ট্যাক্সিতে সবজির আড়ালে মানুষের মাথা

প্রকাশিত: ১৪ আগষ্ট ২০২০, ০৮:২৮ পিএম
ট্যাক্সির পেছনের ডিকি খুলতেই দেখা যায় শাক-সবজি বোঝাই একটা সাদা রঙের বস্তা। সন্দেহের কিছু নেই। কিন্তু বস্তার পেছন থেকে উঁকি দিচ্ছিল অন্য কিছু। বস্তাটা সরাতেই বস্তার পেছনে দেখা যায় মানুষের মাথা! আর তা থেকেই ঘণ্টা চারেকের মধ্যে হত্যা রহস্যের সমাধান করেছে ভারতের কলকাতা পুলিশ। ঘটনার সূত্রপাত আজ শুক্রবার ভোর বেলায়। ভোর ৪টা ১৫ মিনিট নাগাদ পশ্চিম চৌবাগার কাছে বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ের ওপর চেকিং করছিল প্রগতি ময়দান থানার মোটরসাইকেল পেট্রল পার্টি। পুলিশ একটি হলুদ রঙের ট্যাক্সি থামায়। রুটিন তল্লাশি করতেই তারা ট্যাক্সির ডিকি খুলতে বলেন চালককে। নাকার অন্য পুলিশকর্মীরা লক্ষ্য করেন, চালক ডিকি খুলতেই ট্যাক্সিতে বসা এক ব্যক্তি নেমে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। পুলিশ তাকে আটক করার পর সবজির বস্তার আড়াল থেকে বেরিয়ে পড়ে ৬০ বছরের এক নারীর রক্তাক্ত দেহ। ট্যাক্সিতে চালক ছাড়া ছিলেন এক নারী এবং এক পুরুষ যাত্রী। সঙ্গে সঙ্গে প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ ট্যাক্সিচালকসহ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ট্যাক্সির যাত্রী নারীর নাম মলিনা মণ্ডল এবং তার সঙ্গী পুরুষ যাত্রীর নাম অজয় রং। জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে অস্বীকার করলেও, পরে মলিনা এবং অজয় স্বীকার করেন, দেহ কবরডাঙার বাসিন্দা সুজাতা গায়েনের। মৃত মলিনার বড় মেয়ের শাশুড়ি। মেয়ের সঙ্গে তার শাশুড়ির বিবাদের জেরে মলিনা, অজয় এবং মলিনার স্বামী মিলে সুজাতাকে রাতে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে, গলা টিপে হত্যা করেছেন। পরে ট্যাক্সিতে দেহ তুলে সবজির বস্তার আড়ালে নিয়ে বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কোথাও ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তার আগেই ধরে পড়ে যান তারা। পুলিশ বলছে, রাস্তায় এর আগেও কয়েকটি নাকাতে আটকেছিল ওই ট্যাক্সি। কিন্তু কোনো জায়গায় গাড়ির ডিকি খোলা হয়নি বা খুললেও দেহ চোখে পড়েনি পুলিশের। এমনকি পরমা আইল্যান্ডের নাকাতেও চালক বা যাত্রীদের আচরণে সন্দেহজনক কিছু না দেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। চৌবাগার ওই তল্লাশি চৌকি পেরিয়ে গেলে সহজেই দেহ লোপাট করতে পারতেন ওই তিন জন। কয়েক দিন আগেই কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মা ভোরবেলা এবং সন্ধ্যায় শহরের রাস্তায় পুলিশের নজরদারি শিথিল হচ্ছে বলে সতর্ক করেছিলেন বাহিনীকে। সেই শিথিলতা কাটিয়ে নজরদারি বাড়াতেই সুফল মিলল হাতেনাতে। লালবাজারের এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকার করেন, আজকের ঘটনা প্রমাণ করে দিল, নাকাতে তল্লাশি আরো সতর্কভাবে করতে হবে। রুটিন তল্লাশি করে লাভ হবে না। প্রগতি ময়দান থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, পরমা আইল্যান্ডের নাকা পার হলেও চৌবাগায় আবারো পুলিশ আটকানোয় অভিযুক্তরা স্নায়ুর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়। ফলে একজন পালানোর চেষ্টা করে। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হরিদেবপুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ এরই মধ্যে কবরডাঙার ঘটনাস্থল চিহ্নিত করেছে। বিভাগীয় ডিসি গৌরব লাল জানিয়েছেন, মলিনা, অজয়, ট্যাক্সিচালক ছাড়াও, মলিনার স্বামী বাসু মণ্ডলকে আটক করা হয়েছে। সূত্র : আনন্দবাজার

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: