নেপালে দেবী জীবন শেষ হবার পর যা করেন নারীরা

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৪:২৪ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নেপালে কুমারী দেবী বাছাই করার একটা প্রক্রিয়া আছে, আবার শেষ করারও একটা প্রক্রিয়া আছে। শত বছর ধরে নেপালের হিন্দু আর বৌদ্ধরা এই কুমারী দেবীকে পূজা করে আসছেন। যাকে হিন্দু দেবী তেলেজুর অবতার বলে মনে করা হয়। প্রতিদিন শত শত মানুষ তাকে 'অঞ্জলি দান' আর আর্শীবাদ নিতে আসেন।

কিন্তু এই কুমারী দেবীদের জীবনও শেষ হয়ে যায় তাড়াতাড়ি, কারণ প্রথম ঋতুস্রাবের পর তাদের শুরু করতে হয় স্বাভাবিক জীবনযাপন।

একজন কুমারীকে মন্দিরের ভেতর রাখা হয় ঋতুস্রাব না হওয়া পর্যন্ত, অনেক মানুষ লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে এই কুমারী দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

এ কুমারী দেবীকে পবিত্র মনে করা হয়। লাল কাপড়ে পড়িয়ে একটি বেদির উপর তাকে সাজিয়ে রাখা হয়, সবাই তাকে পূজা করে।

কিন্তু এই কিশোরী দেবীরাই পরে সাধারণ জীবনযাপন করে। প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা যে নারীটি শত শত মানুষকে আশীর্বাদ করে ঋতুস্রাব হবার পরেই তাকে আর পবিত্র মানা হয় না। শুরু হয় তার সাধারণ জীবনের সংগ্রাম।

একজন পুরনো কুমারী দেবী যেমন বলছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা "প্রথম যেদিন আমার ঋতুস্রাব হয়, আমি আমার মাকে সেটি জানাই। তিনি বলেন, এখন থেকে আর তুমি কুমারী দেবী নও। এখন তুমি একটি রুমে গিয়ে নিজেকে আটকে রাখো, যাতে কোন পুরুষ তোমাকে দেখতে না পারে। একটি রুমে আমাকে বারোদিন আটকে রাখা হয়।

সেখান থেকে বেরিয়ে আমাকে একটি মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আমার অনুভূতি ছিলো মিশ্র। একদিকে খারাপ লাগছিল যে, আমি আর দেবী নই। অন্যদিকে কৌতুহল হচ্ছিল, এখন আমার নতুন জীবন কি হবে, কিভাবে আমি নতুন সমাজের সঙ্গে মিশবো। আমার খানিকটা ভয়ও লাগছিল।"

নেপালের মানবাধিকার সংস্থাগুলো দাবী করছে, নেপালের উন্নয়নের লক্ষ্যের সঙ্গে কুমারী দেবীর মতো রীতি খাপ খায় না। তাদের দাবি, এটি বালিকাদের উন্নতির জন্য একটি বাধা, তাদের শিক্ষা পাওয়ার অধিকার, বন্ধু পাওয়া বা স্কুলে যাওয়ার অধিকারের জন্য অন্তরায়।

এই রীতির বিরুদ্ধে এখনো খুব বেশি মানুষ মুখ না খুললেও, অনেকেই তাদের সন্তানদের জন্য কুমারী দেবীর জীবন আশা করেন না।

তবে অনেকেই আবার এই রীতিটি বহাল রাখার পক্ষে, কারণ তাদের মতে "এই কুমারী দেবীর ঐতিহ্য খুবই স্বতন্ত্র তাই এটি রক্ষা করা উচিত।"

কিন্তু এখন অনেক কম মেয়ে কুমারী হতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।বিবিসি বাংলা

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: