জেনে নেই মমতার নতুন মন্ত্রিসভায় ৭ মুসলিম সদস্য কারা !

প্রকাশিত: ১১ মে ২০২১, ০৮:২০ পিএম
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। করোনা পরিস্থিতিতে মাত্র ছয় মিনিটের মধ্যে শেষ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নতুন মন্ত্রীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। সোমবার (১০ মে) জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। ভার্চুয়ালি যোগ দেন পূর্ণমন্ত্রীরা। এরপর একসাথে শপথ নেন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীরা। সব শেষে একসাথে শপথ নেন প্রতিমন্ত্রীরা। রাজভবন থেকে জানানো হয়েছে, করোনার বিধিনিষেধের কারণে আলাদা করে নয়, এক সাথে সবার শপথ হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মন্ত্রিসভায় ৪৩ সদস্য শপথ নেন। ৪৩ জন মন্ত্রী নেওয়া হয়েছে এবারের এই মন্ত্রিসভায়। এর মধ্যে ২৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী ও ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্য ৪৪ জন। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় থেকে ৭ জন মমতার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন। তার মধ্যে ৪ জন পূর্ণমন্ত্রী, ১ জন স্বাধীন প্রতিমন্ত্রী ও দু’জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। যারা পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পাচ্ছেন তারা হলেন- কলকাতার বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিম, জাভেদ আহমেদ খান, সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ও গোলাম রব্বানি। যে তিনজনকে দেওয়া হয়েছে স্বাধীন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে এই প্রথম মন্ত্রী হলেন আখরুজ্জামান। এবারের মন্ত্রিসভায় সদস্য হয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর ও সাবেক মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। মমতা ব্যানার্জির নতুন মন্ত্রিসভায় মুসলিম নেতাদের পরিচয়- ফিরহাদ হাকিম ফিরহাদ হাকিম ভারতের স্বাধীনতার পর কলকাতার প্রথম মুসলিম মেয়র হিসাবে দায়িত্বপালন করছেন। ববি নামে পরিচিত এই নেতা মমতা ব্যানার্জীর একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি আগে রাজ্যের নগরোন্নয়ন এবং পৌর দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। এর আগে ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, তার দাদু বিহারের গয়া জেলা থেকে কলকাতায় এসে ব্যবসা শুরু করেন। বাবা ছিলেন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের আইন কর্মকর্তা। আর মা ছিলেন কলকাতার একটি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা। ফিরহাদ হাকিমের মায়ের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের ফরিদপুরে। জাভেদ আহমেদ খান বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কসবা আসন থেকে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেন। নির্বাচনে ১লাখ ২০ হাজার ৯৫৭ ভোট পেয়ে জয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. ইন্দ্রনীল খাঁ পেয়েছেন ৫৭,৭৫০ ভোট। ৬৩ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়লাভ করেন। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয় পেয়েছেন শাইখুল হাদিস মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তিনি জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি। বিজেপি সরকারের সিএএ বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম প্রধান মুখ সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। ২০১৬ সালে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। পরবর্তীকালে তাকে মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী করা হয় এবং গণশিক্ষা, গ্রন্থাগার এবং সংসদীয় বিষয়গুলিতে স্বতন্ত্র দায়িত্বে ছিলেন। মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৯ সালের ১০ জানুয়ারি। ভারতে ধর্মীয় শিক্ষার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দে থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করেন। গোলাম রাব্বানি উত্তর দিনাজপুর থেকে তিনি বিধায়ক হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৩ সালে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাস করেন তিনি। ২০১১ সালে গোয়ালপোখর কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন। রাজনীতিতে আসার আগে হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন গোলাম রাব্বানি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন রব্বানি ২০১৫ সালে ৷ ২০১৬ সালে তৃণমূলের হয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব পান তিনি। আখরুজ্জামান মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের বিধায়ক আখরুজ্জামান প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হচ্ছেন। আখরুজ্জামানের বাবা হাবিবুর রহমান ২৫ বছর বিধায়ক ছিলেন। আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আখরুজ্জামানের বাবা হাবিবুর রহমান পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক ছিলেন। হাবিবুর সাইকেল ভেঙে গ্রামে গ্রামে ছুটে শিশুদের লেখাপড়া উদ্বুদ্ধ করতেন। এজন্য তিনি সবার কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। হুমায়ুন কবীর চন্দননগরের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর। চাকরি মেয়াদ থাকা অবস্থায় পদত্যাগ করে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। ২০০৩ ব্যাচের এই সাবেক আইপিএস অফিসারের স্ত্রী অনিন্দিতা কবীর আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। সাবিনা ইয়াসমিন তিনি এর আগের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের শ্রমমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মোথাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক হিসেবে ২০১১ সাল থেকে নির্বাচিত হচ্ছেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী সাবিয়া ইয়াসমিন বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হবার পূর্বে মালদা জেলা পরিষদের সভাপতি ছিলেন। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তিনি কংগ্রেসের টিকিটে তিনি পুনরায় মোথাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে তিনি দল পরিবর্তন করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের মুসলিম প্রার্থী ছিলেন ৫৭ জন। তবে এবার তৃণমূল কংগ্রেস ৪২ জন মুসলিম প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: