এনআইডি সেবা মানুষের দ্বারপ্রান্তে নয়, হাতের মুঠোয় পৌঁছে দিচ্ছি: ডিজি

প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর ২০২০, ০১:১৯ এএম
দীর্ঘদিন এনআইডি সেবা নিয়ে মানুষের আভিযোগ থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইসির এনআইডি অফিস দালাল মুক্ত করা হয়। এছাড়া এনআইডি সেবা সহজ করে মানুষের হাতের মুঠোয় আনতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সাইদুর ইসলাম এনআইডিতে দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে তিনি বিভিন্ন জায়গায় শুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এনআইডির সার্বিক বিষয় নিয়ে তিনি বিডি২৪লাইভ ডটকমকে একান্তে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বিডি২৪লাইভ: দায়িত্ব নেওয়ার পর এনআইডি সেবা সহজ করতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন? মো. সাইদুল ইসলাম: আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একটার পর একটা স্টেপ নিয়েছি। প্রথমে এনআইডি থেকে দুর্নীতি ও দালাল মুক্ত করার ব্যবস্থা করি। এরপর সহজে জনগণের দ্বারপ্রান্তে এনআইডি সেবা কি ভাবে দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করি। পরবর্তীতে আমরা মানুষের দ্বারপ্রান্তে নয়, হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। এ কাজটি করতে আমার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। এখন কাউকে এনআইডির সেবা পেতে উপজেলাও যেতে হচ্ছে না। ঘরে বসে সব সেবা পান ভোটাররা। কয়েকমাস আগেও প্রধান কার্যালয়ে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার লাইন থাকত, কিন্তু এখন লাইন তো দূরের কথা কোন মানুষই দেখা যায় না। বিডি২৪লাইভ: করোনাকালে আপনারা কিভাবে এনআইডি সেবা দিলেন। এ সেবা দিতে গিয়ে কোন চালেঞ্জের মুখে পরতে হয়েছে কি? মো. সাইদুল ইসলাম: করোনা মহামারীতে স্থবির বিশ্বে বিভিন্ন প্রয়োজনে এনআইডির গুরুত্ব অনেকগুণ বেড়ে যায। গত ২৬ এপ্রিল থেকে সরকারের সাধারণ ছুটির কারণে এনআইডি সেবা নিশ্চিতে বিশাল চ্যালেঞ্জের সামনে পড়েছি। তবে সব চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে আমি কমিশনের সিগনাল নিয়ে অনলাইন সেবা চালু করি। বর্তমানে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই এনআইডির সকল সেবা নিতে পারছেন সর্বসাধারণ। তিনি বলেন, অনলাইন সেবা চলুর পর থেকে কেউ দুর্নীতির দুর্গন্ধ পায়নি। আমি অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে অল্পসময়ের মধ্যে কাজ শুরু করি। এখন এটার সুফল পাচ্ছি আমরা। অনলাইন সেবাটা চালু করতে আমরা কার্ড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করেছি। বর্তমানে এ সফটওয়্যারের মাধ্যমেই মানুষের হাতের মুঠোয় সেবাটা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এ সেবার ফলেই দুর্নীতির সব শেকড় বা পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ অনলাইনে আবেদন করলে যদি কাগজপত্র ঠিক থাকে তাহলে কারেকশন মাইগ্রেশনের জন্য তাকে কিন্তু আসতে হচ্ছে না। ঐ অ্যাপের মাধ্যমেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে পারছে। আর যারা নতুন ভোটার হচ্ছে তারা অনলাইনে সব তথ্য দিয়ে আবেদন করছে, শুধু ছবি ও আইরিশ ছাপ দিতে একবার আসতে হচ্ছে। বিডি২৪লাইভ: এনআইডি জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে আপনার কোন কর্মকর্তা জড়িত হলে আপনি কি ব্যবস্থা নিবেন। সাধারণ মানুষ বলে ছোট কর্মকর্তাদের উপর দিয়ে সব ঝড় যায়। বড় কর্মকর্তারা জড়িত থাকলেও কিছু হয় না। এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি? মো. সাইদুল ইসলাম: আমার কাছে বড় ছোট কোন বিষয় না। যে অপরাধ করবে তার কঠোর শাস্তি দিব। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তি দিচ্ছি। এখন তদন্ত চলছে, যে মাপের কর্মকর্তা হোক জড়িত হলে আমি ছাড় দিব না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং কমিশন জানে আমি কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করি না। আমি দেশের জন্য কাজ করি। আমার যা দায়িত্ব, দেশের মঙ্গলের জন্য যা করা প্রয়োজন আমি তা করব। বিডি২৪লাইভ: অনলাইন সেবা চালুর পর এখন পর্যন্ত কতজন নাগরিক সেবা নিয়েছে? মো. সাইদুল ইসলাম: গত ২৬ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ লাখ ১৫ হাজার লোক অনলাইনে সেবা নিতে রেজিষ্ট্রেশন করেছে। এর মধ্যে এনআইডি ডাউনলোক করেছে প্রায় ২৫ লাখ ৩৫ হাজার। নতুন ভোটারের জন্য নিবন্ধন করেছেন প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার নাগরিক। হারানো আবেদন প্রায় ৪১ হাজার এবং সংশোধন আবেদন প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার। তিনি বলেন, নতুন যারা তাদের কার্ড সাথে সাথেই দিয়ে দেওয়া হয়। আর যাদের সংশোধনীর প্রস্তাব আসে সেগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই করে দিতে কিছু সময় লাগে। তবে কাগজপত্র ঠিক না থাকলে একটু বিলম্ব হয়। তবে খুব দ্রুতই এ সেবাটা একটা টাইম লাইনের মধ্যে নিয়ে আসব। ছোট-খাট সংশোধনের জন্য উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের অধিকার, পাসওয়ার্ড ও আইডি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর যে সংশোধনগুলো থাকে সেগুলো জেলা ও তারপরের সংশোধনগুলো আঞ্চলিক পর্যায়ে এবং এরপরই যেগুলো বেশি জটিল সেগুলো ‘ঘ’ শ্রেণীতে করে দেয়ার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এ সিস্টেমটা শুধু মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে করা হয়েছে। আগে মাত্র ১৫ জন দিয়ে সারাদেশের মানুষকে সেবা দেওয়া লাগতো, কিন্তু এখন ১৫ জনের পরিবর্তে আমাদের ১০ আঞ্চলিক অফিসে ২০জন অতিরিক্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তার পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন ও উপজেলা কর্মকর্তাদেরও কাজে লাগানো হয়েছে। বিডি২৪লাইভ: বর্তমানে এনআইডি অফিস গুলোতে মানুষের ভিড় কেমন। কিভাবে সেবা দেওয়া হচ্ছে? মো. সাইদুল ইসলাম: আপনারা অফিস গুলোতে গেলে দেখতে পাবেন। সব ফাঁকা, শুধু এনআইডির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রয়েছেন। সাধারণ মানুষকে আর আসতে হয় না অফিসে, ঘরে বসে তারা অনলাইনে সেবা নিচ্ছে। এনআইডি বিষয়ক সব ধরনের সমস্যা সমাধানে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) সেবা প্রার্থীদের ভিড় লেগেই থাকতো। অনলাইনে সেবা চালুর পর থেকে একধরনের জনমানব শূণ্যে পরিণত হয়েছে ইটিআই ভবন। তিনি বলেন, এনআইডি আফিসে দালালদের দৌরাত্বের আভিযোগ ছিল। আমি আসার পর জিরো টলারেন্স গ্রহণ করি। এখন আর কোন দালাল অফিসের আশেপাশে ও আসতে সাহস পায় না। তাছাড়া সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে অফিসের ভিতরে। সব সময় পর্যবেক্ষণ করা হয়। বিডি২৪লাইভ: মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ? মো. সাইদুল ইসলাম: আপনাদের জন্য শুভ কামনা রইল।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: