আলাদীনের চেরাগের অপেক্ষায় বিএনপি!

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৬, ০৩:১০ পিএম

১০ বছরের বেশী সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে আছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। ক্ষমতার জন্য বিভিন্ন সময় ভিনদেশীদের দিকে তাকিয়ে থাকলেও লাভ হয়নি তাদের। ক্ষমতায় আসতে এখন আলাদীনের চেরাগের মত অলৌকিক কিছু একটা ছাড়া উপায় নেই দেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই রাজনৈতিক দলটির।

আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতায় আসে। নির্বাচন প্রতিরোধের অনেক চেষ্টা করেছিল বিএনপি। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর পারেনি। বহির্বিশ্বের কিছুটা চাপ থাকলেও ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থন থাকায় সরকারকে দমাতে পারেনি কেউই।

এরপর টানা হরতাল-অবরোধ করেও সরকারকে নড়াতে পারেনি বিএনপি। বরং এতেকরে দুর্বল হয়েছে দলটি। আন্দোলনে জ্বালাও-পোড়াও এর কারণে শত-শত মামলায় জর্জরিত হতে হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদেরকে। অনেকেই এখনও আছেন কারাগারে। শেষে ব্যর্থ হয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবেই শেষ হয় বিএনপির হরতাল-অবরোধ কর্মসুচির।

আন্দোলন করে না পেরে বিএনপি তাকিয়ে ছিল ভারতের সাধারণ নির্বাচনের দিকে। বিএনপির আশা ছিল, কংগ্রেস সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলে আওয়ামীলীগ সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন চলে যাবে। আর বহির্বিশ্বের চাপের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে রাজি হবে আওয়ামীলীগ। কিন্তু বিএনপির আশা পূরণ হয়নি। কংগ্রেস হেরে ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় বসলেও আওয়ামীলীগ সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে অটুট।

সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে নজর দেয় বিএনপি। এ নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের হয়ে বিএনপির একাধিক নেতা সে দেশে গিয়ে কাজ করেছেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে। হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনি প্রচারণার ভিডিওতে স্থান পায় খালেদা ও হিলারির শুভেচ্ছা বিনিময়ের ছবি।

কথিত আছে, হিলারির সাথে খালেদা জিয়ার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। তাই বিএনপি নেতাদের বিশ্বাস ছিল, নির্বাচনে হিলারি জিতলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিবেন তিনি। কিন্তু সে স্বপ্নও স্বপ্ন থেকে গেল বিএনপির। ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে গেলেন হিলারি। সাথে স্বপ্ন ভঙ্গ হল বিএনপির।

বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা সরকারের পক্ষেই। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। ২ জনই বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে গেছেন। এতেকরে আওয়ামীলীগও উচ্ছসিত।

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে বলে অনড় রয়েছে আওয়ামীলীগ। আর মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে দলটি। পরিস্থিতি আওয়ামীলীগের পক্ষে থাকায় ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

আর ২০১৯ সালের নির্বাচনে যদি বিএনপি আবারো বাইরে থাকে তবে তা হবে দলটির জন্য চরম বোকামি। এমনিতেই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় বিএনপি ভুল করেছে বলেও আলোচনা আছে। তাই বিএনপি নিশ্চয়ই এমন আরেকটি ভুল পুনরায় করবে না।

আর যদি ২০১৯ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় এবং বিএনপি অংশগ্রহণ করে তবে দলটির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা অনেক কম। কারণ, এ সরকারের অধীনে সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলেই বুঝা যাবে নির্বাচন সচ্ছ হবে কি না। তাই বিএনপিকে ক্ষমতায় আসার জন্য এখন আলাদীনের চেরাগের মত অলৌকিক কিছু একটা ছাড়া উপায় নেই বলেই আমার মনে হচ্ছে।

লেখক: শাহাদাত হোসেন রাকিব
সাংবাদিক
ই-মেইল: [email protected]

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: