সময় হলেই খুলবে রহস্যের জট

প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ০৪:২৬ পিএম
শামছুল হক রাসেল: সোমবার সন্ধ্যার পর। সবে প্রস্তুতি নিচ্ছি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে। এরই মধ্যে বেজে উঠল মুঠোফোনের রিংটোন। মুঠোফোনের ডিসপ্লেকে অনেকটা ওভারলুক করে ফোনটা ধরা হলো। অপর প্রান্ত থেকে বলল, “কেমন আছেন, রাসেল ভাই... বুবলী বলছি।” এটা শোনার পর কান থেকে মুঠোফোনটা সরিয়ে ভালো করে ডিসপ্লেতে তাকালাম, দেখলাম বুবলী নাম শো করছে। এবার জিজ্ঞাসা করলাম সত্যি বুবলী, নাকি বুবলীর ভূত? অপর প্রান্ত থেকে অট্টহাসির শব্দ শোনা গেল। বললেন, “এ কেমন কথা। যে দু-একজনের সঙ্গে এ সময় যোগাযোগ হতো তাদের মধ্যে আপনিও তো ছিলেন। তাহলে ভূত বলছেন কেন?” মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উল্টো বললাম, গত ১১ মাসে যে কয়বার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি তার মধ্যে ৬০ ভাগ সফল হয়েছি। বাকি ৪০ ভাগ হইনি। এ ছাড়া আপনি নিজে কখনো এর মধ্যে ফোন দেননি। যোগাযোগ করলে রিপ্লাই দিয়েছেন। এবার স্বেচ্ছায় ফোন দিয়েছেন তাই ভূত-ভূত মনে হলো। কথা না বাড়িয়ে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়লাম, ১১ মাস আড়ালে ছিলেন। এবার সত্যিটা বলুন, এটা কি স্ট্যান্টবাজি না কোনো রিকভারির জন্য? বুবলী বলেন, “প্রথমত, আমি যখন টানা কাজ করি তখন কাজের ক্ষেত্রে সবাই কিন্তু আমাকে পায়। এমন কিন্তু কখনো হয়নি যে, একটা কাজের জন্য কাউকে কথা দিয়েছি কিন্তু সেটা রাখিনি। যখন কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকি তখন অবশ্যই আমাকে পাওয়া যায়। কিন্তু যখন ব্যক্তিগত কোনো বিষয় চলে আসে তখন ওভাবে আড়ালে থাকা হয়। এবারও একই ঘটনা, কিছু পার্সোনাল রিজন ছিল...” এবারও মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উল্টো প্রশ্ন ছুড়লাম, ব্যক্তিগত কারণের কথা বলছেন। তাহলে সেটা বলা যাবে কি? বললেন, ‘গত বছরই প্ল্যান ছিল সময় পেলে কিছু প্রফেশনাল কোর্স করব। সে উদ্দেশে ফেব্রুয়ারির শেষে নিউইয়র্কে যাই। যদিও করোনা ও লকডাউনের কারণে কোর্সটা খুব অল্প সময়েই শেষ হয়েছে। আর ব্যক্তিগত? আসলে সবকিছুরই একটা সঠিক সময় দরকার। গত কয়েক বছর আমাকে নিয়ে খুব গুঞ্জন। আমার প্রেম, আমার বিয়ে- সব শেষে সন্তান হওয়া নিয়ে গুঞ্জন। এসবের পেছনে যখন কেউ কেউ একতরফাভাবে কথা বলে মনের মাধুর্য দিয়ে, তখন কিন্তু মানুষজন তাদের মতো করে বিচার করে। তবে আমি দর্শকদের তাদের আগ্রহের জায়গা থেকে ধন্যবাদ ও সম্মান জানাব। তারাও আমার থেকে অনেক কিছু শুনতে চান যেটা স্বাভাবিক। এমনকি এসব গুঞ্জন নিয়ে সাংবাদিকরা আমাকে আমার দিক থেকে বিষয়টি খোলাসা করতে বলেছেন। কিন্তু এই জায়গা থেকে বিষয়টা এত বেশি সেনসেটিভ যে, আমি হুট করে কিছু বলতে চাই না। আসলে সবকিছুর একটা প্রপার টাইম আছে। সময় হলে বিষয়গুলো জানাব, খুলে যাবে রহস্যের জট। আমরা যতই বলি ব্যক্তিগত বিষয়গুলো আমাদের মধ্যে রাখব, আসলে সেটা হয় না।” তাহলে কিন্তু নতুন রিউমার ছড়াবে যে, ‘যা রটে তার কিছু তো বটে’। তার মানে যেটা শোনা যাচ্ছে সেটা সত্য। অথবা মৌনতা সম্মতির লক্ষণ, এটাই কী ধরে নেব?’ দেখুন, সব বিষয় কেন জানাতেই হবে? ব্যক্তিগত সে বিষয়গুলো জানাব যা নিয়ে মানুষের আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু আমি ওটাও করতে চাই না, যা বা যাতে কাজের থেকে পারসোনাল বিষয়গুলো বেশি ফোকাসড হয়। অনেকেই আছেন যারা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে লাইমলাইটে থাকতে চায়। আমি ওটা চাইনি বলে শুরু থেকেই এড়িয়ে যাই। কিন্তু দিন শেষে মানুষের কিছু জায়গায় ভুল ধারণা ও বিভ্রান্তি এখনো রয়েছে। যার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি হয়তো আমার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ভবিষ্যতে শেয়ার করব। না হলে ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ব্যক্তিগতই রাখতাম। কিন্তু আমরা যেহেতু মিডিয়ায় কাজ করি মানুষের আগ্রহের একটা জায়গা থাকে। সেটাকে সম্মান জানিয়ে আমি দর্শকদের বলব, তারা যেন বিষয়টা আমার মুখ থেকে জেনে বিশ্বাস করে, তার আগে অন্যের কথায় কান না দেয়।” সম্প্রতি দেশে ফিরে ফটোশুট করেছেন এই লাস্যময়ী। সেই ছবিতে এক বছর আগের ও বর্তমান বুবলীকে দেখে মনে হচ্ছে, ওজন বেশ কমিয়েছেন। জানতে চাইলাম এটা কি অর্গানিক না কোনো কোর্স? এবার বুবলী বলে উঠলেন, ‘এটা আবার কেমন প্রশ্ন? সবাই তো চায় স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য সচেতন থাকতে। আর আমরা যারা মিডিয়াতে আছি তাদের তো আরও বেশি যত্নবান হতে হয়। না হয় আপনারাই তো আবার নেগেটিভ নিউজ করা শুরু করবেন। হ্যাঁ, অবশ্যই অর্গানিক। এমন তো নয় যে, আমি ১২০ থেকে ১২৫ কেজি ছিলাম ওখান থেকে এমন কমিয়েছি। ওয়েট কমানো বিষয়টা হচ্ছে একটা টোটাল প্যাকেজ। শুনুন, আমি কিন্তু কখনো তেমন মোটা ছিলাম না। ফার্স্ট ছবি থেকে আমার লুক দেখেন। অনেকে আছেন ধীরে ধীরে মোটা হয়ে যান। ভাগ্যবতী, আমি তেমনটা কখনই ছিলাম না। কিন্তু আমার যে ট্রান্সফরমেশনটা তা অবশ্যই চোখে পড়ার মতো। গত বছর যেমন ছিলাম সেখান থেকে আজকের বুবলীতে আসতে আমাকে প্রায় ২০ কেজি ওজন কমাতে হয়েছে। এর পেছনে একটা বিষয় কাজ করেছে, সেটা হচ্ছে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করা। এর জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।” প্রায় এক বছর আড়ালেই ছিলেন বুবলী। অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। মাঝে মাঝে বুবলীও রিপ্লাই দিয়েছেন। এরপরও কেমন যেন একটা দূরত্ব ছিল মিডিয়ার সঙ্গে। তবে কাজের ব্যাপারে অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। এমনটাই জানালেন বুবলী। বললেন, “আসলে, ওইভাবে কারও সঙ্গে কথা হয়নি। তবে কাজের ব্যাপারে মাঝখানে নির্মাতা সৈকত নাসিরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তার বেশ কয়েকটা প্রজেক্ট নিয়ে কথা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ক্যাশ’। বাকিগুলো নিয়ে প্রাইমারি কথাবার্তা হয়েছে। তবে ‘ক্যাশ’ এর ব্যাপারে তাদের সঙ্গে হয়তো ব্যাটে-বলে মেলেনি বা আমার দিক থেকে মিলছে না। তবে সামনে ইনশাল্লাহ নতুন প্রজেক্ট হবে।” এ ছাড়া আড়াল ভেঙে সবার সঙ্গে যোগাযোগ প্রসঙ্গে বুবলী বলেন, ‘এমন না যে, আমি আড়ালে থেকে কথা বলছি। যদি শুটিং থাকত আমাকে এফডিসিতেই পেতেন। যেহেতু শুটিং নেই, এখনো কাজ শুরু করিনি তাই ফোনে কথা হচ্ছে।” সবার একটাই অভিযোগ, একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে না জানিয়ে আড়ালে যাওয়ার বিষয়ে বুবলীর কী কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না? হঠাৎ উধাও হয়েছিলেন। প্রয়োজনে জানিয়ে যেতে পারতেন যে, তিনি কয়েক মাস মিডিয়ায় আসবেন না, কাজও করবেন না। এই সময়ে কারও সঙ্গে যোগাযোগও করবেন না। কিন্তু বুবলী তা জানান দিয়ে যাননি। একজন পাবলিক ফিগার হয়ে কেন দায়বদ্ধতা নিলেন না? এমনটা জানতে চাইলে বুবলী বলেন, “সুন্দর প্রশ্ন। আমি এ বিষয়টা পরিষ্কার করি। শুরু থেকেই সাংবাদিক ভাইয়েরা আমার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যারা ভালোবাসেন, আবার যারা একটু কম পছন্দ করেন তারাও। এমনকি ক্রাইম রিপোর্টাররাও খোঁজ নিয়েছেন। এ ছাড়া বিশেষভাবে বলতে চাই, মিশা সওদাগর ভাই শুরু থেকেই খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এরপর মুশফিকুর রহমান গুলজার ভাইও। আর দায়বদ্ধতার বিষয়টি হচ্ছে, মানুষের জীবনে অনেক সময় অনেক কিছুই হয়। যেটা আমরা পরিকল্পনা করে করি না। আমরাও মানুষ, অনেক সময় অনেক কিছু মন-মানসিকতার ওপরও নির্ভর করে। যা বলতেও পারি না যে, নিজের মতো থাকছি না কাজ করছি। বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। তো ওই জায়গা থেকে বলা হয়ে ওঠেনি। ইনশাল্লাহ এমনটা আর ভবিষ্যতে হবে না।” কথা প্রসঙ্গে ক্রাইম রিপোর্টারের কথা তুললেন, তাই জানতে চাইলাম বুবলীর কোনো আতঙ্কের বিষয় বা কোনো বিভ্রান্তি ছিল কি না? “না, না। আমি যখন কাজ করেছি তখন সবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এমনও হয়েছে একসঙ্গে দুই-তিনটা কাজের চাপের মধ্যেও যোগাযোগ রেখেছি। এর মধ্যেও অনেক ক্রাইম রিপোর্টারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। হয়তো তারাও কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন আমার আড়াল হওয়া নিয়ে। তাদের জানিয়েছি, আমি নিরাপদে আছি। আর ব্যক্তিগত বিষয়টা পরে বলব।” যেহেতু আপনি সব কিছু পরেই বলবেন বলছেন। তাহলে সেটা কি প্রেম-ভালোবাসা বা বিয়ে এগুলো নিয়েই বলবেন? আর কবে বলবেন? এবার না হয় বলেই ফেলুন। “বললেন, এ কথা আগেও বলেছি। গুঞ্জন থাকবেই। গুঞ্জন যদি না-ই থাকে তাহলে কিসের নায়িকা হলাম। কৌতূহল বা আগ্রহ থাকুক না সবার। আল্লাহ সুস্থ রাখলে সামনে আরও অনেক কাজ করব। একটু গুজব, গুঞ্জন ও কৌতূহল থাকলে হয় কি মানুষের আগ্রহের জায়গাটা থাকে।” কাজের ক্ষেত্রে হিংসা বা জেলাসি না থাকলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আরও অনেক বেশি এগিয়ে যেত এবং ভালো ভালো কাজ হতো মনে করেন বুবলী। আর হিংসা প্রসঙ্গ যেহেতু চলেই এলো তাই জানতে চাইলাম। কারা আপনাকে হিংসা করে বা থামাতে চায়? পরিষ্কার করে বলবেন কি? কিছুক্ষণ চুপ থেকে এবার বুবলী বললেন, “ব্যাপারটা হচ্ছে যে কোনো প্ল্যাটফরমে কাজ করতে গেলে- কিছু মানুষ থাকে যারা পেছনে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে। তাদের মধ্যে আবার এমনও আছে যাদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত জানাশোনা নেই, দেখাও হয়নি। তারা অন্য কাউকে খুশি করার জন্য কোথাও কিছু বলে দিল, যা একেবারে খামোখা। এ জিনিসগুলো আমার কাছে খারাপ লাগে। গল্পের পেছনেও অনেক গল্প থাকে, তাদের বুঝেশুনে এগুলো করা উচিত। কাজের ক্ষেত্রে হিংসা বা জেলাসি না থাকলে ইন্ডাস্ট্রি আরও অনেক বেশি এগিয়ে যেত এবং ভালো ভালো কাজ হতো।” গল্প ও আড্ডার ছলে অনেক কিছু বলা হলো, শোনা হলো। এরপরও কেন জানি মনে হলো কিছুই জানতে পারলাম না। দর্শক ও পাঠকের যে কৌতূহল বুবলীকে নিয়ে তার সমাধানসূত্র পেলাম না। সরাসরি বললাম, আপনি এত ডিপ্লোমেটিক অ্যান্সার দেন কেন? পাঠকদের জন্য কিছুই তো পেলাম না। নতুন কোনো খবর দেন। বুবলী বললেন, “বলেন কী? এতক্ষণ কার সঙ্গে কথা বললাম। সবই তো বললাম। বাকি গল্প না হয় আরেক দিন হবে। মুঠোফোনটি রাখার আগে বললাম, একটা শেষ প্রশ্ন- আড়ালের এই সময়টাতে শাকিব খানের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না? বুবলী বললেন, শাকিব খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছে। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে...” সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: