হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমের মরদেহ রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় দাফন

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৬, ০৩:৪৪ এএম

শোকাবহ পরিবেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমের মরদেহ রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ গ্রাম গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার টুপরিয়া গ্রামে হেমায়েত বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গনে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়। সেনা বাহিনীর একটি চৌকস দল সামরিক কায়দায় রাষ্ট্রিয় সম্মান প্রদান করে। পরে সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এর আগে সেখানে জানান অনুষ্ঠিত হয়। জানযার পর পুলিশের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

দুপুর ১ টার দিকে হেমায়েত উদ্দিনের মরদেহ হেলিকপ্টারে করে টুপরিয়া গ্রামে আনা হয়। তার লাশ এসে পৌছনোর পর পরিবার ও স্বজনদের কান্নায় এলাকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

বিকেলে হেমায়েত উদ্দিনের লাশ হেমায়েত বাহিনীর স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গনে রাখা হয়। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা,মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমজীবি, পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমের ছেলে মিলন জানান, ১৯৪১ সালের ৩ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হেমায়েত উদ্দিন। তার বাবার নাম শেখ আব্দুল করিম ও মায়ের নাম সখিনা বেগম।

হেমায়েতের ভাই মুক্তিযোদ্ধা সামসুল হক জানান, হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ব্যান্ডপার্টির হাবিলদার পদে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হেমায়েত উদ্দিন ঢাকার গাজীপুর সেনানিবাস থেকে অস্ত্রসহ কয়েকজন বিদ্রোহী সৈন্য নিয়ে গোপালগঞ্জে চলে আসেন। ২৮ এপ্রিল তিনি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার রিমামেরকান্দি গ্রামে আসেন। পরে নিজ গ্রাম টুপুরিয়া এসে তিনি হেমায়েত বাহিনী গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে তিনি কোটালীপাড়া থানায় আক্রমণ করে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। কোটালীপাড়ার জহরের কান্দিতে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করেন। হেমায়েত বাহিনীতে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৫৫৫৮ জন। এ বাহিনী ৪২টি দলে বিভক্ত হয়ে বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলে পাকবাহিনীর সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়। পাক বাহিনীর সাথে রামশীলের যুদ্ধে হেমায়েত বাহিনী পাক বাহিনীকে ঘায়েল করে। এ যুদ্ধে অনেক পাক ১৫২ জন সৈন্য নিহত হয়।হেমায়েত বাহিনীর একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ গন। মারাতœক আহত হন হেমায়েত উদ্দিন। ৩ ডিসেম্বর হেমায়েত বাহিনী কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া থেকে পাক বাহিনীকে বিতারিত করে ওই দুই উপজেলাকে শত্রু মুক্ত করেন।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বঙ্গবন্ধুর সরকার হেমায়েত উদ্দিনকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করেন। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে মহান মুক্তিযুদ্ধে হেমায়েত বাহিনীর গৌরবময় স্মৃতি ধরে রাখতে কোটালীপাড়ার টুপুরিয়া গ্রামে ‘হেমায়েত বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণ করা হয়। বিগত ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন।

গত শনিবার শনিবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তিনি ২ স্ত্রী, ১১ ছেলে, ২ মেয়েসহ বহু গুণাগ্রাহী রেখে গেছেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: