জামাল বাদশা, লালমনিরহাট থেকে: লালমনিরহাটে পাটক্ষেতে পাওয়া সেই মৃতদেহ জেলখার সনাক্ত হওয়ার পরেই তদন্তে নেমে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যা মামলাটির রহস্য উদঘাটন করেছে লালমনিরহাট পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেলে সদর উপজেলার গোকুণ্ডা ইউনিয়নের রতিপুর (বড় মসজিদ) ফকিরটারী এলাকার পাটক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয় একই এলকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে জেলেখার মরদেহ। নিহতের পরিচয় তাৎক্ষণিক সনাক্ত হওয়ায় তদন্তে নামে পুলিশ।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ ধারণা করে নিহত জেলেখার মরদেহ গুম করতে ঘটনাস্থলে অপরাধীরা ফেলে যায়। মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। চলতে থাকে রহস্য উদঘাটনে পুলিশের চেষ্টা।
এরই মধ্যে নিহত জেলেখার মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামীদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করলে মামলা রুজু করে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ।
মামলাটি তদন্তকালে নিহত জেলে এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারের সিডিআর পর্যালোচনা করে সদর উপজেলার তিস্তা পাঙ্গাটারী গ্রামের দিনেশ চন্দ্র বর্মনের ছেলে বিধান চন্দ্র বর্মন (২৬) ও সুদর্শন বর্মনের ছেলে সুকুমার চন্দ্র বর্মন ওরফে হরতালকে(২১)কে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ পরে আসামী দ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জেলেখাকে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে তারা।
জানা গেছে, নিহত জেলেখা প্রথম স্বামীর সাথে তালাক হয়। পরে কুড়িগ্রাম জেলার মনজু নামক এক ব্যক্তির সাথে গত ১৩ এপ্রিলে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের পর জেলেখা জানতে পারেন সে স্বামী মনজুর ৬ষ্ঠ স্ত্রী। সে কারণে ২য় স্বামীর সাথে সংসার না করে পূনরায় তার মায়ের বাড়িতে বসবাস করতে থাকে।
পুলিশ গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায় যে, মোবাইল ফোনে আসামী বিধান চন্দ্র রায়ের সাথে জেলেখার পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে নিয়মিত কথাবার্তা চলে। বিধান চন্দ্র ও জেলেখার বাড়ি একই ইউনিয়নের পাশাপাশি গ্রামে। সেই সূত্রে বিধান এর স্ত্রী বাড়ীতে না থাকার সুযোগে ২১জুন২০২১ তারিখ রাত ০৯.৩০ টার দিকে জেলেখা তার বাড়ীতে আসে এবং রাত যাপন করে ভোরে চলে যায়। পরের দিন ২২জুন২০২১ তারিখ রাত ১০.০০ টার দিকে সবার অজান্তে আবারো জেলেখা আসামী বিধানের বাড়ীতে আসলে দুজনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয় এবং জেলেখা ঐ রাতে বিধানের শয়ন ঘরে অবস্থান করে। ঐদিন দিবাগত ভোর অর্থাৎ ২৩জুন২০২১ তারিখ ভোর ০৪.৩০ টার দিকে জেলেখা আসামী বিধানকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে এবং তাকে বিয়ে করে ঢাকায় নিয়ে যাবে কিনা জানতে চায়। বিধান পূর্বের ন্যায় তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলে দুজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে জেলেখা আশপাশের লোকজনদেরকে ডাকাডাকি করার চেষ্টা করলে আসামী বিধান তার ঘরে থাকা কাঠের ফলা (লাঠি) দিয়ে জেলেখার মাথার পিছন দিকে আঘাত করে। সে মাটিতে পড়ে গেলে বিধান তার ঘরে থাকা দাঁ এর ধারালো মাথা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার কপালে কোপ মারে এবং দাঁ এর ধারালোর বিপরীত পাশ দিয়ে গলায় চেপে ধরে জেলেখাকে হত্যা করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে তার লাশ খাটের নিচে রেখে সকাল ৯. ৩০ টার দিকে কাঠমিস্ত্রির কাজে যায়। কাজ শেষে তার কর্মচারী গ্রেফতারকৃত আসামী শ্রী সুকুমার চন্দ্র বর্মন ওরফে হরতাল (২১)কে নিয়ে তার বাড়ীতে আসে এবং হরতালের সহযোগীতায় লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ইং-২৩জুন২০২১ তারিখ রাত ১১.৩০ টার দিকে পার্শ্ববর্তী পাট ক্ষেতে জেলেখার লাশ ফেলে আসে।
গ্রেফতারকৃত বিধান চন্দ্র রায় এর দেখানো ও সনাক্ত মতে তার বসত বাড়ী থেকেই হত্যা কাজে ব্যবহৃত একটি লোহার তৈরী ধারালো দাঁ, একটি কাঠের ফলা (লাঠি), মৃতার জুলেখার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, স্যান্ডেলসহ মামলার সংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার করে পুলিশ।
সূত্রে জানা গেছে হত্যার বিষয়ে আসামীদ্বয় স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করায় বিজ্ঞ আদালত ২৭জুন২০২১ তারিখ ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারামতে আসামীদ্বয়ের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন।
পাঠকের মন্তব্য: