ৫টি পেট্রলিয়াম ভেইকেল, ১ কোটি টাকা মূল্যের তিনটি ট্রাক, ১ কোটি টাকা মূল্যের ১টি মেইনটেন্যান্স ট্রাক, ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি স্পিডবোট, ২ লাখ টাকা মূল্যের ১০টি মোটরসাইকেল এবং ১ কোটি টাকা মূল্যের একটি রোডকিনার কার কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়েছে, এত বেশি যানবাহনের যৌক্তিকতা জানা দরকার। এ ছাড়া প্রস্তাবিত যানবাহনের একক মূল্যবাবদ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৪ ডিসেম্বর একটি আদেশ বা পরিপত্র রয়েছে। সেখানে যে মূল্য দেয়া হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি দর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ দিকে পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি সমাপ্তির পর প্রস্তাবিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বার্ষিক ব্যয়ের বিবরণী দেয়া হয়নি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: