প্রেমিকাকে হারানোর ভয়ে বিয়ে!

প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৬:৪৪ এএম

জনি সবে এইচএসসি দিয়েছে। পড়ার সময় থেকেই খুব ভাল লাগত সুমীকে। বন্ধুদের সাহস আর নিজের অদম্য সাহসকে পুঁজি করে একদিন বিকেলে সুমীদের বাড়ির সামনে কথাটা বলেই ফেলল ওকে। ওই দিন আর জানা হয়নি উত্তর। তবে পরদিন জনির এক বন্ধুর প্রেমিকা মারফত একটি চিঠি হস্তগত হল জনির। তাতে স্পষ্ট ভাবে এটা বোঝা গেল সুমীও ভালোবাসে ওকে। এর পরের ঘটনা শুধু রোমাঞ্চ আর ভালো লাগার। এভাবে সম্পর্ক চলছিল ভালোই। ইতিমধ্যে সময় গড়িয়ে সুমী উঠে গেছে কলেজে আর জনি পড়ে অনার্স ২য় বর্ষে। এর মধ্যে নিজ পাড়া আর পরিবারের লোকজনও বিষয়টা টুকটাক জানে। কিন্তু পরিবারের হাবভাব দেখে এটা বোঝা গেছে কেউই তারা বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নেয়নি।

জনি যখন ৩য় বর্ষে তখনই ঘটনার সূত্রপাত। সুমীর বিয়ে এসেছে। এখন একটি সিদ্বান্ত নিতেই হবে। না হলে সুমীকে হারাতে হবে চিরজীবনের জন্য। বিষয়টি নিয়ে জনির মাথা খারাপ অবস্থা। কি করবে সে, কি করতে পারে সে। বাস্তবতা খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারে জনি। নিজেরই চলার সাধ্য নেই যেখানে, সেখানে আরেকটি মানুষকে কিভাবে নিজের সাথে যুক্ত করা যায়। প্রচুর বই আর সিনেমা দেখার অভ্যস ছিল ছোটবেলা থেকেই।

তাই প্রেমের এই পর্যায়ের এই বিষয়গুলোর সম্ভাব্য সব বিষয় সম্পর্কে নানা ধারনার নানা পটভূমির ছবি তার মাথাতে ভালোভাবেই আঁকা আছে। ও ভাবে এভাবে নিজের জীবনটাকে হুট করে নেয়া কোন সিদ্ধান্তে ওলাট-পালট করা ঠিক হবে না। সামনে তো বহু দিন পড়ে আছে। জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞ আর কবি সাহিত্যিকরা এই বয়সের এই সময় সম্পর্কে কত নসিহতই না করে গেছেন। তাতে এটা তো পরিস্কার পুরো জীবন ভাল থাকার জন্য এই সময়টা খুব ভাল করে কাজে লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু গোলমাল বাঁধে অন্য জায়গায়। যখনই জনি একা থাকে কিংবা ঘুমানোর চেষ্টা করে তখনই তার মাথায় সুমীর বিয়ের ব্যাপারটি চলে আসে। তাতেও সমস্যা ছিল না, কারন সুমীকে এই মুহূর্তে বিয়ে করা যাবে না এমন একটি সিদ্ধান্ত ও বার বার নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু যখনই মাথার মধ্যে কল্পনার ফানুসে ভেসে উঠে সুমী অন্য আরেকজন মানুষের সাথে শুয়ে আছে তখন আর কিছুতেই বিষয়টাকে মানতে পারে না জনি। বশীভূত মন সব মানতে রাজি কিন্তু সুমী অন্য কারো সাথে শোবে এটা যেন কোনভাবেই মানতে রাজি নয়।

এখানে যেন কোন যুক্তি, জীবনের কোন দর্শন কোন কিছুই খাটে না। এটা ভাবতে গেলেই ওর মনে হয় ও পাগল হয়ে যাবে। তাহলে কি করা যায়। সমাধান একটাই সুমীকে আমারই বিয়ে করতে হবে ভাবে জনি। তাহলে আর এমন চিন্তা কুড়েকুড়ে খাবে না ওকে। ও ভেবে দেখেছে শুধু এই বিষয়টাতে এসেই তার সকল যুক্তি আর বাস্তবতাকে ফিকে মনে হয়।

অবশেষে পৃথীবির সকল অটল যুগলের মত তারাও পালিয়ে বিয়ে করে নেয়। এখন তাদের বিয়ের ৪র্থ বর্ষ চলছে। ভালো নেই ওরা। সম্পর্কে ফাটল ধরেছে আর মুক্তি চাইছে একে অন্যের থেকে। হয়ত খুব সহসাই বিচ্ছেদের পথে হাঁটবে ওরা।

এটা একটি কেস স্টাডি। অপরিনত বয়সের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জোড়ালো ভূমিকা রাখে প্রেয়সী অন্যের সাথে শোবে এই বিষয়টি মানতে না পারার বিষয়টি। আমাদের সামাজে টিনএজ এবং উঠতি তরুনদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশী লক্ষ্য করা যায়। যেহেতু ওই বয়সের ছেলে-মেয়েরা তখন একটি শারীরিক পরিবর্তন, হরমোনের প্রভাব আর একটু বেশী আবেগী হয়, তাই তাদের কঁচি মন কোনভাবেই বিষয়টি মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে না। ফলে অঘটন হয়ে দাড়ায় অবশ্যম্ভাবী।

তাই কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, নূন্যতম দুরুত্ব আর যে কোন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার মানসিকতা সব সময় রাখতে হবে। না হলে অপরিনত বয়সের একটি সিদ্ধান্ত পরিনত বয়সের সুন্দর সময়টাকে বিষাদময় করে তুলতে পারে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: