যশোরে ২৪ঘন্টায় দেড়’শ করোনা রোগী শনাক্ত

প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২১, ০৫:৫৯ এএম
যশোরে করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও নেই সচেতনতা। সংক্রমণ প্রতিরোধে শহরে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযান পরিচালনায় মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে। তারপরেও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে রয়েছে চরম উদাসিন। মুখে মাস্ক পরা ছাড়া বর্তমানে আর কোনো সচেতনতা নেই বললেই চলে। তাও আবার পুলিশ দেখলে মানুষ মাস্ক মুখে দিচ্ছে। প্রশাসনের কঠোর বিধিনিষেধের মাঝেও গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ভারত ফেরত আরও ৪ জনসহ নতুন করে ১৫০ জন নারী পুরুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৮ জুন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায়  যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সকল ওয়ার্ডে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৯ জুন দিবাগত রাত থেকে কঠোর বিধিনিষেধে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম। এরমধ্যে করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন রেকর্ড ভাঙছে। গত ১১ দিনে যশোরে করোনায় শিশুসহ মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। আর ১১০১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলমান বিধিনিষেধ কার্যকরে প্রশাসন কড়া ভূমিকা পালন করলেও মানুষকে সচেতন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই মানুষ চলাচল করছেন। সড়ক আটকে বাঁশ দেয়া হলেও নিচে দিয়ে যাতায়াত করছে মানুষ। কারও মুখে মাস্ক আছে, কারও নেই। পুলিশ দেখলে মাস্ক ব্যবহার করছেন। অন্য সময় খুলে রাখছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে  শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করেন না। মোটরসাইকেলে ২/৩ জন চলাচল করছেন। রিক্সায়ও একই অবস্থা। সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলে বাধ্য করার জন্য যশোর পৌর এলাকার বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে। শহরের দড়াটানা এলাকায় রয়েছে ৮ টি। এরপরেও ইজিবাইক ভ্যান, পিয়াজু (থ্রি হুইলার), চলতে দেখা গেছে। অধিকাংশ শপিং মল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কেউ কেউ আবার দোকানের এক দরজা খোলা রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে ভ্রাম্যমান আদালত ও পুলিশ দেখলেই দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে জেলায় হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সপিং মল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হাত ধোয়ার জন্য সাবান ,হ্যান্ড স্যানিটাইজার, বেসিন ও ড্রাম থাকতো। কিন্তু এসবের বালাই নেই। মানুষের অবাধ যাতায়াত ও সামাজিক দুরত্ব নেই।কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে যশোরে কোথায় আছে স্বাস্থ্যবিধি তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে প্রবেশ মুখে ও প্রতিষ্ঠানের নানা স্থানে সাইনবোর্ড  সাটানো রয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন কোনো হাত ধোয়ার জন্য বেসিন থাকলেও সেখানে পানি ও সাবান থাকছেনা। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবস্থা আরো খারাপ। প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার জন্য সাবান পানি রাখা হয়নি। মোট কথা সরকারি বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি নেই। রোগী ও স্বজনদের মাঝে নেই কোনো দূরত্ব। মাস্ক মুখে না দিয়েই আসা যাওয়া করছেন অনেকে। স্বাস্থ্যবিধি,কোথায় সামাজিক দূরত্ব সব ভুলে গেছেন তারা। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, এই পর্যন্ত হাসপাতালের রেডজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত ২২ জন মারা গেছেন। রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত ৬৩ জন করোনার রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। আর ইয়োলো জোনের অবস্থা খুবই খারাপ। নারী পুরুষ মিলে ১৯ শয্যার বিপরীতে প্রায়  দ্বিগুন রোগী রয়েছেন। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান,  রোববার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে ৩৩০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১১৪ জন খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) ল্যাব থেকে আসা ১১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪ জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে ১০ জনের র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ৩ জন ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫২ জনের এন্টিজেন পরীক্ষা করে ২৯ জন পজেটিভ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন ভারত ফেরত শার্শা ও ঝিকরগাছার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আক্রান্ত হয়েছেন। জেনোম সেন্টার ও খুলনার ল্যাবে শনাক্ত ১১৮ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৭ জন, কেশবপুর উপজেলায় ৩জন, ও ঝিকরগাছা উপজেলায় ৪ জন, অভয়নগর উপজেলায় ৯ জন,  মণিরামপুর উপজেলায় ৫ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১ জন, শার্শা উপজেলায় ১১ জন ও চৌগাছা উপজেলায় ৮ জন রয়েছেন। যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, জেনোম সেন্টারে যশোরের ১১৪ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২১ জন ও  নড়াইল জেলার ৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৩ জনের করোনা পজেটিভ হয়েছে। তিন জেলার মোট ৪১২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৫৮ জন পজেটিভ ও ২৫৪ জনের নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছে। যশোর সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, পরিসংখ্যানের হিসেব অনুযায়ী ১৩ জুন পর্যন্ত যশোর জেলায় ৮ হাজার ১শ’, ৯৭ জন কোভিডে নভেল আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১০১ জন নারী পুরুষ। এর মধ্যে যশোরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ৮৯ জনের। আর ঢাকায় ৬ জন খুলনায় ৫ জন ও সাতক্ষীরার হাসপাতালে মারা গেছেন ১জন। সিভিল সার্জন আরও জানান, যশোর জেলায় সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে। বেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে মানুষ। জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে মানুষকে সচেতন করার জন্য। এখনি হেয়ালীপনা ছেড়ে সচেতন হলে আরও বড় ধরণের খেশারত দিতে হতে পারে। যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট (এডিএম) মোহাম্মদ সায়েমুজ্জামান জানান, কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করার জন্য প্রশাসন কড়াকড়ি অবস্থানে রয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে রোববারও ১৮ টি মামলা দিয়ে ২৪ হাজার ১শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলার আহবান জানান তিনি। উল্লেখ্য, রোববার পর্যন্ত ৪ সহস্রাধিক বাংলাদেশি ভারত থেকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন হয়ে দেশে ফিরেছেন। তাদের ৫৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর ১৫ জনের শরীরে মিলেছে ভারতীয় করোনার ধরন মিলেছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: