তারুণ্যের ভাবনায় বিজয় দিবস

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৫:১১ পিএম
কামরুল হাসান অভি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে: মহান বিজয় দিবস, এ জাতির জীবনে একটি গৌরবদীপ্ত অধ্যায়ের নাম। বীরদর্পে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন ভূখন্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশের দিন। পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার দিন। লাখো অকুতোভয় বীরদের রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতার এই দিনটি এলেই পায়ের নিচে আমরা অনুভব করি শক্ত মাটির স্পর্শ। লাভ করি এক অনির্বচনীয় আত্মবিশ্বাস। এক অনিন্দ্য সুন্দর আত্মশ্লাঘা। এবারে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫০ তম বিজয় দিবস। অভ্যুদয়ের পর পাঁচ দশক পেরিয়েছে বাংলাদেশ। দীর্ঘ এই পথের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সমিকরণের বেড়া জালে আটকে থাকা কয়েক জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণের ভাবনা তুলে ধরেছেন কামরুল হাসান অভি- আসিফ হাসান রাজু পড়েন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগে। সঠিক ইতিহাস জানা উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আমরা যারা নতুন প্রজন্ম তারা সচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। জন্মের পরই পেয়েছি এক স্বাধীন মাতৃভূমি। তবে এই স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি। এর পেছনে রয়েছে আত্মত্যাগ। রাতের অন্ধকারে পাক বাহিনীদের নিরীহ মানুষের ওপর চালানো নির্যাতন, চারপাশে ভয় আর আর্তনাদ, নিরীহ শিশু আর মা বোনের ওপর অত্যাচার। সেই অত্যাচার থেকে সবাইকে মুক্তি দিতেই দেশের আপামর জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে, তাদের সঙ্গে যোগ দেন নির্যাতিত নারীরাও। সময়ের সঙ্গে ইতিহাস চাপা পড়ছে নতুন প্রজন্ম এর অনেকেই আমাদের ইতিহাস ভাল করে জানেন না। তাদের সবার জানা উচিত, উচিত দেশকে ভালোবাসা। তবে স্বাধীনতার পাচঁ দশকেও দেশ থেকে দূর্নীতি, অন্যায়, ঘুম, খুন, হত্যা, ধর্ষনসহ নানা অনিয়মসহ প্রতিষ্ঠিত হয়নি গনমানুষের অধিকার। প্রত্যাশা করি আজকের তারুণ্য পারে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে এসবের হাত থেকে রক্ষা করে দেশের প্রকৃত স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনতে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান রাখতে শাসকগুষ্ঠিকে সোচ্চার হ্ওয়ার কথা জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কর্মের শিক্ষার্থী দিদারুল ইসলাম বলেন, বিজয় দিবস নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফসল এ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তবে ইতিহাস পড়ে, সিনেমা দেখে, দাদা-বাবার মুখ থেকে গল্প শুনে জেনেছি। তবে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়া সূর্যসৈনিকরা যারা এখনো বেঁচে আছে তারা তাদের যোগ্য সম্মানটুকু এখনো পায়নি সেভাবে। স্বাধীনতার ৫০ তম বছরে এসেও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয় থেকে প্রকাশিত, মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় চলে আসে রাজাকারের নাম, রাজাকারের নামের জায়গায় চলে আসে মুক্তিযোদ্ধাদের। আমার মত প্রজন্মের কাছে এটা খুব বেদনাদায়ক। খুব স্পষ্ট করে যদি বলি, ব্যবসায়িক কোন হিসাবের মত চলছে, মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকার বানানোর কাজ। স্বাধীনতার ৫০ তম বছরে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের একটাই চাওয়া পাওয়া আমরা এই কলঙ্ক থেকে মুক্তি চাই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ বিনির্মাণে ঐক্যে আহবান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রাচীনকাল থেকে বাংলা ভূখণ্ড অন্য দেশ বা জাতি কর্তৃক দখলে ছিল। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন, সুলতানী, মোঘল ও ব্রিটিশ আমলের পরবর্তী পাকিস্তানের অধীনস্থ হয় পূর্ব বাংলা। পরাধীনতার এই শৃঙ্খল থেকে মুক্তির আশায় এ জাতি লড়াই করেছেন দীর্ঘকালব্যাপী।সর্বশেষ পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ, অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গিয়ে লড়াই করে স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। লাখো শহীদের আত্মাহুতির সেই স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমাদের স্বাধীনতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি ছিল, সে লক্ষ্য কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণ, শোষণ ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কারণেই মূলত পূর্ব বাংলার জনগণ স্বাধীকার আন্দালনে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কেন এ বিষয়গুলো আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে ! কেন আজ উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে গণতন্ত্র হরণ করা হচ্ছে? কেন আজ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আর বিপক্ষ শক্তি বলে জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হচ্ছে? কেন আজ প্রগতিশীল আর ইসলামকে একে অপরের বিরুদ্ধে বিরোধে জড়াতে হচ্ছে? কেন আজ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সবাই ব্যবসায়িক কায়দায় স্বার্থ হাসিলে সদাসাব্যস্ত হয়ে পড়ছে? এসব বিষয়গুলো বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর অবশ্যই ভাবা দরকার। আজকের দিনে আমাদের একটাই প্রত্যাশা আমরা যেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ও জাতির জনকের স্বপ্নের সেই বাংলাদেশেকে বিনির্মাণে ঐক্যের বন্ধনে বাধঁতে পারি পুরো জাতিকে। একই সুরে গাইতে পারি “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি” তরুণদের নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার তাগিদ দিয়ে সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মুসফিকা তাসলিম বলেন, শুধু বিজয়ের মাস নয়, এদেশের প্রতিটি প্রত্যাশিত অপ্রত্যাশিত ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার কথা। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতুর মতো অর্জনে আমরা যেমন উল্লসিত হই অপরদিকে, নারী ধর্ষণের হার দেখে আমরা আতঙ্কিত হই। যে দুর্নীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এদেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন আজ সেদেশের মানুষের দুর্নীতির কারণে দেশের উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটে । তবুও আমরা আশাবাদী বাংলাদেশ একটি দুর্নীতিমুক্ত, ধর্ষণমুক্ত দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে। সোনার বাংলা বাস্তবায়নে নিজের দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে তরুণদের। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের মন-মানসিকতা উন্নত করতে হবে। দেশের কাজে নিয়োজিতদের সুস্পষ্ট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, প্রয়োজন আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা। তরুণদের রাজনৈতিক বিকাশের উপর গুরুত্ব দিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ সজল বলেন, প্রতিটি রাষ্ট্রের মত আমাদেরও আছে একটি সমৃদ্ধশালী বিজয়ের ইতিহাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমরাই প্রথম জাতি, যারা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত ভূখন্ড আমাদের এই বাংলাদেশ। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের পূর্বসূরিদের কষ্টার্জিত বিজয়ের ৪৯ বছরেও সর্বস্তরের মানুষের মুক্তি আজও মিলেনি। আজ পত্রিকার পৃষ্ঠা উল্টালেই দেখতে হয় নারীকে ধর্ষনের চিত্র, রাজনৈতিক কোন্দলে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দলীয় হত্যাযজ্ঞে হতাহতের খবর। জাতির পিতা চলে যাওয়ার পর প্রতিটি রাজনৈতিক দলই জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে বারংবার হয়েছে ব্যর্থ। তবে আমরা হতাশ নই। আজকের তরুণরা যদি সেই পিছিয়ে পড়া সমাজের জন্য লড়াই করে এবং নিজেদের রাজনৈতিক চেতনার সুষ্ঠু বিকাশ ঘটাতে পারে, তাহলেই আসবে আমাদের বিজয়ের সাফল্য। তখনই মানুষ উপভোগ করবে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: