পুষ্টিহীনতায় বছরে ক্ষতি ৮ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০১৬, ০২:৩৮ এএম

খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত না করার কারণে দেশে প্রতি বছর এক বিলিয়ন ডলার (১ ডলার সমান ৭৮ টাকা) আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এ সময় তিনি পুষ্টিহীনতার কারণ হিসেবে ‘টিনেজ ম্যারেজে’র কথা উল্লেখ করেন।

বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রেশন বাংলাদেশ’র উপর রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে আগামী বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়া দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য প্রতিবন্ধক। এছাড়া অপুষ্টিও আমাদের অন্যতম সমস্যা। এ দু’টি সমস্যা মোকাবেলায় সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ প্রায় চার কোটি মানুষ এখনো খাদ্য সংকটে রয়েছে। এমনকি তিনবেলা পেটপুরে খাওয়া তাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ইচ্ছেমতো বৈচিত্র্যময় খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। তারা অপুষ্টিরও শিকার। নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও এখনো প্রতি তিনজনে একটি শিশু নিপীড়নের শিকার। নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও গত কয়েকবছরে দেশের অতি অপুষ্টিহীনতার হার সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। দেশের গ্রামাঞ্চল ও বস্তিতে এ প্রবণতার হার বেশি।

তবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপুষ্টির হার হ্রাসের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের বিশেষ পদক্ষেপ রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ সমসাময়িক দেশের অপুষ্টি দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনটি। এতে বলা হয়, সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে খাদ্যে নিরাপত্তা অর্জন করতে হবে। অপুষ্টির হার কমাতে গণসচেতনতাসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে।
এসব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বরাদ্দ, দায়িত্ব সচেতনতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। সমাজের প্রতিটি নাগরিককে এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নারীদের বিশেষ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও চাষাবাদের পদ্ধতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। জোরদার করতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।

২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ সমসাময়িক দেশসমূহের বাস্তব অগ্রগতি তুলে ধরতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ‘স্ট্র্যাটেজিক রিভিউ অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) তৈরি করে।

এ সংক্রান্ত গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের আলস্টার ইউনিভার্সিটির ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স বিভাগের প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান ওসমানী। এ দলের অন্য সদস্যরা হলেন আকতার আহমেদ, তাহমিদ আহমেদ, নায়োমি হোসেন, সালিমুল হক ও আসিফ শাহান। এ দলটি ১০ মাস ধরে গুণগত ও পরিমাণগতসহ নানা মেথোডলজির মাধ্যমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অপুষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে গবেষণার পর এ প্রতিবেদন তৈরি করেন।

প্রতিবেদন তৈরিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নানা উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামালের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শহিদুল ইসলাম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. মনিরুল প্রমুখ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: