‘প্রথমদিকে প্রতি সপ্তাহের শেষে নিজের শরীর কাটতাম’

প্রকাশিত: ০৭ এপ্রিল ২০২১, ০৭:০২ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরে ফারহান তৌহিদ ও তার ভাই ফারবিন তৌহিদ পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করেছেন। তারাও বেছে নিয়েছেন আত্মহননের পথ। মানসিক বিষণ্নতায় ভুগছিলেন ওই দুই সহোদর। হত্যাকাণ্ডের আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ ‘সুইসাইড নোট’ পোস্ট করেছেন। বিষণ্নতা যে এতটা মারাত্মক ভয়াবহ হতে পারে, তা উক্ত এই নোটে জল জল করে ফুটে উঠেছে। ‘সুইসাইড নোট’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশাল সেই নোটের প্রথম পর্ব এখান থেকেই শুরু। (ফারহানের রেখে যাওয়া নোটটির শিরোনাম ছিল—পরিবারের সবাইকে মারার পর আমি নিজে আত্মহত্যা করলাম) যদি মারা যাই, তাহলে হয়ত আমি কিছুটা নজর কাড়ব সবার। সারাজীবন যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মোকাবিলা করে এসেছি, আমি সেগুলো প্রকাশ করতে যাচ্ছি। কে জানে, হয়ত ভালো কোনো ফলও আসতে পারে। যারা জানেন না, তাদের উদ্দেশে বলছি, আমি নবম শ্রেণি (২০১৬) থেকে বিষণ্নতায় ভুগতাম। প্রথমবার নিজের দেহ নিজের কাটার কথা মনে পড়ছে। এটা ছিল ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট। আমি এই কাজটি করেছিলাম শিল্পকর্মের কাঁচি দিয়ে। তবে কাঁচি এতটাই ভোঁতা ছিল যে, এটা হাত কাটার চেয়ে চামড়ায় ঘষা খাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আমার চামড়া কাটল। কয়েকটি কাটা দাগের পর যন্ত্রণা কমা শুরু হলো। এই অনুভূতির প্রতি আসক্ত হতে বেশি সময় লাগল না। দুর্ভাগ্যবশত ছোটদের জন্য তৈরি করা কাঁচিগুলো মাংস কাটার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাই, আমাকে ছুরির দিকে ঝুঁকতে হলো। রান্নাঘর থেকে এটা নেওয়া ছিল অনেক সহজ। এগুলো ভোঁতা ছিল, কিন্তু অনেক ভালো কাজ করত। প্রথম দিকে আমি প্রত্যেক সপ্তাহ শেষে কাটতাম। কিন্তু স্কুল যাওয়ার পর আমি এটি বাড়িয়ে দিলাম। প্রত্যেক সপ্তাহে, প্রত্যেক দিন এবং শেষ পর্যন্ত এক দিনে একাধিকবার কাটতাম। আমি যখন স্কুলে ছিলাম, তখন শরীর কাটতে মন চাইত। বাথরুমে যখন আমি আমার শরীর জখম করতে ব্যস্ত, তখন ক্যালকুলাস কুইজে বাদ পড়েছি, আমি গুনেও শেষ করতে পারব না। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো, যখন আমার তিন ভালো বন্ধু আমাকে ছেড়ে গেল। তারা আমাকে এর আগে সাহায্যের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছে, বিষণ্ন একজনকে বোঝানো অনেক কষ্টসাধ্য। প্রথমে আমি রাগ করেছিলাম। কিন্তু এর বিপরীতে তাদের কী করা উচিত ছিল? আমার প্রথম পয়েন্ট ছিল: সাহায্য পাওয়া। সবাই বলত, ‘তুমি আমার সঙ্গে কথা বলতে পার’ এবং তারা তাদের গল্পে অপ্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্যের লিংকগুলো পোস্ট করত। কিন্তু আপনি যখন আসলে কোনো বিষণ্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগে থাকবেন, তখন এটা ঠিক করা কতটা অসম্ভব, তা বুঝতে পারবেন। আমি কতটা বিষণ্ন, তা বলে কখনোই কারও কাছ থেকে উপকার পাইনি। শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। একমাত্র সেসব লোক যারা সত্যিকার অর্থে আঁকড়ে ছিল, তারা সেটা করতে বাধ্য ছিল। তারা স্রেফ যত্ন নেওয়ার ভান করত এবং কখনোই সরাসরি সাহায্য করত না। এটা ছিল আমাদের উভয়ের সময়ের অপচয়। কোনো এক বছর শীতের একটি সময় অনুভূতিহীন হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি নিজের শরীর কেটে যাচ্ছিলাম। তখন আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটি আবিষ্কার করলাম। আমি বিষণ্নতায় ভোগার বিষয়টি আর লুকাতে পারলাম না। পারলাম না নিজেকে লুকাতে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: