চিকিৎসক সংকটে রুয়েট চিকিৎসা কেন্দ্র

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০১৭, ০৬:০১ পিএম

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য নিযুক্ত রয়েছে মাত্র তিনজন ডাক্তার ও দুইজন নার্স । জ্বর-সর্দির বাইরে চিকিৎসা নিতে গেলেই পাঠানো হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ যেন থেকেও না থাকার মত অবস্থায় পরিণত হয়েছে রুয়েটের চিকিৎসা সেবা। আর জনবলের অভাবে পর্যাপ্ত সেবা দিতে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘অতিদ্রুত ডাক্তারসহ অন্য জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।’

রুয়েট সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পথ চলা শুরু হলেও চিকিৎসা কেন্দ্র চালু হয় ১৯৭৭ সালে। বর্তমানে ছয় জন ডাক্তারের পদ থাকলেও নিয়োগ জটিলতার কারণে তিন ডাক্তারে দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। তিন ডাক্তার শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত তিন সিফটে বিভক্ত হয়ে সেবা দিয়ে থাকে। চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান হিসেবে আছেন, ডা. মোকসেদ আলী।

এছাড়া ডেপুটি মেডিকেল অফিসার ডা. ফরিদা ইয়াসমিন ও সিনিয়ার মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আজিজুল ইসলাম চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। আর এই বৃহৎ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারের কাজে সহযোগিতা করার জন্য আছে মাত্র দুইজন নার্স। এছাড়া সাবির্ক কাজ দেখা শুনার জন্য আছে ৫জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ফলে ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সবমিলিয়ে ১০ জন দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।

খোজঁ নিয়ে জানা যায়, রুয়েটের চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা থাকে শনি থেকে বৃহঃ সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত। এছাড়া ছুটির দিনেও বন্ধ থাকে চিকিৎসা কেন্দ্র। এতে করে শিক্ষার্থীদের সেবা নিতে গেলে সময়-তারিখ দেখেই যেতে হয়, বন্ধের দিনে বা রাতের বেলায় সেবা পাওয়া যায় না। অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ে গেলেও জ্বর-সর্দি, মাথা ব্যাথা ও শারীরিক দূর্বলতার প্রথমিক সেবার বাইরে কোন চিকিৎসা দেওয়া হয় না। নেই কোন কোন আধুনিক যন্ত্রপতি। ফলে একটু বাড়তি সমস্যা হলেই পাঠানো হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে।

এছাড়া প্রায় সাড়ে চারহাজার মানুষের চিকিৎসার জন্য মাত্র রয়েছে একটি এ্যাম্বুলেন্স। এ্যাম্বুলেন্স একটি থাকায় নষ্ট হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাইক্রোবাস’কে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসা কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, ‘প্রতিবছর নতুন নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে, ফলে আগের তুলনায় অধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীও বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় চিৎসাকেন্দ্রে জনবল বাড়ানো হচ্ছে না। ফলে চাইলেও আমরা চিকিৎসা সেবা ঠিকমত দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

ইলেকট্রিককাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী লাফিসা তাসনিম ও হাসিন রেহেনা বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ফলে কোন টেস্ট বা বড় কোন ধরনের চিকিৎসা সেবা পেতে আমাদের বাইরে যেতে হয়।’

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৭ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসা পাচ্ছি না। তাই চাইবো প্রশাসন আধুনিক চিকিৎসার মান নিশ্চিত করতে যে পদক্ষেপ গুলো নেওয়্ াদরকার তা যেন গ্রহণ করে।’
জনবল কম থাকায় চিকিৎসা সেবায় অসুবিধা হচ্ছে স্বীকার করে রুয়েট চিকিৎসা কেন্দ্রর প্রধান মেডিকেল অফিসার ড. মোকসেদ আলী বলেন, কম জনবল আর আধুনিক পরীক্ষা যন্ত্রপতি না থাকার কারণে চাইলেও চিকিৎসার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা চিকিৎসা কেন্দ্র আধুনিকায়নের প্রক্রিয়ার হাতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অতি দ্রুত রুয়েট চিকিৎসা কেন্দ্র তিন তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন তৈরি করা হবে । যেখানে আধুনিক সেবা নিশ্চয়তার পাশাপাশি সব ধরনের পরীক্ষা করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়েট ভিসি প্রফেসর ড. মোহা: রফিকুল আলম বেগ বলেন, ‘রুয়েট চিকিৎসা সেবা উন্নয়নে ‘একনেকে’ একটি বাজেট পাস হয়েছে। আর ডাক্তার স্বল্পতার কথা স্বীকার করে বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির অনুমোদনেরও ব্যাপার আছে, তাদের অনুমোদন পেলেই ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: