কক্সবাজারে পিকনিকের আড়ালে মাদক পাচার

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৫ পিএম
কক্সবাজারে পিকনিকের আড়ালে মাদক পাচারের অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজার থেকে পাচার করে আনা মাদক যাচ্ছে সারাদেশে। এসব মাদক পাচারে যুক্ত আছেন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মাদক কারবারীরা। এসব মাদক পাচার ও কারবারে কামিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এসব মাদক নিরীহদের দিয়ে বিক্রি করানো হচ্ছেও বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, র‌্যাব, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড যৌথভাবে কাজ করছে। বিভিন্ন কৌশলে অভিযান পরিচালনা করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ভ্রমণ শেষে কক্সবাজার থেকে আসা পিকনিকের একটি বাসে ২ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবার একটি বিশাল চালান জব্দ করেছে চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭। সেই সঙ্গে ইয়াবা পাচারে জড়িত বাসটির মালিকসহ ৬ জনকে আটক করেছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলি শাহ আমানত সেতুর ওপর থেকে তাদের আটক করা হয়। আটকদের সবার বাড়ি যশোর, রাজশাহী ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায়। র‌্যাব-৭ এর উপ-অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিম জানান, গত ৫ ফেব্রুয়ারি যশোর থেকে ৪০ যাত্রী নিয়ে বাসটি কক্সবাজার ভ্রমণে আসে। তারা ফেরার পথে বাসে মালপত্র রাখার জায়গায় কৌশলে লুকিয়ে ইয়াবার বিশাল চালান নিয়ে যাচ্ছিলেন। গোপন খবরের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রবেশদ্বার শাহ আমানত সেতুর ওপরে বাসটি থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। এ সময় মালপত্র রাখার স্থানে টিনশেড দিয়ে তৈরি বিশেষ চেম্বারে ২ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানিয়েছেন- ইয়াবাগুলোর মালিক মো. আতিয়ার রহমান, মো. মাসুদ রানা, মো. বাবলু ও মো. ইকবাল হোসেন। আতিয়ার রহমান বাসটির মালিক এবং তার উদ্যোগেই এই আনন্দ ভ্রমণ। র‌্যাব কর্মকর্তা শাফায়াত জামিল ফাহিম বলেন, বাসে থাকা সবাই একে অপরের আত্মীয় ও বন্ধু। কিন্তু, সবাই ইয়াবা নিয়ে আসার সঙ্গে জড়িত নন। ছয়জনের সমপৃক্ততা পেয়েছি। তাদের আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাসটি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যায়, সেখানে তারা সবাই সেন্টমার্টিনে বেড়াতে যান। কিন্তু, টেকনাফেই বাসের সঙ্গে আতিয়ার রহমান, মাসুদ রানা, বাবলু, ইকবাল হোসেন, বাসচালক জুয়েল ও আমিনুর রহমান সুমন রয়ে যান। তারাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি এড়াতে বাসের মালপত্র রাখার জায়গায় কৌশলে ইয়াবাগুলো রাখেন। ইয়াবার বিশাল এই চালান আটকদের চট্টগ্রাম, ঢাকা ও যশোরে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা ছিল বলেও জানান র‌্যাব কর্মকর্তা শাফায়াত জামিল ফাহিম। শাফায়াত জামিল ফাহিম বলেন, বাসটির মালিক কক্সবাজারে ঘনঘন পিকনিকে যান। এই কৌশলে পিকিনিকের গাড়িতে করে লাখ লাখ ইয়াবা চট্টগ্রাম, ঢাকা ও যশোরে পাচার করে আসছেন। পিকনিকের গাড়ি হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে গেছেন প্রত্যেকবারই। এবারই প্রথম ধরা পড়ে বাসটি। অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজারে পিকনিকে এসে ইয়াবা পাচারের কাজে জড়িয়ে পড়া পর্যটন শিল্পকে কুলষিত করছে। ইয়াবাসহ ধরা পড়া পাচারকারীরা পরিবার ও ছেলে মেয়েদের সঙ্গে আনন্দ ভ্রমণের নামে প্রতারণা করেছে। পরিবার পরিজনকে টেকনাফ পর্যন্ত নিয়ে এসে এসব মাদক পাচারকারীরা বাস থেকে নেমেই কালেকশনে নামে ইয়াবার। কক্সবাজার জেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফের টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের কাছে পুলিশের তালিকাভুক্ত ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেন। ইয়াবা গডফাদারদের তালিকায় ৭৩ জনের নাম থাকলেও এর সংখ্যা আরও বেশি। তাদের মধ্যে আত্মসমর্পণ করেছে মাত্র ৩০ জন। এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ৩ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা জমা পড়ে। জমা পড়েছে ৩০টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ৭০টি তাজা কার্তুজ। আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের এ আত্মসমর্পণের পরও থেমে নেই ইয়াবা পাচার। পুলিশ প্রশাসন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তদন্তে বেরিয়ে আসছে ইয়াবা পাচারের আরও নতুন নতুন তথ্য। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ইয়াবা বহনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পাচারকারীরা পাকস্থলীতে ঢুকিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেয়। ইয়াবা পাচারকারীদের অনেকেই এই দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তাদের শরীর স্ক্যানিং করায় ইয়াবা ধরা পড়ছে। ক্রমাগত উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাওয়ায় ইয়াবা বাহকরা ধরা পড়ছে। এভাবে কঠোর উদ্ধার অভিযান চলমান রাখলে একসময় ইয়াবা পাচার থেমে যাবে বলেও অনেকেই মনে করছেন। সূত্র জানায়, কক্সবাজারে পিকনিকে আসার নামে মাদক কারবারীরা অন্য জায়গায় মাদক চালানের ক্ষেত্রে কৌশল পরিবর্তন করছে। স্থলপথের পরিবর্তে জলপথকেও ব্যবহার করছে। স্থলপথে দীর্ঘ যানজটের কারণে সময় বেশি লাগা, পাকস্থলীতে করে ইয়াবা নিয়ে আসা, দীর্ঘক্ষণ পেটে মাদক থাকায় সেই মাদক বহনকারীর জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া এবং যানজটের কারণে কৌশল হিসেবে মাদক বহনকারীরা নৌপথেও পাচার করে আনছে। কক্সবাজার থেকে চট্রগ্রামে আসার পর তারা এসব কৌশল ও পথ পরিবর্তন করছে। রুট বদল করেও তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে পারছে না। তাদের দেখলেই বোঝা যায় এরা মাদক পাচারকারী। কক্সবাজারে পিকনিট স্পট থেকে কেনা খেলনা-পানি, সুপারি, মরিচ, নারিকেল, ডাব, লাউ, কুমড়া, পাতিল, মেডিকেল ইমার্জেন্সি ক্রয় করছে। এসবের ভেতরে ভরে তারা মাদক আনছে। বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তি টুপি, নারীরা শরীরের মধ্যে, হাতে ক্যাপেটাল লাগিয়ে মুমূর্ষু রোগী সেজেও মাদক আনা নেয়া করা হচ্ছে। কক্সবাজার আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মাদক মামলা অনুযায়ী কক্সবাজার জেলার মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ১ হাজার ১৫১ জনের তালিকা হয়েছে। তাদের মধ্যে আত্মসমর্পণ করেছে ১০২ জন। এদের কাছ থেকে ৬০০ মাদক ব্যবসায়ীর নাম পাওয়া গেছে। এ নামের ভিত্তিতে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, পিকনিকে অংশগ্রহনকারী মাদক কারবারীরা মাদক পাচার অব্যাহত রেখেছে বলে সূত্রের দাবি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: