ট্যানারী বর্জ্যে দূষিত কালিগঙ্গা নদীর পানি

প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২১, ১০:০৯ পিএম
শামীম হোসেন সামন, দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) থেকে: ঢাকার নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত কালিগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়ে কালো রং ধারণ করেছে। এতে গোসল করা, কাপড় কাচাসহ দৈনন্দিন কাজ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর মাছ মরে যাচ্ছে, দেখা দিচ্ছে নানা পানি বাহিত রোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, কেরানীগঞ্জ ও সাভার উপজেলার সীমান্তবর্তী হরিণধরা এলাকায় গড়ে ওঠা চামড়ার ট্যানারীর বর্জ্যে কয়েক মাস ধরে নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার অংশ জোড়ে পানি কালো রং ধারণ করে দূষিত হয়ে গেছে। সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চামড়ার ট্যানারী হাজারীবাগ থাকা অবস্থায় এ অঞ্চলের কালিগঙ্গা নদীতে কখনও ট্যানারীর বর্জ্য ঢোকেনি। বর্তমানে সাভার এলাকায় ট্যানারী গড়ে ওঠায় টেনারীর বর্জ্য ধলেশ্বরী নদী হয়ে বুড়িগঙ্গায় মিশেছে। বুড়িগঙ্গার সাথে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর খালের সাথে কালিগঙ্গার সংযুক্ত থাকায় নদীতে বর্জ্য ঢোকে দুষিত হয়ে পড়েছে। ফলে কালিগঙ্গা নদীর পানির রং কালো হয়ে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। মাছ মরে ভেসে ওঠছে, পানি মুখে নেওয়া যাচ্ছে না। গোসল করলে শরীরে চুলকানী হচ্ছে। কৃষির সেচ কাজেও নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এলাকাবাসী জানান, কালিগঙ্গার পানি বর্ষা মৌসুমের আগে খুব টলটলে থাকে। এ অঞ্চলের বেশীর ভাগ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। এ নদীর পানি দিয়ে তারা কৃষি কাজ করে থাকেন। তা ছাড়া নিজেদের গোসল থেকে শুরু করে রান্না বান্না ও গবাদিপশুকেও গোসল করিয়ে থাকেন নদীর পাড়ের মানুষেরা। জেলেরা মাছ শিকার করে জীবিকা উপার্জন করে থাকেন। নদীর এই মিঠা পানিতে মাছের স্বাদও ভিন্ন রকমের। কয়েক মাস যাবত নদীতে ট্যানারীর বর্জ্য ঢোকে পরিবেশকে দূষিত করেছে। সব মিলিয়ে বর্তমান নদীর অবস্থা খুবই খারাপ। এর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে পরিবেশকে দূষিত করে এ নদীর আরও ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করবে। নদীর পাড়ে বসবাসকারী মো. শাহালম বলেন, কালিগঙ্গা নদীর পানি দিয়ে এ অঞ্চলের কৃষকেরা তাদের চাহিদা সেচ কাজের মিটায়। দুই মাস যাবত দেখছি পানির রং কলো হয়ে দূর্গন্ধ বেরুচ্ছে, মাছ মরে ভেসে ওঠছে। শোল্লা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. মোহন বলেন, ট্যানারীর বর্জ্যে যে ভাবে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলে অঞ্চলের কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু হয়ে পড়বে। স্থানীয় যুবলীগনেতা হানিফ খান বলেন, এমনিতেই এলাকার মানুষ কালিগঙ্গা নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা। তার মধ্যে বর্জ্য ঢুকে পানিকে দূষিত করেছে। এর একটা বিহিত না করলে আগামীতে জিবিকা নির্বাহে আমাদের খুবই সমস্যা হবে। কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ নদীর পানি আমাদের কৃষিকাজসহ দৈনন্দিন কাজে করে থাকি। পানির যে অবস্থা এতে করে জমির ফসলাদি থেকে শুরু করে জীবন-জিবিকা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। শোল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান তুহিনুর রহমান বলেন, কালিগঙ্গা নদীর পাড়ের বেশীর ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। নদীর পানি দূষিত হয়ে পরিবেশ নষ্ট করছে। এতে করে এখানকার কৃষির উপর একটা বড় ধরণের চাপ পড়বে। ফসল উৎপাদনে সংকট দেখা দিবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আইনুল হক বলেন, কালিগঙ্গা নদীর পানি দুষণের খবর জেনেছি। এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: