শিশুটি কী লিখছে কেউ জানেন কি?

প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০১৬, ০৬:৪৪ এএম

ঘানায় শিশুদের লেখাপড়া করা খুব কঠিন বিষয়। সেখানে দারিদ্রের কারণে বেশিরভাগ শিশু লেখাপড়া শিখতে পারে না। তবে সম্প্রতি সেখানকার গম্ভীর মুখের এক শিশু শিক্ষার্থীর ছবি ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ৫-৬ বছরের শিশুটির নাম জেক। ছবিতে তাকে গভীর মনোযোগের সাথে লিখতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটির সাহায্যে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেছেন কার্লোস কর্টেস নামের এক ফটোগ্রাফার। তিনি সেই অর্থ ঘানার গরিব শিশুদের পড়াশোনার জন্য ব্যয় করবেন। কিন্তু, শিশুটি খাতায় কী লিখছে?

ঘানার একটি গ্রামে বাবা মায়ের সাথে বসবাস করে জেক। ছবিতে দেখা যায়, জেক খুব গম্ভীর মুখে খাতায় কি যেন লিখতে ব্যস্ত। তার গাল ‍দুটি মোটা, গায়ের রঙ কালো ও শরীর খুবই দুর্বল। তাকে দেখে সহজেই বোঝা যায়, লেখাপড়া করতে সেখানকার শিশুদের খুব কষ্ট করতে হয়। তাদের বাবা-মায়েরা কষ্ট করেই শিশুদের লেখাপড়া করিয়ে যাচ্ছেন।

কার্লোস কর্টেস জনপ্রিয় ফটোগ্রাফার। তিনি ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যামি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। সম্প্রতি তিনি সালোমন অ্যাডুফা নামের এক শিল্পীর প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য ঘানা গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি জেক নামের এই শিশুর কিছু ছবি তোলেন। ছবিগুলো তিনি নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন। তারপরই ছবিগুলো ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার বার দেখা হয়েছে সেগুলো।

সালোমন অ্যাডুফা এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। কিন্তু তার জন্ম ঘানায়। তিনি সেখানেই বেড়ে উঠেছিলেন। তাই নিজের বাল্যজীবনের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য ঘানায় গিয়েছিলেন অ্যাডুফা। সেখানকার শিশুদের চিত্রকলা ও গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়েও পড়াশোনা করান তিনি।

এদিকে, জেকের ছবিটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়লে বিবিসি থেকে কার্লোস কর্টেসের সাথে যোগাযোগ করা হয়। কার্লোস বিবিসিকে বলেন, ‘সালোমন অ্যাডুফা যখন শিশুদের পড়াচ্ছিলেন, তখন আমি শুধু জেকের ছবি তুলেছি। সে সময় তেমন গুরুত্ব দেইনি। তবে জেকের মুখের গাম্ভীর্য ছবিটির মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।’

ছবিগুলো তোলার পর আবার শিকাগোতে ফিরে যান কর্টেস ও অ্যাডুফা। তারা ভাবতেই পারেননি, তাদের তোলা জেকের ছবিটি ভাইরাল হবে এবং রাতারাতি জেক একজন স্টার হয়ে উঠবে।


ছবিটি ভাইরাল হলে সালোমন অ্যাডুফা চিন্তায় পড়ে যান। কারণ, তিনি ভেবেছিলেন মানুষ হয়তো মনে করবে তিনি জেকের সাথে রসিকতা করছেন। জেককে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে বলেও মনে করতে পারেন। ছবিটি পোস্ট করার পর হাজারো মানুষ কমেন্ট করতে শুরু করেন। কিন্তু অ্যাডুফা লজ্জায় কোনো কমেন্টের রিপ্লাই করতে পারছিলেন না। তিনি মনে করছিলেন তিনি হয়তো অপরাধ করে ফেলেছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে আমি চিন্তা করলাম যে, ছবিটি যেহেতু ভাইরাল হয়েছে সেহেতু সেখান থেকে একটি ফান্ড সংগ্রহ করা যাবে। আর এই ফান্ড ঘানার শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যয় করা হবে।’

এর পর অ্যাডুফা সেই ছবি থেকে শিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করলেন। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এর পরিমাণ দাঁড়ালো প্রায় ২ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এরপর ফান্ড আরো বাড়তে থাকে।

সালোমন অ্যাডুফা বলেন, ‘এই অর্থই তাদের জীবন বদলে দিতে পারে। সত্যিই এ অর্থ তাদের ইতিবাচক জীবন গড়তে সাহায্য করবে।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: