লকডাউন নিয়ে হ-য-ব-র-ল

প্রকাশিত: ০৭ জুন ২০২০, ০৪:০৯ পিএম
লকডাউন ঘোষণা নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ওয়ারী ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে (রাজাবাজার, ইন্দিরা রোড, মনিপুরীপাড়া, শেরেবাংলা নগর ও গ্রিন রোড) আজ রবিবার থেকে লকডাউন শুরু হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি লকডাউনের ব্যাপারে সুপারিশ পাঠাবে মন্ত্রণালয়ে। সেই সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর লকডাউন কার্যকর করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, লকডাউন ঘোষণার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে লকডাউন ঘোষণা নিয়ে গতকাল বৈঠক হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের পক্ষে একজন অতিরিক্ত মহানগর পুলিশ কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সংক্রমণের মাত্রা বাড়লেও আর সাধারণ ছুটির সিদ্ধান্তে ফিরছে না সরকার। জোন ভাগ করে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করার কথা জানালেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। রবিবার থেকেই রাজধানীতে জোন ভাগের কাজ শুরু হবে। প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, পুরো দেশে আর ছুটি ঘোষণার চিন্তা নেই সরকারের। ঝুঁকি বিবেচনায় রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার দিকেই এগোচ্ছেন তারা। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিয়ে রবিবার থেকেই ঢাকায় জোন ভাগের কাজ শুরু হবে। অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ঢাকার একাধিক জায়গা রবিবার ভাগ করার একটি প্রচেষ্টা হাতে নেওয়া হয়েছে। রেড জোনগুলোতে সবকিছুই বন্ধ করা হবে। এদিকে রেড জোন ঘোষণার ক্ষেত্রে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়ানোর মাপকাঠিতে ওপরের দিকে রয়েছে উত্তরা, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, কাকরাইল, মুগদা, মগবাজারের মতো এলাকা। রাজধানীতে এখন পর্যন্ত এমন ২৩টি এলাকা রয়েছে, যেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক। জানা গেছে, আজ রবিবার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার কিছু স্থানে জোনিং ব্যবস্থার মাধ্যমে লকডাউন শুরু হবে। রেড জোনে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে, একান্ত প্রয়োজন না থাকলে কেউ বাইরে বের হতে পারবেন না। ঐ এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব জিনিসের দরকার হবে, তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়েলো এবং একেবারে কম আক্রান্ত বা আক্রান্তমুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়েলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে, সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ঢাকায় ২০ হাজার ৭০৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে মিরপুর এলাকায়। সেখানে করোনায় আক্রান্ত ৯৬৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে মহাখালীতে। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ৪৫৭ জন। আক্রান্তের তালিকায় এর পরে আছে উত্তরা, মুগদা ও মোহাম্মদপুর। আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৩৩, ৪২৮ ও ৩৯৪। বাকি যেসব এলাকায় সংক্রমিত রোগী বেশি, সেসব এলাকা হলো—যাত্রাবাড়ী (৩৮৭ জন), কাকরাইল (৩০০ জন), ধানমন্ডি (২৯৪ জন), মগবাজার (২৫৫ জন), তেজগাঁও (২৫১ জন), রাজারবাগ (২২১ জন), খিলগাঁও (২১৯ জন), লালবাগ (২০৬ জন), রামপুরা (১৯৭ জন), বাড্ডা (১৯৫ জন), মালিবাগ (১৬৪ জন), গুলশান (১৬৩ জন), বাবুবাজার (১৬২ জন), গেন্ডারিয়া (১৪২ জন), ওয়ারী (১২৪ জন), বাসাবো (১২২ জন), বংশাল (১০৯ জন) এবং আগারগাঁও (১০৮ জন)। মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হবে, সেই এলাকার মেইন সড়ক খোলা থাকবে কি না, তা উল্লেখ করতে হবে। মেইন সড়ক বন্ধ থাকলে কোন গলিপথ খোলা থাকবে, তা চিহ্নিতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। লকডাউন এলাকায় দরিদ্র মানুষের খাবার ঘরে পৌঁছাতে স্বেচ্ছাসেবী টিম রাখতে হবে। এই টিম জরুরি ওষুধসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাবে। সরকারি চাকরিজীবী ও জরুরি সেবায় যারা নিয়োজিত থাকবেন, তারা লকডাউন অবস্থায় ডিউটি করবেন কি না, তা স্পষ্ট করতে হবে। কাঁচাবাজার ও ওষুধের কোন কোন দোকান খোলা থাকবে, তা উল্লেখ করতে হবে। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, জরুরি সেবা, দরিদ্রদের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোসহ সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় লকডাউনের কোনো সফলতা আসবে না। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা বলেছেন, সত্যিকারের লকডাউন এখনই বাস্তবায়ন না করা হলে সামনে বড়ো হোঁচট খেতে হবে। সূত্র: ইত্তেফাক।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: