সিলেটে পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২১, ০৫:৫৬ এএম
আবুল হোসেন, সিলেট থেকে: সিলেটের গোয়াইনঘাটে বছরের প্রথম বারের মতো বন্যা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে বিপদসীমার উপর দিয়ে বন্যার পানি যাচ্ছে। এতে এ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছ। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, গত শুক্রবার (২৫ জুন) সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। যার পফে গোয়াইনঘাট উপজেলার হাওরঞ্চলের সিংহভাগ এলাকার রাস্তাঘাট সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া অবিরাম বৃষ্টিতে এ অঞ্চলের মানুষের স্বভাবিক জীবন যাত্রার মান বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সড়কে পানি-কাদায় একাকার। বিঘ্ন ঘটছে যান চলাচলে। ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় গত তিন দিনেও এ অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। এতকিছুর পরও উপজেলাবাসীর মানুষ বৃষ্টিবিলাসে অনেকটা মত্ত। অনেককেই দেখা গেছে বৃষ্টি উপভোগে ছাতা নিয়ে রাস্তায় বেরোতে। মনের আনন্দে খেলোয়াড়দের ফুটবল মাঠে বৃষ্টিতে ভিজে খেলতে দেখা গেছে, তারা বলেন, দেরিতে হলেও বর্ষা এসেছে এটাই প্রাপ্তির। আষাঢ়-শ্রাবণে বৃষ্টি হবে এটা মেনে নিয়েই আমরা বাঙালি। আষাঢ়-শ্রাবণে অবিরাম বৃষ্টি আমাদের কাছে বলতে গেলে স্মৃতি হয়ে উঠেছিল। গত দুইদিনের বৃষ্টি সেই স্মৃতিকেই জাগিয়ে তুলছে। এ বৃষ্টিতে কিছুটা সমস্যা সবারই হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়াটা আরও বেশি সমস্যার। মঙ্গলবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বিছানাকান্দি পর্যটন কেন্দ্র এবং আনফরের ভাঙ্গা নামক স্থানের নদী পাহাড়ি ঢলের পানিতে ছিল টুইটুম্বুর। আগত স্থানীয় পুরুষ মহিলাদেরকে ইঞ্জিন নৌকায় নদী পার হতে দেখা যায়। রুস্তমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘বিছনাকান্দি এলাকায় গতকালের চাইতে আজকে পানি আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে তবে পানি এখনো বিপদসীমার নিচে আছে আশপাশে কারো বাড়িঘরে এখনো পানি উঠে নাই।’ এদিকে উপজেলার কৃষকেরা আউশ ধানের বীজ বপনের জন্য অনেকে বেড তৈরি করছেন আবার অনেক কৃষককে আউশ ধানের বীজ বেডে বুনতে দেখা গেছে। পূর্ব আলীরগাঁও বারোহাল থেকে হোসেন জানান, ‘লাফনাউট বাজার পেরিয়ে সাতাইন পর্যন্ত সারি গোয়াইনঘাটের দুই কিলোমিটার রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। পানির জোর খুব বেশি দ্রুতগতিতে পানি বাড়ছে বিকাল পর্যন্ত উপজেলা সদরের সাথে উপজেলার অনেক রাস্তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ জাফলং টুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ ইউনিটের ওসি রতন শেখ জানান, ‘জাফলং পিয়াইন নদী পাহাড়ি ঢলের পানিতে থৈথৈ করছে, পাহাড় থেকে অবিরাম পানি নামছে। তিনি বলেন যেভাবে পাহাড়ি ঢল নামছে বিকাল পর্যন্ত পানি আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে কারও বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।’ গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আলী জানান, ‘দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাহাড়ি ঢলের পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে ছিল।’ তিনি বলেন, পিয়াইন নদীর পাহাড়ি ঢলের পানির জোর বেশি হওয়ায় উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নে পানির পরিমাণ বেশি। সারিঘাট ও গোয়াইনঘাটের ইটের ভাটার সামনের কিছু রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে বলে তিনি জানান। রাধানগর রাস্তার ভাঙ্গনগুলো দিয়ে পানির স্রোত যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, উপজেলার পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, ডৌবাড়ী, লেংঙ্গুরা, রুস্তমপুর, তোয়াকুল ও নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে আছে। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার এবং ক্ষয়ক্ষতির কোনো আশঙ্কা এখন পর্যন্ত হয়নি। তবে উপরের পানির জোর বেশি থাকায় বিকাল পর্যন্ত পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: