ধুলোয় ধূসর সদরঘাট-বারিক বিল্ডিং সড়ক, নীরব চসিক

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২১, ০৪:২৯ পিএম
রবিউল হোসেন রবি, চট্টগ্রাম থেকে: চট্টগ্রামের বারিক বিল্ডিং মোড় হতে সদরঘাট পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কজুড়ে কেবলই ধুলোর রাজত্ব। বর্তমানে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে বেড়েছে ধুলোর পরিমাণও। প্রতিমুহূর্তে ওই এলাকার কর্মব্যস্ত মানুষজন চলাচল করছেন এই ধুলোর সঙ্গে যুদ্ধ করেই। যার ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন স্থানীয়সহ পথচারীরা। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কোনো সময় ধুলোবালির প্রকোপ থেকে বাঁচাতে ছেটাচ্ছে না পানিও— রয়েছে এমন অভিযোগও। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সদরঘাট হতে মাঝিরঘাট, বাংলাবাজার, স্ট্যান্ড রোড হয়ে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত সড়কজুড়ে পুরোটাই ধুলোর রাজত্ব। সকাল থেকেই এ সড়কে চলাচলকারী কর্মব্যস্ত মানুষ মাস্ক মুখে দিয়ে বা নাকে রুমাল-কাপড় চেপে বের হচ্ছেন। এতে মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অস্বস্তি ও চাপা ক্ষোভ। দেখা যায়, ধুলোর আস্তরণ পড়ে আশেপাশের সবুজ গাছপালা বিবর্ণ হয়ে গেছে। যার ফলে হুমকির মুখে সেখানকার পরিবেশ। ধুলোর কারণে আশেপাশের বাসা-বাড়ির বাসিন্দারা পড়েছেন মহাবিপাকে। দরজা-জানালা বন্ধ করেও মিলছেনা ধুলো থেকে রেহাই। একইসঙ্গে রাস্তার পাশের দোকানিরাও পোহাচ্ছেন সীমাহীন দুর্ভোগ। এছাড়াও সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। যার ফলে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে সড়কটি। জানা যায়, সদরঘাট হতে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত সড়কটির উন্নয়ন কাজ দুই বছরের বেশি সময় ধরেও শেষ হচ্ছেনা। এ সড়কে তিনটি কালভার্ট নির্মাণ হলেও শেষ হয়নি কার্পেটিংয়ের কাজও। স্থানীয়রা জানান, নৌযান থেকে আমদানিকৃত নানান পণ্য খালাসের অসংখ্য জেটিসহ বেশ কয়েকটি লবণ মিল, কয়েকশত গোডাউন রয়েছে এ সড়কের দুপাশে। যে কারণে প্রতিদিন দিনেরাতে শত শত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি আসা যাওয়া করে সড়কটি দিয়ে। তবে সড়কে ধুলার দাপট কমাতে ২ কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে তিনটি সুইপিং গাড়ি কিনেছে চসিক। সম্প্রতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাস্তার ধুলাবালি পরিষ্কারে চসিককে আরও তিনটি সুইপিং গাড়ি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গাড়িগুলো উন্নত বিশ্বের মসৃণ সড়কে জমে থাকা হালকা ধুলা পরিষ্কার করার উপযোগী। চসিক সূত্রে জানা গেছে, ইতালি থেকে আনা চসিকের এক একটি সুইপিং গাড়ি ২০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চেয়েও বেশি কাজ করতে পারবে। গাড়ি দিয়ে পরিষ্কার করা যাবে প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক। এর সঙ্গে যুক্ত আছে আলাদা পানির ট্যাংকও। প্রয়োজনে পানি ছিটিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করা যাবে। তবে কেবল কাগজে-কলমে থাকলেও সুইপিং গাড়িগুলো ব্যবহার হয়না বললেই চলে। ক্ষোভ প্রকাশ করে মাঝিরঘাট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরীফ বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে অফিসে যাতায়াত করি৷ কি যে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা বলার ভাষা নেই। একদিন একটা শার্ট পড়ে বের হলে পরদিন ওই শার্ট গায়ে জড়ানো যায় না।’ তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় প্রতিদিন শত শত ট্রাক আসা-যাওয়া করে। যার ফলে রাস্তার এই অবস্থা। অথচ এটি নিয়ে সিটি করপোরেশন, সিডিএ বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন মাথা ব্যথাই যেন নেই। পানি ছিটানোর কথা থাকলেও সিটি করপোরেশন এমন কোন উদ্যোগ নেয়নি। মা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক মো. মোরশেদ বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকা খ্যাত এই মাঝিরঘাট-সদরঘাট এলাকায় ধুলোবালির কারণে সবাই অতিষ্ঠ। এর প্রতিকার কি? রাস্তা-ঘাটের মা-বাপ নাকি সিটি করপোরেশন? কই তাঁদের তো একদিনও পানি ছেটাতে দেখিনি!’ আসিফ চৌধুরী নামে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের এক শিক্ষার্থী বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘এই সড়কে ধুলোবালি এতটাই যে পাঁচ হাত সামনে কি আছে সেটাও দেখা যায় না। চারদিকে শুধু ধুলো আর ধুলো। আমাদের কাছে করোনাভাইরাস থেকেও বড় আতঙ্ক এই বাতাসের বিষ। অতিদ্রুত কোন পদক্ষেপ না নিলে আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর অপরিণত বয়সে ৭০ লাখ মানুষ মারা যায় বায়ু দূষণের কারণে। এর কারণে আলঝেইমারস এবং স্মৃতিভ্রম ঝুঁকিও তৈরি হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ু দূষণের ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। এছাড়া ফুসফুসের (শ্বাসতন্ত্রের) নানা ধরনের জটিল সংক্রমণ রোগ হয়। যার মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, ক্রনিক অ্যাজমা, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, ক্যানসার, ইত্যাদি। এবিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: