‘সুন্দরী নারী’ ফাঁদ পেতে প্রতারণা করত নাইজেরীয় চক্র

প্রকাশিত: ২৯ আগষ্ট ২০২০, ০৫:৩২ এএম
নাইজেরীয় ১৫ নাগরিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই চক্রটি আমেরিকান নারী সেনা কর্মকর্তা বা সুন্দরী নারী সেজে ভুয়া ফেসবুক আইডি বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাত করে। এই চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) রাজধানী মিরপুর পল্লবী থেকে এই ১৫ নাইজেরীয়কে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পল্লবী থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ নাইজেরিয়ানকে গ্রেফতারের কথা জানান সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শেখ রেজাউল হায়দার। তবে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ১৫ নাইজেরীয় নাগরিক নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করছেন। অপরদিকে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি বলছে, অভিযোগ ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের ‘সি’ ব্লকসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তাদের কারো ভিসার মেয়াদ নেই। বাংলাদেশে অবস্থান করে ডলার বা গিফট দেবার নাম করে মানুষকে বোকা বানিয়ে তারা প্রতারণা করে আসছিলেন। গ্রেপ্তার নাইজেরীয়দের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৯টি ল্যাপটপ, ২২টি মোবাইল ও ৫টি হিসাবের ডায়েরি জব্দ করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার। তিনি বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুয়া ফেসবুক আইডি ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ছবি পাঠিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর মেসেঞ্জারে জানান, তিনি ইয়েমেন, আফগানিস্তান বা সিরিয়াতে আছেন। তার কাছে কয়েক মিলিয়ন ডলার রয়েছে, কিন্তু সে দেশে যুদ্ধ চলমান থাকায় যেকোন সময় তার এই সম্পদ নষ্ট হতে পারে। তাই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে এসব ডলার বা সম্পদ তিনি উপহার দিতে চান। যদি তিনি বেঁচে থাকেন পরে তা ফেরত নেবেন। এমন প্রলোভন দিয়ে প্রথমে বন্ধুদের ঠিকানাসহ মোবাইল নম্বর নেন প্রতারকরা। পরে ওই ঠিকানায় বন্ধুদের মেসেঞ্জারে/হোয়াটসঅ্যাপে গিফট প্যাকেটের ছবি এবং একটি এয়ারলাইন্সে গিফট প্যাকেট বুকিংয়ের রশিদের কপি পাঠান। এর দুই দিন পর ভুক্তভোগীকে ভিডিও কলে এয়ারপোর্ট কাস্টমস অফিসে থাকা গিফট প্যাকেট দেখান এবং কাষ্টমসের ভ্যাট বাবদ বিভিন্ন ধাপে টাকা নিতে থাকেন। অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার আরও বলেন, ফরহাদ হোসেন তালুকদার নামে এক সরকারি চাকরিজীবী এভাবেই এই চক্রের কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তার কাছ থেকে বিভিন্ন একাউন্টে সোয়া ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। পরবর্তীতে সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরে আর টাকা না পাঠিয়ে সিআইডিকে বিষয়টি জানান তিনি। শুধু ফরহাদ নন, অনেক লোকের কাছ থেকে চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগী ফরহাদের কাছে আবারও টাকা চেয়ে ফোন করলে সিআইডির একটি দল হাতনাতে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে। এবং মোবাইলফোন, ল্যাপটপসহ বিপুল পরিমাণ আলামত জব্দ করে। সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, চক্রটি এ পর্যন্ত ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে গিফট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বোকা বানিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে স্ব-স্ব দেশের সহযোগী ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতারকচক্র প্রতিটি দেশেই চক্রের একজন করে সহযোগী রয়েছে। তিনি বলেন, গত ২ জুলাই ও ২১ জুলাই প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওই দুই প্রতারকের সঙ্গে এই চক্রের অর্থ লেনদেন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম মিলে যাওয়ায় তাদের প্রতারণা প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে থাকলেও মূলত তিনটি দল একই চক্রের। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পল্লবী থানায় একটি মামলা (নম্বর-৩৮) দায়ের করা হয়েছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয় বলেও জানান সিআইডি কর্মকর্তা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: