‘আমার সাবেক প্রেমিকের চেয়েও মিয়ানমার সেনাবাহিনী খারাপ’

প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৫২ পিএম
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্র রূপ নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার দমনপীড়ন যত বাড়াচ্ছে, আন্দোলন তত তীব্র হচ্ছে। আন্দোলনে শিক্ষার্থী, নার্স, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উপস্থিতি নতুনমাত্রা যোগ করেছে। সেনা অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান করে সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ চলছিল। তবে এখানে কিছু তরুণ আন্দোলনকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ড ছিল গতানুগতিক ধারার বাইরের, যা ভিন্ন বার্তা দেয়। খবর বিবিসি। এই ভিন্ন বার্তার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা একটি মুক্ত দেশে বেড়ে উঠেছে এবং ইন্টারনেটের কল্যাণে পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। যার ফলে তাদের চিন্তা-ভাবনা ঐতিহ্যবাহী ধারণা থেকে ভিন্নতর হতে শুরু করেছে। এর আগেও গত সপ্তাহে মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের উদ্দেশ্যে তাদের গণতন্ত্রপন্থী বার্তাগুলোতে কিছু হাস্য-রসিকতাও লক্ষ্য করা গেছে। এক তরুণী বিক্ষোভকারীর হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমার সাবেক প্রেমিক খারাপ তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আরও খারাপ।’ অন্যদিকে আরেক তরুণীর হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে দেখা গেছে- ‘আমি স্বৈরশাসন চাই না, আমি কেবল প্রেমিক চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড। অন্য বিক্ষোভকারীরা অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে আরও স্পষ্টভাবে বার্তা দিয়েছেন। সেরকম একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘সেনাবাহিনী ভুল লোকদের সঙ্গে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ আরেক বিক্ষোভকারীর হাতে থাকা পোস্টারে লেখা দেখা গেছে, ‘আমাদের স্বপ্ন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং-এর উচ্চতার থেকেও বড়।’ এদিকে অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বাধা দিলে, দু'পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এসময়, আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। ইয়াঙ্গুনেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি। সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে, সোমবার তৃতীয় দিনের মতো রাস্তায় নামেন শত শত মানুষ। ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে অভ্যুত্থানবিরোধী স্লোগান দেন তারা। এসময়, দেশটির নেত্রী অং সান সু চি'র মুক্তির দাবি জানান তারা। এর মধ্যেই, সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায়, অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন সেনা প্রধান মিন অং লাইং। এসময়, বর্তমান সেনা সরকারকে জনগণের সরকার উল্লেখ করে, যেকোন পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন তিনি। একইসঙ্গে, দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান সেনা প্রধান। সামরিক বাহিনী প্রধান মিন অং লাইং বলেন, 'মিয়ানমার সেনাবাহিনী সবসময়ই জনগনের পাশে আছে, থাকবে। এই দেশের জনগণ আমাদের বাবা, জনগণই আমাদের মা। সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতে এই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।' মিয়ানমারে সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগে গেল পহেলা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ এএলডির শীর্ষ নেতাদের আটক করে ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। সেইসঙ্গে, আগামী এক বছরের জন্য জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: