১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০১৯, ১০:৫১ পিএম
খেলাপি অর্থ ফেরত দেওয়ার নতুন সিদ্ধান্তে বাড়ছে আগ্রহ। ব্যাংকগুলোয় ধর্না দিচ্ছে অনেকেই। কোন কৌশলে সুবিধা নিয়ে খেলাপির তকমা মোছা যায় তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। কোনো কোনো খেলাপি ব্যাংকে সরাসরি যাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ ফোনেই নিচ্ছেন খোঁজখবর। তবে ‘খেলাপি’ এবং ‘ব্যাংক’ দুই পক্ষই হিসাব কষছে লাভক্ষতির। খেলাপিদের প্রশ্ন ঋণের অর্থ পরিশোধ শুরু করলেই কি মিলবে নতুন ঋণ? এজন্য দুই মাসের বেশি কি অপেক্ষা করতে হবে? আর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দেখছেন তাদের স্বার্থ। মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ায় খেলাপিঋণ সুবিধা নিয়েই চলছে আলোচনা। মোট খেলাপিঋণের ২ শতাংশ এককালীন জমা দিয়ে ৯ শতাংশ সুদে একজন ঋণ খেলাপি ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা এমন পরিপত্রের ওপর হাইকোর্টের দেওয়া স্থিতাবস্থার আদেশ দুই মাস পর্যন্ত স্থগিত করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। তবে শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, কোনো ঋণখেলাপি এ সুবিধা নিলে এ সময়ের মধ্যে নতুন করে তিনি কোনো ঋণ পাবেন না। আর বাংলাদেশ ব্যাংক ওই প্রজ্ঞাপন নিয়ে আপিল বিভাগের আদেশ পরিপালন করার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। সরকারের দেওয়া এমন সুবিধা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে খেলাপিরা। তবে দীর্ঘদিনের ঋণ পরিশোধের চেয়ে নতুন ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রেই বেশি আগ্রহ তাদের। মতিঝিলে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে একজন খেলাপি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে খোঁজ নিতে আসা এক ব্যক্তি জানান, ব্যাংকে আবেদনের জন্য সব কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নিয়মিত করলে কেমন সুবিধা পাওয়া যাবে সেসব হিসাব-নিকাশ করছেন তারা। এমন অনেক ব্যাংকেই বিভিন্ন খেলাপি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে খোঁজ নিতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এ তিন মাসেই খেলাপিঋণ বেড়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ১৮ শতাংশ। কারণ, মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপিঋণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা বা মোট বিতরণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা; যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ। বিশেষায়িত খাতের দুই ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ৪ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা; যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ৪২টি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা; যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। এছাড়া বিদেশি খাতের ৯টি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা; যা ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। গেল মাসে দেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংসদে প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেজ অনুযায়ী সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ জনের কাছে পাওনা ১ লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এদের মধ্যে শীর্ষ ৩০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৭০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। খেলাপি রয়েছে ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। শ্রেণিকৃত ঋণ ৫২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। একই সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির কাছ থেকে ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন ১৪ হাজার ৬১৭ জন। তাদের নেওয়া ঋণের মোট পরিমাণ ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। এদের মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি পরিমাণ ১ লাখ ১৮৩ কোটি টাকা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: