করোনার লক্ষণ নিয়ে দেশে ১৩ শিশু-কিশোররের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২০, ১০:০৫ পিএম
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নিয়ে আইসোলেশনে থাকা একাধিক রোগীসহ আরো ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন শিশু-কিশোর এবং এক কলেজছাত্রও রয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দুজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজবাড়ীতে মারা গেছে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে ঢাকায় পাঠানো এক রোগী। শরীয়তপুরে আইসোলেশনে থাকা এক রোগী মারা যাওয়ার পর পাঁচ বাড়ি লকডাউন ও ২৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এসব মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় জনমনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টিন ও বাড়ি লকডাউনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা দুই ব্যক্তি গত মঙ্গলবার রাতে ও গতকাল বুধবার ভোরে মারা গেছেন। তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করেনি হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ। সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁরা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এ জন্য তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, সোমবার একজন ও মঙ্গলবার অন্যজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের বয়স যথাক্রমে ৬৫ ও ৩২ বছর। দুজনই পুরুষ। তাঁদের বিভিন্ন রোগ ছিল। এ ছাড়া তাঁদের মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণও ছিল। ময়মনসিংহ: করোনা আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নিয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে হোসেন আলী (২০) নামে এক কলেজছাত্র মারা গেছেন। তিনি চার দিন আগে ঢাকা থেকে জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে উচাখিলা ইউনিয়নের গোল্লা জয়পুর গ্রামে বোনের বাড়িতে আসেন। সেখানেই বিকেলে মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজন তড়িঘড়ি করে মরদেহ নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার জল্লি গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করে। মারা যাওয়া শরীফের বড় বোন ও ভাগ্নি জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হওয়ায় এলাকায় করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ওই দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম মো. মসিউল আলম জানান, ওই দুজনের নমুনা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। ঝালকাঠি: কাঁঠালিয়ায় গত মঙ্গলবার রাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নিয়ে আবির সরদার (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে ওই বাড়ির ছয়টি পরিবারের ৩০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। শিশুটি উপজেলার আমুয়া বন্দরের সরদারপাড়া গ্রামের শহীদ সরদারের ছেলে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন বলেন, ‘জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তার পরও ওই বাড়ির লোকজন আগামী ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবে।’ নড়াইল: জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে শওকত আলী (৩০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, শওকতের শরীরে এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গা ব্যথাসহ করোনা সংক্রমণের নানা উপসর্গ ছিল। ঢাকায় আইইডিসিআরে করোনা সংক্রান্ত হটলাইনে ফোন দেওয়া হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গত মঙ্গলবার রাতে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তিনি মারা যান। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. তহিদুল হাসান তুহিন বলেন, রোগীকে যখন জরুরি বিভাগে আনা হয় তখন তার বমি ও শ্বাসকষ্ট ছিল। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না পরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। রাজবাড়ী: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট থেকে আক্কাস সরদার নামে ৬০ বছর বয়সী একজনকে ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ব্যবস্থা দিয়ে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়। আর বাড়ি ফেরার পথে দৌলতদিয়া ঘাটে তিনি মারা যান। নাটোর: করোনা সংক্রমণের লক্ষণ নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক তরুণ গত মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বুলবুল (২২) নামে ওই তরুণ সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সাতক্ষীরা: কালীগঞ্জে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গতকাল ভোরে শিল্পী খাতুন নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার ফতেপুর গ্রামের সিরাজুল কারিকরের স্ত্রী। করোনার লক্ষণ নিয়ে এই মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৈয়বুর রহমান ঘটনাস্থল ঘুরে এসে বলেন, রক্তচাপ কম থাকায় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে মনে হয়েছে। ফেনী: করোনা আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নিয়ে ফেনীতে এক যুবক (৩০) মারা গেছেন। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার পশ্চিম ছনুয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর খবরে এলাকায় করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চার-পাঁচ দিন আগে ওই যুবকের জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সোমবার তাঁর স্বজনরা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দেন। অবশেষে গতকাল দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, লাশ মর্গে রয়েছে। মৃত্যুর কারণ জানতে নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরকে অবহিত করা হয়েছে। শরীয়তপুর: সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে করোনা সন্দেহে ভর্তি হওয়া এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে জেলা প্রশাসন নড়িয়া উপজেলার পাঁচটি বাড়ি লকডাউন করাসহ ২৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনির আহমেদ খান বলেন, ‘মারা যাওয়া যুবকের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।’ বগুড়া: বগুড়া আইসোলেশন ইউনিট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৩ বছরের এক শিশু শরীরে করোনার সব লক্ষণ নিয়ে গতকাল রাতে মারা গেছে। চট্টগ্রাম: প্রায় ১০ ঘণ্টার ব্যবধানে চট্টগ্রামে আইসোলেশনে থাকা আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক কিশোর নগরের আন্দরকিল্লায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মাথায় মারা যায়। গতকাল সকালে মারা যাওয়ার পর দুপুরে নমুনা পরীক্ষায় তার দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়েনি বলে জানা গেছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) ডা. অসীম কুমার নাথ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরের পাঁচ দিন ধরে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট ছিল। এর আগে মঙ্গলবার রাতে সীতাকুণ্ড উপজেলার বিআইটিআইডিতে আইসোলেশনে থাকা ৫৫ বছর বয়সী এক নারী মারা যান। তবে ওই নারীও করোনায় আক্রান্ত নন বলে জানান ওই হাসপাতালের চিকিৎসক শাকিল আহমেদ। ভোলা: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়া এক রোগীকে সদর হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ইউনিটে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। হারুন (৫৪) নামের ওই রোগীর বাড়ি দৌলতখান উপজেলায়। তিনি শ্বাসকষ্ট ও বুকের ব্যথায় ভুগছিলেন। সিভিল সার্জন জানান, মারা যাওয়া ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। সূত্র: কালের কণ্ঠ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: