যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে করোনা মহামারিতে বাংলাদেশ সোসাইটি সব সময় প্রবাসীদের পাশেই থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন কর্মকর্তারা। চলমান মহামারিতে বাংলাদেশ সোসাইটি প্রবাসীদের কল্যাণে যেসব কাজ করেছেন তা নিয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় কর্মকর্তারা এসব কথা বলেন। প্রায় ছয় মাস পর গত শনিবার বিকেলে কার্যকরী কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ডের যৌথ সভা সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
চলমান বৈশ্বিক মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যেই সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, কার্যকরি পরিষদের অন্যতম সদস্য আজাদ বাকেরসহ দুই শতাধিক প্রবাসী মৃত্যুবরণ করেছেন। সভায় তাদের মৃত্যুতে সোসাইটির পক্ষ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ দোয় মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সোসাইটির বিগত দিনের কর্মকান্ডের উপরে আলোচনা-পর্যালোচনা করে আগামী দিনে কি করে আরো বেশি করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে সেসব বিষয়। নিয়ে আলোচনা হয়। আগামী দিনগুলোতে প্রবাসীদের জন্য কী করণীয় সে বিষয়ে নানা দিক নির্দেশনা দেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা।
যৌথ সভায় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম. আজিজের সভাপতিত্বে এবং সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সিদ্দিকীর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম. আজিজ বলেন, মহামারিতে সবচেয়ে কঠিনতম সময়ে বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তারা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা কমিউনিটিতে একটি বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভয়াবহ সময়ে সোসাইটির সভাপতি এবং কার্যকরী পরিষদের অন্যতম সদস্য আজাদ বাকের জীবন দিয়ে মানুষের সেবা করে গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দুই দিন আগ পর্যন্ত মানুষের সেবায় তাদেরকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। আমার মনে আছে আমরা তখন বসে মিটিং করতে পারিনি ঠিকই তবে ফোনে কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করেছি। আমরা আমাদের দুই সহকর্মীকে হারানোর পরেও শোককে শক্তিতে পরিণত করে দীর্ঘ ছয় মাস বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রবাসীদের পাশে থেকেছি সবার আগে। তিনি কার্যকরী পরিষদের সকল কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন বৈশ্বিক মহামারী এখনো শেষ হযয়ে যায়নি আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে কমিউনিটির সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিতে হবে এবং সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে যেকোনো প্রয়োজনে যাতে আমরা কমিউনিটির পাশে থাকতে পারি।
সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সিদ্দিকী তাদের পৃথক পৃথক বক্তব্য বলেন, সভাপতি মরহুম কামাল আহমেদ ও কার্যকরী সদস্য মরহুম আজাদ বাকের আকস্মিক মৃত্যু আমাদেরকে অনেক ব্যথিত করেছে। সেই সময় আমরা প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। তার মধ্যেও এত মানুষের মৃত্যুর খবর এদের পরিবারকে সহযোগিতা তাদের কবরের ব্যবস্থা করা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। একই সময়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন হসপিটালে ভর্তি। আমরা শোককে শক্তিতে পরিণত করে কার্যকরী পরিষদ এবং ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে সোসাইটির পক্ষ থেকে নিহতদের কবর প্রদান এবং ফিনারেল সার্ভিসের সহযোগিতা দেয়া ছিল আমাদের প্রধান কাজ। আর এই কাজটি কার্যকরী পরিষদের প্রতিটি সদস্যের সহযোগিতায় এবং ট্রাস্টি বোর্ডের দিকনির্দেশনা আমরা খুব সুষ্ঠুভাবে করতে পেরেছি। সেজন্য কার্যকরী পরিষদ এবং ট্রাস্টিবোর্ডের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
সভায় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জামাল উদ্দিন জনি নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সবাইকে অবহিত করেন। তিনি বলেন নির্বাচন নিয়ে যে মামলা হয়েছিল সেটার সমাধান হয়েছে এবং নির্বাচন পরিচালনা করতে এখন আর কোন বাধা নেই। তবে বর্তমান পরিস্থিতির কারণে কবে নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা এই মুহূর্তে বলতে না পারলেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন আয়োজনে সচেষ্ট রয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি এবং স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে যত শীঘ্রই একটি অবাধ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কমিশন বদ্ধপরিকর বলে তিনি জানান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য জামাল আহমেদ জনি, কাজী আজহারুল হক মিলন, আজিমুর রহমান বোরহান, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন, মফিজুর রহমান, ওয়াসি চৌধুরী, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, আব্দুল হাসিম হাসনু ও শরাফ সরকার।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও কার্যকরী কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহ-সাধারণ সম্পাদক এম কে জামান, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম ভূঁইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনিকা রায়, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক নাদির এ আইয়ুব, সাহিত্য সম্পাদক নাসির উদ্দিন, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক নওশেদ হোসেন, কার্যকরী সদস্য ফারহানা চৌধুরী, মঈনুল উদ্দিন মাহবুব, সাদী মিন্টু ও আবুল কাশেম চৌধুরী।
পাঠকের মন্তব্য: