আতিয়া মহলের মালিক কে এই উস্তার আলী?

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০১৭, ১০:৫০ এএম

সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটের আতিয়া মহলের নাম কারোরই এখন অজানা নয়। এখানেই জঙ্গি বিরোধী সেনা অভিযানে ৪ জঙ্গির লাশ মিলেছে বলে গতকাল জানিয়েছিল সেনাবাহিনী। নিহতদের মধ্যে জঙ্গি কাওসার গুলশান হামলার নাটের গুরুদের একজন। তার পুরো নাম আবু তারেক মোহাম্মদ তাজউদ্দিন কাওসার। আর নিহত জঙ্গি নারী মর্জিনা তার স্ত্রী।

গত জানুয়ারিতে কাওসার ও তার স্ত্রী মর্জিনা এ বাসা ভাড়া নেয়। আর এরপর থেকেই পলাতক জঙ্গিদের গোপন আস্তানা হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে এটি। অন্য হামলার পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের জন্য এখানে অস্ত্র ও বিস্ফোরকের মজুদ গড়ে তোলা হয়। এমনকি সুসাইড ভেষ্টসহ আইএডিও তারা মজুদ করে। আতিয়া মহলের নিচতলার ফ্ল্যাট-ই নব্য জেএমবির সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম হিসেবে তারা ব্যবহার করতো।

আর এই পাঁচতলা ভবনটির মালিকের নাম উস্তার আলী। তার বয়স ৬৫ বছর। তিনি একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। সিলেট আমদানি-রফতানি অফিসে ক্লার্ক হিসেবে চাকুরি শুরু করলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে গেছেন অবসরে। প্রায় চার বছর আগে এ মহল নির্মাণ করেন তিনি।

সিলেটের গোলাপগঞ্জে বিয়ে করা উস্তার আলীর স্ত্রীর নাম আতিয়া বেগম। আর তার নামানুসারেই এই ভবনটির নাম আতিয়া মহল নামকরণ করা হয়। উস্তার আলীর রয়েছে ৭ সন্তান। এরমধ্যে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। উস্তার আলী এলাকায় শিক্ষানুরাগী ও দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত বলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়।

গত শনিবার এই ভবনের পাশে বোমা হামলায় পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হন। পুলিশ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনকালে, বাকিরা জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান দেখতে গিয়ে নিহত হন। নিহত পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুলের বাড়ি নোয়াখালী, চৌধুরী মো. আবু কয়সরের বাড়ি সুনামগঞ্জে। বাকি তিনজনের বাড়ি সিলেটে, আরেকজনের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে।

এদিকে আতিয়া মহলে আর ফিরতে চাচ্ছেন না দীর্ঘদিন ভবনটিতে বসবাস করা বাসিন্দারা। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় ঐ বাড়িতে আটকে থাকার সময়ে তাদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছে। এজন্য সেখানে আর বসবাস করা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন ভবনের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ও শিরিন আক্তার দম্পতি।

শিরিন জানিয়েছেন, পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলেও আর কখনও আতিয়া মহলে ফিরতে চাননা তিনি বা তার পরিবার। প্রতি মূহুর্তে মৃত্যুর শঙ্কায় ৩০ ঘন্টা কাটিয়ে আসার পর ঐ বাড়িতে আর দৈনন্দিন জীবন যাপন করা সম্ভব না।

তিনি জানান, গোলগুলির শব্দে তারা ধরে নিয়েছিলেন, এই ভবন থেকে আর জীবিত বের হতে পারবেন না তারা। মৃতদেহের পরিচয় যেন নিশ্চিত হতে পারে সবাই, সেজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে নিয়েছিলেন পুরোটা সময়। কিন্তু শিরিন সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে যান, যখন তার স্কুল পড়ুয়া শিশুকন্যা জানতে চায়, মা আমার তো পরিচয়পত্র নাই, আমার কি হবে? আমাকে কি মেরে ফেলবে?

শিরিন জানিয়েছেন, নতুন ভাড়টিয়াদের তেমন একটা চিনতেন না তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন মাইকে মর্জিনা বেগমকে বের হয়ে আসতে বলছিল, তারা বুঝতে পারছিলেন না কাকে ডাকা হচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: