রুই হাটে দেশী বিদেশী ক্রেতাদের বিশাল সমাগম

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:২১ পিএম
রামীম তানভীর রাহমান বর্তমানে কিউবেক, কানাডায় বসবাসকারী বাংলাদেশী প্রবাসী। কানাডায় পরিবার নিয়ে থাকেন দীর্ঘদিন। নিজ গবেষণা কর্ম ও উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় কানাডায় পারি জমালেও তিনি রীতিমত মনে প্রাণে বাংলাদেশকে মন থেকে ভালবাসেন। ভালবাসেন বাংলার ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও গ্রামীণ পণ্য। রুই হাটে এসেছেন স্ত্রী ও কোলের বাচ্চাসহ। কিনেছেন স্ত্রীর পছন্দমতো মনিপুরী শাড়ী, বাসায় ব্যবহারের জন্য শতরঞ্জি, মেয়ের জন্য খাদির জামা, দেশী নাড়ু আর পাবনার তাঁতের লুঙ্গি। তিনি কুরিয়ার করে পণ্যগুলো নিবেন কানাডায়। অপরদিকে সালেহ মোহাম্মদ আদনান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কর্মরত। ঢাকায় তাঁর মা-বাবা থাকেন। হঠাৎ মায়ের সাথেই কথা বলে জানতে পারেন তাঁর মা ভাল ইলিশ মাছ খেতে চান। কিন্তু তিনি সিডনিতে এখন উপায়! ফেসবুক ঘুরতে ঘুরতে খোঁজ পেলেন রুরাল ওমেন ই-কমার্স স্কুল (রুই) নামক একটি গ্রুপ। গ্রুপে ঢুকতেই দেখতে পেলেন রুই হাটবার চলছে। কিনে ফেললেন চাঁদপুরের অনেক গুলো ইলিশ। রুইয়ের মাছওয়ালী দিপা আপার কাছ থেকে। ইলিশ পেয়ে তাঁর মা অত্যন্ত খুশি। এ গেলো গত রুই হাটবারের কথা। মাছের আসল স্বাদ নিজের আত্মীয়দের মাঝে বিলিয়ে দিতে তিনি পুনরায় ইলিশ ক্রয় করেন এই সপ্তাহের হাটবার থেকে তাঁর শ্বশুর বাড়ির জন্য। তাঁর শ্বশুর বাড়ি কুস্টিয়া। কুস্টিয়ায় সাধারণত ভালো মানের চাঁদপুরের ইলিশ পাওয়া যায় না। তিনি আশা করেন এই সপ্তাহের হাটবার শেষে মাছ গুলো তাঁর শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছালে তাঁর আত্মীয়রাও চাঁদপুরের আসল ইলিশ পছন্দ করবেন। এতক্ষণ বলছিলাম রুই হাটবার সম্পর্কে। অনলাইন ফেসবুক ভিত্তিক গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের একমাত্র প্লাটফর্ম রুই স্কুল। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার রাত ৯ টা থেকে শুক্রবার রাত ৯ টা পর্যন্ত চলে হাটবার। ভিন্নধর্মী হাট! বেচা-কেনা হয় ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইনে গ্রুপে। শ্যামল চন্দ্র হাওলাদার, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া'র উপ-পরিচালক। খুবই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। করোনাকালে, বৃষ্টিতে ভিজে পূজার কেনা-কাটা খুবই অপছন্দ তাঁর। ঘরে বসেই স্ত্রী ও দুই মেয়ের পছন্দ মতো কেনা-কাটা শুরু করেছেন রুই হাট থেকে। শ্যামল বলেন, রুই হাটে কেনা-কাটায় বাজারে যেতে হয় না, ব্যাগ টানার ঝামেলা নাই, পকেটমারের ভয় কিংবা ব্যাগ হারানোর ভয় নাই। এমন হাট উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। অপরদিকে সীমা হালদার, বর্তমানে ঢাকায় থাকেন। তিনিও অনলাইনে রঙধনু ই-বাজার নামে অনলাইন ব্যবসা করেন। তিনি রুই হাটবারে যেমন নিজের পণ্য বিক্রয় করেন তেমনি ক্রয় করতেও সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তিনি প্রতি সপ্তাহের নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার কেনাকাটা করেন রুই হাটবার থেকেই। এদিকে ড. পোশাক আপা নামে রুই স্কুলের পরিচিত মুখ দিলরুবা বেদানা নিজে পিএইচডি করেছেন এগ্রিকালচার ইকোনমিক্সে কিন্তু তিনি এখন পোশাক নিয়ে কাজ করেন। একজন নারী উদ্যোক্তা। যেমন বিক্রয় করেন তেমনি নিজের পছন্দের প্রয়োজনী জিনিসপত্র কিনতে ভালবাসেন রুই হাট থেকে। রুই হাটবার সম্পর্কে রুই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মনিরুল ইসলাম জানান, রুই হাটবার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাজার দরের বেশি নয়, হবে না কোন নয় ছয় এটি রুই হাটবারের শ্লোগান। বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পণ্যের অভয়আশ্রম হতে চলেছে রুই হাটবার। জারি গান, সারি গান, আঞ্চলিক ভাষা, গল্প, কবিতা, কমেডি ভিডিও ইত্যাদির মাধ্যমে বিক্রেতারা ক্রেতাগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন রুই হাটবারে। এ যেন সত্যিই গ্রাম্য হাটবার। গ্রামীণ পণ্যের মেলা, উৎসবমূখর আয়োজন। রুই হাটবার সম্পর্কে রুই স্কুলের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, গ্রামীণ নারীদের তৈরি নিরাপদ খাদ্য ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যের বিশাল মেলা বসে রুই হাটবারে। স্বল্প মূল্যে মানসম্মত পণ্য বেচা-কেনায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হচ্ছেন৷ রুই হাটবার গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করছে। রুই হাটে বিশাল পণ্যের পরসা নিয়ে বসেছেন দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী চালওয়ালা বিশ্বাস, শতরঞ্জির সিফাত, খাদি নওশিন, স্বদেশী শাড়ী কন্যা মনি। এ সপ্তাহের রুই হাটবারে আট হাজারের অধিক ক্রেতা-বিক্রেতার বিশাল সমাগম হয়েছে৷ একে অন্যের পণ্য কিনছেন, একই সদস্য কখনো ক্রেতা কখনো বিক্রেতা এ যেন গ্রাম্য ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সহযোগী মানুসিকতার এক বিশাল একান্নবর্তী পরিবার।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: