পটুয়াখালী জেলায় নেতৃত্বের শূন্যতায় ছাত্রলীগ

প্রকাশিত: ০৩ জুলাই ২০২১, ০৬:৪৯ এএম
স্বপ্নীল দাস,পটুয়াখালী থেকে: মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তের পরে বর্তমানে কমিটি বিহীন চলছে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ। এতে তৈরি হচ্ছে গ্রুপিং, বাড়ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সম্মেলনের মাধ্যমে ২৪ জুলাই মোঃ হাসান সিকদারকে সভাপতি ও ওমর ফারুক মোঃ ইকবাল হোসেন ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রলীগের জেলা শাখার মেয়াদ এক বছর। সে হিসেবে গত ২৪ জুলাই ২০১৮ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে গত ২৯ জুন ২০১৯ সালে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্নাঙ্গ করা হয়। এরপরে দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার পর ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৫ অক্টোবর ২০১৯ সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী,২০২১ ইং তারিখ সোমবার সকালে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞিপ্তির মাধ্যমে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান সিকদার এবং সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন কমিটি বিপুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া একই বিজ্ঞপ্তিতেই জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন হতে আগামী ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহম্মেদ রাসেল এবং সহ সম্পাদক শেখ রিজওয়ান আলীর কাছে জীবন বৃত্তান্ত দেওয়ার জন্য বলা হয়ে থাকলেও এখনো নতুন নেতৃত্বের মুখ দেখেনি পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার খবরে প্রায় গত দেড়/দুই বছর যাবৎ কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। তবে তাদের মধ্যে বিতর্কিতদের অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপ ক্লিন ইমেজের ছাত্রনেতাদের চিন্তিত রেখেছে বলে দাবি একাধিক নেতাকর্মীর। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, আগামী নেতৃত্ব এমন ছাত্রনেতাদের হাতে দেওয়া হোক- যাদের বিগত দিনের কর্মকান্ড ইতিবাচক, হামলা-মামলার আসামী নন এবং ভবিষ্যতে কোনোভাবেই তাদের দ্বারা ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে না। জেলা ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, নতুন কমিটি ঘোষণার খবরে পটুয়াখালীর অন্তত এক ডজন পদপ্রত্যাশী নেতা ঢাকায় যাওয়া আসা করে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির একাধিক নেতা জানান, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে যারা ঢাকায় খুব বেশি দৌড়ঝাঁপ করছেন, তাদের অধিকাংশের নাম রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধীর তালিকায়। বিভিন্ন মামলায় কেউ কেউ চার্জশিটভুক্ত আসামি। আবার কারও কারও পরিবারের রয়েছে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতা। তবে জেলা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে করোনাকালীন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ,জনসচেতনতামূলক প্রচার,সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ সহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে আলোচনায় আসেন জেলা ছাত্রলীগ নেতা আরিফ আল-আমিন,হৃদয় আশীষ,রাকিবুল হাসান রকিসহ একাধিক নেতা।সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, আগামী ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এমন মানবিক ছাত্রনেতারা যেন অগ্রাধিকার পান। গত রমজান মাসে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর এর আয়োজনে রামজান মাস জুড়ে সর্বসাধারণের মাঝে প্রতিদিন বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রশংসায় আসেন ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় আশীষ,সালাউদ্দীন হীরা,সবুর খান,মেহেদী হাসান কোয়েল,বেল্লাল হোসেন পাবেল প্রমুখ। কমিটি গঠন নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন জানান, জামায়াত-বিএনপির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে- এমন সন্ত্রাসী, মাদকাসক্তরা যাতে কোনোভাবেই ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান না পায়, এ জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আগামী দিনে পটুয়াখালীতে হাইব্রিডমুক্ত একটি নির্ভেজাল ছাত্রলীগ কমিটি গঠন করা হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। কমিটি গঠন নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফ আলী মুঠোফোনে জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিন ধরে যাচাই বাছাই করছেন।মূলত সামগ্রীক বৈশ্বিক মহামারীর কারনে সাংগঠনিকভাবে মুভমেন্ট করতে পারছি না। তবে খুব একটা দেরী হবেনা।বর্তমানে বেশ কিছু কমিটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।গাজীপুর,সিলেট মহানগর,সিলেট জেলা,ময়মনসিংহ মহানগর এবং পটুয়াখালী জেলা নিয়ে একই সাথে কাজ চলছে, যেকোন মুহূর্তে কমিটি হয়ে যাবে আশা করি।তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে ঈদের আগেই কমিটি দিয়ে দেয়া যায়। বর্তমানে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকে তাঁকিয়ে রয়েছে হাজার হাজার নেতা কর্মীরা। ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে কমিটি না থাকার ফলে অধিকাংশ নেতাই তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দিনকে দিন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ছে পটুয়াখালী জেলা শাখা ছাত্রলীগ।ফলে নতুন কমিটি হাজার হাজার নেতাকর্মীর প্রাণের দাবী।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: