করোনার মধ্যে দুর্গম পাহাড়ে ম্যালেরিয়ার হানা

প্রকাশিত: ০৭ জুলাই ২০২১, ০৮:৪২ পিএম
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ের সাজেকে করোনার মধ্যে হানা দিয়েছে ম্যালেরিয়া। প্রতিনিয়ত ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এই দুর্গম পাহাড়ের মানুষ। করোনার ভয়ে কেউ পরিক্ষাও করাতে যাচ্ছে না স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। জ্বরের লক্ষণ দেখে স্বজনেরা বাজারে এসে ফার্মেসি থেকে ঔষধ নিয়ে যান। যেন করোনার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে, উপজেলার দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়া, বড়ইতলী পাড়া, শিব পাড়া, দেবাছড়া, নরেন্দ্র পাড়া, ১নং ওয়ার্ডের মন্দির ছড়া, শিয়ালদহ, তুইচুই, বেটলিং সহ এই সব এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সাজেকের ত্রিপুরা এলাকার বাসিন্দা পুষ্প ত্রিপুরা জানান, সাজেকের ৭নং ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়ায় একই পরিবারের শুল্ক মহন ত্রিপুরা (৫৫) পুস্প ত্রিপুরা( ২৭) মনিকা ত্রিপুরা তিনজনই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছে। তিনি আরো জানান, বাঘাইছড়ি উপজেলায় প্রতিনিয়ত মশার প্রজনন বেড়েছে। কারণ, এবছর টানা বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গর্তের ভিতরে পানি জমে থাকে। ফলে মশার প্রজনন বৃদ্ধি করতে সুবিধা হয়। সাজেকের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হীরা নন্দ্র ত্রিপুরা জানান, এর আগে সাজেকে মহামারী আকারে ডায়রিয়া এবং হাম (পোলিও) দেখা দিয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় হেলিকপ্টারে করে নিয়ে গিয়ে অনেক মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জানান, সরকারি এবং বেসরকারী হিসাবের চেয়ে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি হবে। কারণ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়া রোগীরা রক্ত পরীক্ষা করতে আসে না। জ্বরের লক্ষণ দেখে স্বজনেরা বাজারে এসে ফার্মেসি থেকে ঔষধ নিয়ে যায়। এবং তারা মশারি ব্যবহার না করার কারনে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদে নিয়ে জরুরি সভা করে জনসচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ সহ নিজে কাজ করে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান। বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইফেতেকার আহমদ জানান, গত বছরের তুলনায় এই বছরে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত দশ হাজার রোগীর রক্ত পরিক্ষা করে ৬৭ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে জুন মাসেই ম্যালেরিয়া পজিটিভ আসে ৪৯ জনের। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুন মাসে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ২৯জন। তবে দুর্গম সাজেক ইউনিয়নকে ম্যালেরিয়ার রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে । গত ২০১৯ সালের ২৮ হাজার রোগী রক্ত পরিক্ষা করে ১৩০৬জনের পজিটিভ আসে এবং গত বছর ২০২০ সালে ২৮ হাজার ৬৬৭ জন রোগীর রক্ত পরিক্ষা করে ২৮৯জনই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছে। তবে এটি বেসরকারী এনজিও সংস্থা ব্রাকের হিসাব মতে। তিনি আরো জানান, সাজেকে আমাদের কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক করার পরিকল্পনা আছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে সাজেকের জনগনকে খুব সহজে তাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যাবে। তবে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ইতিমধ্যে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের রামু সহ ম্যালেরিয়া প্রবণ জেলাগুলোতে ‘মাইক্রো প্ল্যান’ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে সরাকারের ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা শুণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: