করোনা ইউনিটে নাইট ডিউটির সময় পিজি হাসপাতালের নার্সকে ধর্ষণ, সুইসাইড নোটে দায়মুক্তি!

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২১, ০১:৪৯ এএম
সোহেল রানা শুভ: সুইসাইড নোটে প্রেমিককে দায়মুক্তি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) নার্স লাইজু আক্তার (২৭)। এদিকে লাইজুর আত্মহত্যার পেছনে তানভীরের প্ররোচনা দায়ী বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনরা। তাদের ভাষ্য, লাইজু পরকীয়ার বলি। তার মোবাইল ফোন থেকে মায়ের কাছে পাঠানো এসএমএসে প্রত্যক্ষ প্ররােচনায় প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রমাণ মেলে তানভীরকে পাঠানাে এসএমএসেও। গত শনিবার রাতে বিএসএমএমইউর নাসিং হােস্টেলের ষষ্ঠ তলার বাথরুমে গলায় ওড়না প্যাচানাে অবস্থায় লাইজুর লাশ উদ্ধার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় লাইজুর স্বামী সুজন পারভেজ বাদী হয়ে তানভীরকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। ঘটনার পর থেকেই তানভীর পলাতক। লাইজুর স্বামী সুজন পারভেজ বলেন, আত্মহত্যা ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কথিত প্রেমিক তানভীরকে (৩২) গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের দাবি, তাকে গ্রেফতারে সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান চলছে। শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা হবে। স্বজন ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, লাইজু ও তানভীরের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে লাইজুর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তানভীরের মা ও স্ত্রী লতা মৃত্যর আগে লাইজু নিজের মোবাইল ফোন থেকে তানভীরকে পাঠানাে এক এসএমএসে লেখেন, হেরে গেছি তােমায় মিথ্যে প্রতিশ্রুতির কাছে। এ ছাড়া নিজ হাতে লেখা সুইসাইড নােটেও তানভীরকে দায়মুক্তি দিয়ে যান ভুক্তভােগী লাইজু। আত্মহত্যার আগে তানভীরকে লেখেন, ‘তুমি আমাকে যে কষ্ট দিছাে তার পর আর বেঁচে থাকার সাধ থাকে না। হেরে গেছি আমি, তােমায় মিথ্যা প্রতিশ্রুতির কাছে। তােমায় মিথ্যা ভালােবাসার কাছে হেরে গেছি। সব শেষ করে দিলাম, ভালাে থাকো। ভালাে থাকো তুমি, তােমার ফ্যামিলি। আমাকে আর কারও কাছে খারাপ করো না।’ মাকে এসএমএসে লেখেন, ‘মা, আমার কপাল খুব খারাপ। আর কেউ না জানুক তুমি তাে জানাে, আমার বাবা নেই বলে আজ এই করুণ পরিণতি। এত যুদ্ধ করে চলা যায় না।’ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর আগে এক আবেগঘন সুইসাইড নােট লিখে গেছেন লাইজু। সেখানে তিনি তানভীরে স্ত্রী লতা আর স্বামী সুজন তার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে বলে অভিযোগ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলে, তিন থেকে চার মাস আগে শাহবাগ থানায় তানভীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা কলতে এসেছিলেন লাইজু। সে সময় তার স্বামীকে থানায় বাইরে রেখে ধর্ষণের বিষয়টি পুলিশকে জানান তিনি। ওই সময় লাইজু জানান, করােনা ইউনিটে নাইট ডিউটি সময় তানভীর তাকে ধর্ষণ করেছে। এরপর আবার বাইরে গিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশকে জানায় মামলা করবেন না এবং পারিবারিকভাবে তা মীমাংসা করবেন বলে বাইরে বেরিয়ে যান। লাইজুর স্বামী সুজন পারভেজ বলেন, ‘লাইজুকে সব সময় উত্ত্যক্ত করত তানভীর। লাইজু আমাকে বলত তানভীর তাকে ব্লাকমেল করছে। একপর্যায়ে লাইজু তানভীমের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। আমি অনেক অনুরােধ করলেও সে তানভীরের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়েছ গেছে। একপর্যায়ে তানভীরের স্ত্রী লতা আমাকে ফোন করে বিষয়টি বলে। থানায় অভিযােগ বলতে যাওয়ার বিষয়ে সুজন বলেন, ‘লাইজু আমাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় অভিযােগ করতে গিয়েছিলো। অমাকে বাইরে রেখে ও থানায় ভেতরে গিয়ে কথা বলে। পরে বাহিরে এসে বলে মামলা করবো না, পারিবারিকভাবে সমাধান করবো। ডিএমপির রমনা বিভাগের সিনিয়র সহকামী কমিশনার (এসি) এসএম শামীম বলেন, ঘটনার পর থেকে তানভীর পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান চালানাে হচ্ছে। শিগগিরেই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পরকীয়ার কারণে আত্মহত্যা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। তবু প্রকৃত ঘটনা জানতে পুলিশ কাজ করছে। আশা করি, খুব দ্রুত রহস্য জট খুলবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: