প্রেমে বাধা ও চাকুরিচ্যুত করায় ফার্মেসী মালিককে কুপিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২১, ০৭:৪৮ এএম
কিশোরগঞ্জে প্রাক্তন কর্মচারীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন জিয়াউর রহমান (৪৫) নামে এক ফার্মেসী মালিক। প্রেমে বাধা ও এর জের ধরে চাকুরিচ্যুত করায় প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে প্রাক্তন কর্মচারী এনামুল হক (২৪) এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। আদালত ও পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে সে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। রোববার (২৭ জুন) বিকালে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আবদুন নূর ১৬৪ ধারায় এনামুল হকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাসান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত ফার্মেসী মালিক জিয়াউর রহমান জেলার হোসেনপুর উপজেলার পুমদী ইউনিয়নের রানাগাঁও গ্রামের আব্দুর রাশিদের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার লতিবাবাদ দক্ষিণপাড়া এলাকায় বসবাস করে শহরের গাইটাল এলাকায় হর্টিকালচার সেন্টারের বিপরীতে সুমাইয়া মেডিকেল হক নামে একটি ফার্মেসী চালাতেন। অন্যদিকে ঘাতক এনামুল হক জেলার কটিয়াদী উপজেলার সহশ্রাম ধূলদিয়া ইউনিয়নের আতরতোপা গ্রামের মেরাজ মিয়ার ছেলে। গত শুক্রবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের পাঁচধা এলাকায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে জিয়াউর রহমানকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় এনামুল ও তার সহযোগীরা। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে জিয়াউর রহমান মারা যান। ঘটনার পর পরই পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) এর নির্দেশনায় কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবু বকর সিদ্দিক পিপিএম এর নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মুখলেসুর রহমান ও পুলিশ পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এনামুল ও সুমন (২৭) নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সুমন শহরের গাইটাল ফার্মের মোড় এলাকার আরজু মিয়ার ছেলে। পুলিশ জানায়, জিয়াউর রহমানের ফার্মেসীতে চাকুরি করার সময় সুমনের বোনের সঙ্গে এনামুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জিয়াউর রহমান জানতে পেরে এনামুলকে সতর্ক করার পাশাপাশি মেয়েটির পরিবারের লোকজনের কাছে এনামুলের সম্পর্কে নেতিবাচক কথাবার্তা বলেন। এরপরও এনামুল মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করলে জিয়াউর রহমান তাকে চাকুরিচ্যুত করেন। এতে এনামুল ক্ষিপ্ত হলেও বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য না করে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। মনে পুষে রাখা জেদ থেকে এনামুল শুক্রবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত ১০টার দিকে জিয়াউর রহমানকে দুই লাখ টাকা হাওলাত এনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের পাঁচধা গ্রামের নির্জন একটি স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় ঘাতকেরা। জিয়াউর রহমান মৃত্যুর আগে দেওয়া জবানবন্দিতে এনামুলের নাম বলেও গেছেন। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএম জানান, জিয়াউর রহমান আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকার সময়ে শনিবার তার স্ত্রী মোছা. আছমা আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা (নং-৪০) দায়ের করেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম মারা যাওয়ায় এখন মামলায় হত্যার ধারা ৩০২ যুক্ত হবে। এ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। রোববার (২৭ জুন) তাদেরকে আদালতে পাঠানোর পর এনামুল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: