মামলার এজাহার পরিবর্তন, ওসির বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৫:৩৪ এএম
আলোচিত রাজশাহীর পুঠিয়ার পরিবহন শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহার পরিবর্তনের অভিযোগে পুঠিয়া থানার বহুল আলোচিত সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকিল উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রবিবার (২৪ জানুয়ারি) দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে এ মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন মামলাটি করেন। মামলার বাদী বলেন, দুদকের তদন্তে পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নূরুল ইসলাম হত্যার এজাহার থেকে আসামির নাম ও বিবরণ পরিবর্তেনের প্রমাণ মিলেছে। এর পর ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হয়। ওসি সাকিল কারসাজি করে এজাহারে আটজনের বিরুদ্ধে ছয়জনকে আসামী এবং বর্ণনার পরিবর্তন আনেন। দুদকের করা মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, নূরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি পুঠিয়া থানার সড়ক ও পরিবহন মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে তিনি আবারও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সর্বোচ্চ ভোট পান। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ফল পরিবর্তন করে আব্দুর রহমান পটল নামে এক ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করে। এ নিয়ে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করে নূরুল ইসলামসহ তিনজন বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপর থেকে আব্দুর রহমান পটল এবং তার সহযোগীরা নুরুল ইসলামকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। ২০১৯ সালের ১০ জুন থেকে নুরুল ইসলামের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সকালে পুঠিয়ার একটি ইটভাটায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। এ নিয়ে সেদিনই তার মেয়ে নিগার সুলতানা আটজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানার তৎকালীন ওসিকে একটি এজাহার দেন। সেই এজাহারে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে পুঠিয়ার ওসির অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এ কারণে ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ এজাহারটি রেকর্ড না করে নিগার সুলতানাকে তা সংশোধন করতে বলেন। নিগার সুলতানা ওসির বিষয়টি বাদ দিয়ে পুণরায় থানায় এজাহার দাখিল করেন। তখন এজাহারটি গ্রহণ করেন এবং কিছু সাদা কাগজে নিগার সুলতানার স্বাক্ষর নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। পরবর্তীতে নিগার সুলতানা পুঠিয়া থানা থেকে এজাহার ও মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর কপি সংগ্রহ করে দেখেন যে, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামিদের নাম-ঠিকানা লেখার কলামে ‘অজ্ঞাতনামা’ লেখা আছে। আবার তার উল্লেখ করা আটজন আসামির পরিবর্তে সেখানে ছয়জনের নাম রয়েছে। অথচ তিনি পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানাসহ আটজনকে আসামি করেছিলেন। ওসি সাকিল এসব পরিবর্তন করেছেন। নিগার সুলতানা এই বিতর্কিত এজাহারের বিরোধীতা করে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশনা দেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান তালুকদার বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ওসির কারসাজির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিদেবন দিয়েছেন। ওসির বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওসি সাকিলের এজাহার পরিবর্তনের বিষয়টি পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের প্রবিধান ২৪৩ ও ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি দণ্ডবিধির ১৬৬/১৬৭/২১৭/২১৮ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হলো। তদন্তকালে এসব অপরাধের সঙ্গে আর কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: