বাবরি মসজিদের স্থানে হচ্ছে রাম মন্দির, চাঁদা দিলেন অক্ষয়

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০২:৩২ পিএম
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের অযোধ্যা শহরে সপ্তদশ শতকে তৈরি এক ঐতিহাসিক স্থাপনা, বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলেছিল উন্মত্ত হিন্দু জনতা। এ ঘটনার পর ভারতে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে তাতে নিহত হয় প্রায় দুহাজার মানুষ। রায়ে যা বলা হয়: এই ট্রাস্ট তৈরির জন্য কেন্দ্রকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির জন্য ৩ মাসের মধ্যে ট্রাস্ট তৈরি করতে হবে। মসজিদ বানানোর জন্য মুসলিম পক্ষকে ৫ একর বিকল্প জমি দিতে হবে। শর্ত সাপেক্ষে এই জমি হিন্দুদের হাতে দেওয়া হোক। মুসলিমদের জন্য বিকল্প জমির ব্যবস্থা হবে। জমির মালিকানার পক্ষে প্রমাণ দেখাতে পারেনি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। যে কাঠামো ভেঙে বাবরি মসজিদ তৈরি হয়েছিল তা মসজিদ নয়। তবে তা যে মন্দির ছিল তাও নির্দিষ্ট ভাবে বলা যায় না। বাবরি মসজিদ খালি জায়গায় ওপর তৈরি হয়নি ধর্মবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে আদালত রায় দিতে পারে না। রাম যে অযোধ্যায় জন্মেছিলেন হিন্দুদের এই বিশ্বাসের ওপর প্রশ্ন তোলা যায় না। জমির দখল নিয়ে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড যে দাবি করছে, তার যথাযথ প্রমাণ দিতে পারেনি। ১৯৯২ সালে মসজিদ যে ভাঙা হয়েছে, তা আইনবিরুদ্ধ। অযোধ্যায় রামের জন্ম নিয়ে হিন্দুদের বিশ্বাস অনস্বীকার্য। ১৮৫৬-৫৭ সালের মধ্যে য নথি মিলেছে, হিন্দুদের পুজো করাতে কোনও বাধাদান দেওয়া হয়নি। এর আগে রায় ঘোষণার আগে শান্ত থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিষয়টি নিয়ে গতকাল তিনি একাধিক টুইট করেন। এসব টুইটে তিনি বলেন, ‘এ রায় কারও জন্য জয়-পরাজয়ের বিষয় নয়। রায় যেন শান্তি ও সংহতির বিষয়ে ভারতের মহান ঐতিহ্যকে আরও জোরদার করতে পারে এবং আমাদের সেই চাওয়াই যেন সবার কাছে অগ্রাধিকার পায়। দেশবাসীর প্রতি এই আমার আহ্বান।’ ১৯৯২ সালে কট্টরপন্থী মৌলবাদী হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার পর হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় কমবেশি ২০০০ লোক নিহত হয়েছিল। এ কারণে রায় ঘোষণার মাসখানেক আগে থেকেই অযোধ্যা শহরে ১৪৪ জারি রয়েছে। এমনিতেই বিতর্কিত জমিটির কাছাকাছি যাওয়া যায় না সহজে। চারদিকে লোহার বেড়া আছে। ২৪ ঘণ্টা সেটিকে ঘিরে রাখে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকশো সদস্য। আর এখন হাজার হাজার বাড়তি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে অযোধ্যায়। ২০১৯ সালের নভম্বরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের বেঞ্চ এক সর্বসম্মত রায়ে বলেছে, অযোধ্যার যে ২.৭৭ একর জমি নিয়ে বিতর্ক ছিল বহুকাল ধরে সেখানে রামমন্দিরই হবে। আর মুসলমানদের মসজিদের জন্য ৫ একর জমি দেওয়ার নির্দেশও দেয়া হয়। সে রায় অনুযায়ী বাবরি মসজিদের স্থানে শুরু হয়েছে রাম মন্দির নির্মাণের কার্যক্রম। চলছে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য চাঁদা সংগ্রহ। প্রথম দিনই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ রাম মন্দির ট্রাস্টের হাতে তুলে দিয়েছেন পাঁচ লক্ষ টাকা। এবার মন্দিরের জন্য চাঁদা দিলেন বলিউডের ‘খিলাড়ি’ অক্ষয় কুমারও। সোশাল মিডিয়ায় সেকথা জানিয়ে সকলের কাছে আরজি জানালেন নিজেদের সাধ্যমতো অনুদান দেওয়ার। তবে কত টাকা দিয়েছেন তিনি সেটি জানাননি। সম্প্রতি নিজের টুইটার হ্যান্ডলে একটি ভিডিও পোস্ট করলেন ৫৩ বছর বয়সী এ অভিনেতা। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘খুবই আনন্দের কথা অযোধ্যায় শ্রীরামের মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। এবার আমাদের যোগ দেওয়ার পালা। আমি শুরু করেছি। আশা করি, আপনারাও যোগ দেবেন। জয় সিয়ারাম।’ ভিডিওতে নিজের ছেলেকে রামসেতু নির্মাণের গল্প শোনাতে দেখা যায় অক্ষয়কে। শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের তরফে সংগঠনের অন্যতম সদস্য ড. অনিলকুমার মিশ্র জানিয়ে দিয়েছেন, ১০, ১০০ ও ১০০০ টাকায় চাঁদা দেওয়া যাবে। তবে কেউ চাইলে তারও বেশি দিতে পারেন। ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদে নেওয়া হলেও তার বেশি টাকার ক্ষেত্রে চেক দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। চাঁদা তোলার এই অভিযান চলবে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পাশাপাশি তারকারাও যে চাঁদা দিতে উৎসাহী সেকথা জানিয়েছেন অনিল। তবে এই ট্রাস্টে সরকারি কোনো তহবিল থেকে অর্থসাহায্য গ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। পাশাপাশি বিদেশ থেকে কিংবা কর্পোরেট সংস্থার তরফে চাঁদা দিতে চাইলেও তা নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যেই চাঁদা সংগ্রহে বিপুল সাড়া মিলেছে। প্রথম দিনই গুজরাটের হিরে ব্যবসায়ী গোবিন্দভাই ঢোলাকিয়া দিয়েছেন ১১ কোটি টাকা। আরেক হিরে ব্যবসায়ী মহেশ কবুতরওয়ালার অনুদান ৫ কোটি টাকা। ১ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন আরও এক ব্যবসায়ী।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: