বন্দরের জায়গায় ‘পার্কিং বাণিজ্য’, দৈনিক আয় দেড় লাখ

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ০৪:৫০ এএম
রবিউল হোসেন রবি, চট্টগ্রাম থেকে: চট্টগ্রামের বন্দর থানার ইস্ট কলোনি বালক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন তালতলা মাঠ, সেই মাঠের বিপরীতে টিসিবি গোডাউন মাঠ, তালতলা মাঠ টার্মিনাল ও বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকা। সবগুলো জায়গাই চট্টগ্রাম বন্দরের। তবে সেই জায়গায় চলছে এখন সিন্ডিকেটের পোদ্দারি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চট্টগ্রাম বন্দরে ঢোকার আগে পার্ক করে রাখা হয় ওই চার স্পটে। যার জন্যে দিতে হয় গাড়িপ্রতি দেড়শ টাকা করে চাঁদা। অনুসন্ধানে জানা যায়, বন্দরের এক ভূমি কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা ওই চার স্পটে ‘পার্কি বাণিজ্যের’ নেপথ্যের নায়ক— স্থানীয় কাউন্সিলর, নগর ছাত্রলীগের এক নেতা, চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক ও ড্রাইভার সমিতির সভাপতির এক পুত্র এবং হিজড়া সুমন। শুধু তাই নয়, এই বাণিজ্যের জন্যে ‘ম্যানেজ’ করতে হয় স্থানীয় থানাকেও। অভিযোগ রয়েছে, এসব টাকার ভাগ পায় বন্দর থানা পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও। জানা যায়, এর আগে সুমন প্রকাশ হিজড়া সুমনের নেতৃত্বে এককভাবে পার্কিং বাণিজ্য চললেও সম্প্রতি সময়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর নির্বাচনের পর থেকে এ নিয়ন্ত্রণ ভাগ হয়ে যায় চার গ্রুপে। প্রায় ২০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থান চট্টগ্রামের বন্দর থানার ইস্ট কলোনি বালক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন তালতলা মাঠের। সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পার্ক করা হচ্ছে মাঠ দখল করেই। পার্কিয়ের পারমিশন বাবদ গুণতে হয় ১৫০ টাকা করে। আর এই মাঠ অবৈধ দখলের পেছনে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোর্শেদ আলী, তাঁর ছোট ভাই শাহেদ আলী, যুবলীগ নেতা সালাউদ্দিন, ফরহাদ, নাছির ও সাজ্জাদ। তাঁদের দৈনিক আয় ৪৫ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় ৪০০ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পার্কিং করা হচ্ছে ইস্ট কলোনি টিসিবি গোডাউন মাঠ, তালতলা মাঠ ও টার্মিনাল মাঠে। আর এই পার্কিং বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক আরিফ হোসেন ও সুমন প্রকাশ হিজড়া সুমনের হাতে। এখান থেকেই দৈনিক আয় ৬০ হাজার টাকা। এদিকে বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন পার্কিং বাণিজ্য নিন্ত্রয়ণ চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক চালক সমিতির সভাপতি মো. শফির পুত্র মনার হাতে। সেখানেও দৈনিক ৩০০ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান থেকে তোলা হয় ১৫০ টাকা করে চাঁদা। দৈনিক হিসেবে এই নেতার আয় দাঁড়ায় ৪৫ হাজারে। এদিকে ‘মানবিক দৃষ্টিতে’ বিবেচনা করে বন্দরের জায়গা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে খোদ বন্দর কর্তৃপক্ষ— এমনটাই দাবি সুমন প্রকাশ হিজড়া সুমনের। তিনি বলেন, ‘তালতলা মাঠ একটি পুকুর ছিল। সেটি আমি দিন-রাত পরিশ্রম করে ভরাট করেছি। তাই একাধিক বার দরখাস্ত করার পর ‘মানবিক দৃষ্টিতে’ দেখে বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাকে জায়গাটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। তবে ওখানে বন্দরের বিভিন্ন গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। সেখানে তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় আমরা পাহাড়া দিই। আর সেই সুবাদেই খুশিমতো আমাদের বখশিশ দেয়া হয়। এখানে জোরজবরদস্তির কিছু নেই।’ ছাত্রলীগ নেতার আরিফ হোসেনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওনি আমাদের হেল্প করে বিভিন্ন বিষয়ে। সেও এখানে এসে ডিউটি করতো। আমরা খুশি হয়ে তাকে মাসে ৮-১০ হাজার টাকা দিই আর কি।’ এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোর্শেদ আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিজাম উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘পুলিশের যোগসাজশের কোন প্রশ্নই আসে না। আমি থানায় যোগদান করেছি ৬ মাস হলো। আমি যতদূর জানি ২০ বছর ধরে হিজড়া সুমন বন্দর থেকে জায়গা লিজ নিয়ে পার্কিংয়ের গাড়ি রাখে এবং পাহাড়া দেয়ার বিনিময়ে টাকা নেয়। তবে পুলিশ এর সাথে জড়িত নয়। তবে এখন এখানে পলিটিক্যাল কিছু লোক ঢুকছে। এরা আবার কয়েক গ্রুপ হইছে। প্রত্যেক গ্রুপই চায় এখানে কর্তৃত্ব করতে হিজড়া সুমনকে তাড়িয়ে দিয়ে। আমার কাছেও এসেছিল, আমি বলেছি সে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তাকে এখান থেকে উচ্ছেদ করা যাবেনা। এটা নিয়ে কোন অভিযোগ থাকলে বন্দরকে বলে তারপর তাকে উচ্ছেদ করেন।’ হিজড়া সুমনের সাফাই গেয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা চাঁদাবাজি করতে চায় জানিয়ে ওসি বলেন, ‘এখানে দলীয় ছেলেদের কয়েকটি গ্রুপ হিজড়া সুমনের কাছে চাঁদা চায়। কিন্তু আমরা এটা করতে না দেয়ায় আপনাদের কাছে যায়। এখন পুলিশকেও জড়াচ্ছে ওরা।’ চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমি কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান এবিষয়ে মুঠোফোনে বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টকে বলেছি ওই জায়গায় যেন আর অবৈধভাবে পার্কিং করতে না পারে।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: