এবার যখন আমরা ধরব, ফাইনাল হয়ে যাবে: যুবলীগ চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:৩৭ এএম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে বক্তব্য প্রদান ও সংবিধান অবমাননার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের ৬০টি সংগঠন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটা থেকে মৎস ভবন থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, ঢাকা ক্লাব, শাহবাগ মোড় ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাট পর্যন্ত এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সম্প্রতি রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে সে কাজ অবিলম্বে বন্ধের দাবি তুলেছেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। আর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হবে’। তাদের ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে অবিলম্বে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেফতার এবং জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয় মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, তাদের বক্তব্য (ভাস্কর্যবিরোধী) প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে বাংলার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ জবাব দেবে। পরিনাম ভালো হবে না। মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেওয়ার পরেও এখনও তাদের নিয়ে কিছু বলা হয়নি। এটাই আপনাদের সৌভাগ্য। দৃষ্টান্তমূলক পরিণামের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, এবার যখন আমরা ধরব, ফাইনাল হয়ে যাবে। এবার আর কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) নয়। বাংলাদেশে একটা কুচক্রী মহল সৃষ্টি করে ফায়দা লোটা, এটা বারবার হবে না। তিনি বলেন, কোথা থেকে টাকা আসছে, কী তাদের (মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি) অ্যাজেন্ডা—এসব ব্যাপারে প্রশাসনিক তদন্ত হওয়া উচিত। প্রশাসনের তদন্তের মাধ্যমে আসল ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং এই দেশের মাটিতেই তাদের শাস্তি দিতে হবে। তাদের একেবারে নির্মূল করে দিতে হবে। তারা যেন বারবার আমাদের স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, এবার যখন আমরা ধরব, ফাইনাল হয়ে যাবে। এবার আর কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) নয়। বাংলাদেশে একটা কুচক্রী মহল সৃষ্টি করে ফায়দা লোটা—এটা বারবার হবে না। এবারই আমরা এটা ফাইনাল করব। প্রশাসনকে আহ্বান করছি, তদন্তের মাধ্যমে এদের (মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি) চিহ্নিত করুন। আমরা মাঠে আছি দেখে নেব তাদের। চোরের দশ দিন, গেরস্তের এক দিন। আমরা এবার তাদের দেখে নেব। যুবলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সজাগ ও সোচ্চার থাকবেন। আমরা এদের দমন করব, ইনশা আল্লাহ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আমরা মনে করি, ভাস্কর্যের সঙ্গে ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। কাজেই যারা বাংলাদেশে ভাস্কর্যের সাথে ধর্মের সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি করছে, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করার সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, সম্প্রতি যে ঘটনাটি ঘটছে বাংলাদেশে… সবচাইতে এলার্মিং ঘটনা… সেটি হচ্ছে, জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলে নদীতে ছুঁড়ে ফেলার মতো ধৃষ্টতা তারা দেখিয়েছে। তারা কোনো অবস্থাতেই ভাস্কর্য করতে দেবে না বলেছে। কারা বলছে? তারা কারা? তারা হচ্ছে একাত্তরের পরাজিত সৈনিক, একাত্তরের পরাজিত শত্রু, তাদেরই উত্তরসূরি, একেবারেই তাদের প্রতীকী রূপ। মামুনুল হক থেকে শুরু করে চরমোনাই পীরের যে ছেলে এখন রিট করছে, প্রতিটা লোক, বাবুনগরী, প্রতিটা লোকের সূত্র হচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরোধিতা করা। সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এখন প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ। একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসরদের যথোপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান খুব পরিষ্কার। একাত্তরে তাদের অনেককেই পরাজিত করলেও যথাযোগ্য শাস্তি দেইনি। তাদের যে শাস্তি দেওয়া উচিৎ ছিল, সেটা দেওয়া হয়নি …সেটার নানা কারণ আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডই মূল কারণ, যেটার মধ্য থেকে তাদের উত্থান। আজকে যারা নতুন করে বাংলাদেশের অস্তিতে হুমকি দিচ্ছে, যারা আজকে মসজিদের ভেতরে মানুষ পুড়িয়ে মারছে, তাদের যথাযোগ্য শাস্তি নিশ্চিতে সরকারকে বাধ্য করব। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব, তারা এত বছর ধরে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এসেছে। এটা স্পষ্টভাবেই বলতে চাই, তারা বাংলাদেশকে একটা তালেবানি রাষ্ট্র করতে চায়। যে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে, সেই বাংলাদেশ কখনও পাকিস্তানি, আফগানিস্তানি বা তালেবানি রাষ্ট্র হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর এই ধরণের বক্তব্যের বিরুদ্ধে একত্রিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার নামে সাম্প্রদায়িক মহল দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির যে চেষ্টাটি করছে, এটি শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বাংলাদেশ কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আজকে যে অন্ধ মৌলবাদী শক্তি ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছে, তাদের পুলিশি ব্যবস্থায় শাস্তি দিলেই হবে না। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সচেতন করে তুলতে হবে যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো অক্ষয় থাকে। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম বলেন, আজ আমরা মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপগোষ্ঠীগুলোর যে ধৃষ্টতা দেখছি, তা একদিনে তৈরি হয়নি। একাত্তরের পরাজিত এই অপশক্তিগুলোর প্রতি বারবার নতজানু নীতি প্রদর্শন করেছে বর্তমান সরকার। মৌলবাদের জুজুর ভয়ে রাষ্ট্রের প্রশ্রয়-আপসের অবসান ঘটাতে হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: