‘এই জীবনটা ফিরে পাইলাম সেনাবাহিনীর কল্যাণে’

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০১৭, ০৯:০২ এএম

নিউজ ডেস্ক: ‘ভাই, কী বলব! কোনো কিছু মনে করতে চাই না, ঠিকঠাক বলতেও পারব না। শুধু এটুকুই বলি, আমরা সবাই ফিরা জনম (পুনর্জন্ম) পাইলাম!’

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গিদের আস্তানা আতিয়া মহল থেকে নিরাপদে উদ্ধার হওয়ার পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এভাবেই বলছিলেন ওই বাড়ির তৃতীয় তলার বাসিন্দা গৃহিণী শামীমা ইয়াসমিন। শামীমার মতো ৭৮ জনকে গতকাল দুপুরের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। নারী, শিশু, পুরুষ—সবার মুখে এক কথা, যেন দ্বিতীয় জীবন পেয়েছেন তাঁরা।

আতিয়া মহলের মালিক উস্তার আলী। কাস্টমসের সাবেক কর্মচারী। জঙ্গি সন্দেহে বাড়িটি ঘিরে রাখার সময় তিনি পুলিশের কাছে বাড়ির ভাড়াটে-সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য দিয়েছেন। সে তথ্য অনুযায়ী নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে ছিল জঙ্গিরা। মর্জিনা বেগম নামের এক নারী ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, মর্জিনা ছিলেন একজন নারী জঙ্গি।

পাঁচ তলাবিশিষ্ট আতিয়া মহলে ৩০টি ফ্ল্যাট। এর মধ্যে নিচতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত ২৮টি ফ্ল্যাটে ৭৮ জন বাসিন্দা জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন। গতকাল সেনাবাহিনীর অভিযানের শুরুতে বাসিন্দা ৭৮ জনকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এঁদের সবাইকে রাখা হয় পাঠানপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে। গতকাল সন্ধ্যায় ওই বাড়ির সামনে সেনাবাহিনীর প্রেস ব্রিফিং শেষে উদ্ধার হওয়া জিম্মিদের প্রথম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ফখরুল আহসান বলেন, উদ্ধার হওয়া জিম্মিদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও ২১ জন শিশু। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল ওই বাড়িতে জিম্মি যাঁরা, প্রথমে তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে আনা। আমরা সফলভাবে এ কাজ করতে পেরেছি। অতিথিদের নিরাপদে আনা হয়েছে।’

শামীমা জানালেন, বৃহস্পতিবার ভোরে বিস্ফোরণের শব্দে তাঁর ঘুম ভাঙে। এরপর বাইরে থেকে খবর পান, তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন। দরজায় খিল এঁটে দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে পুরো এক দিন ও এক রাত কাটে খাটের নিচে বসে। ঘরে আলো জ্বালানোর সাহস পাননি। শনিবার সকালে যখন দুই শিশুসন্তান নিয়ে ফিরলেন, তখনো তাঁর আতঙ্ক কাটছিল না। দুই শিশুকে দেখিয়ে বলেন, ‘অবস্থা এমনই ছিল যে বাঁচার আশা বড়দের সঙ্গে শিশুরাও ছেড়ে দিয়েছিল!’

যশোরের আশালতা ঘোষ স্বামীর চাকরির সুবাদে সিলেটে আসেন। ঘটনার মাত্র দুদিন আগে নিচতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তাঁরা। আশালতা বলেন, ‘অন্যদের চেয়ে বেশি আতঙ্কে ছিলাম। যখন জানলাম পাশেই জঙ্গিরা আছে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।’

আশালতা যখন কথা বলছিলেন, তখন তাঁর পাশে ছিল একমাত্র মেয়ে শ্রেয়া ঘোষ। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ তার কাটছিল না। মেয়েকে দেখিয়ে আশা বলেন, ‘আমরা তো না-ই, এই শিশু আর জীবনেও ভুলতে পারবে না আতিয়া মহলের কথা।’

সাথি বেগম নামের আরেক তরুণীর বাড়ি রাজবাড়ী। সিলেটে বেড়াতে এসে আতিয়া মহলে এক বন্ধুর বাসায় উঠেছিলেন সাথি। তিনি বলেন, ‘আমার আশা তো পরিবার ছেড়েই দিয়েছিল।’

কথা হয় আতিয়া মহলের বাসিন্দা পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে। বদরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ফ্ল্যাটের সবার সঙ্গে ছিল প্রতিবেশীর মতো সুসম্পর্ক। কিন্তু ঘটনার পর থেকে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করারও সাহস হচ্ছিল না।

ফায়ার ব্রিগেডে চাকরি করেন উজ্জ্বল চক্রবর্তী। জানালেন, ঘরে খাবার-দাবার সবই ছিল। কিন্তু ওই অবস্থার কারণে মুখে খাওয়া ওঠেনি আর। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে উজ্জ্বল বলেন, ‘এই জীবনটা ফিরে পাইলাম সেনাবাহিনীর কল্যাণে।’

প্রসঙ্গত, সিলেট নগরের শাপলাবাগ এলাকার সূর্যদীঘলবাড়ি থেকে ২০০৬ সালের ৩ মার্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জেএমবির শীর্ষ জঙ্গি শায়খ আবদুর রহমান সপরিবারে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। টানা তিন দিনের চেষ্টায় কোনো প্রকার রক্তপাত ছাড়াই শায়খ আবদুর রহমান আত্মসমর্পণ করেছিলেন। সূর্যদীঘলবাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে শিববাড়ির আতিয়া মহল।-প্রথম আলো।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: