কারখানায় শিশু শ্রমিক নিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি খেলাঘরের

প্রকাশিত: ১৬ জুলাই ২০২১, ০৭:০০ পিএম
দেশে প্রচলিত ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে কারাখানায় শিশু শ্রমিক নিয়োগ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত না করায় নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে সেজান কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ে অধিকাংশ শিশু সহ ৫২ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকা-। এর দায় কারখানা কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে কল কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় কোন ভাবেই এড়াতে পারে। যাদের অবহেলা, উদাসীনতায় কোমলমতি শিশু সহ ৫২ শ্রমিকের প্রাণ গেছে তদন্ত শেষে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানালো জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে এ দাবি জানান সংগঠকরা। সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, দেশের সকল কারখানায় শিশু শ্রমিক চিহ্নিত করতে শিশু সংগঠন হিসেবে খেলাঘরে প্রতিনিধি রেখে সরকারী পর্যায়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করতে হবে। আইন অমান্য করে যেসব কারখানায় শিশু শ্রমিক পাওয়া যাবে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সেসব কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বক্তারা বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে গ্রামাঞ্চলের শিশুরা সংসারের অভাব মেটাতে অল্প বয়সে কর্মক্ষেত্রে নিজেদের যুক্ত করছে। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ। তারা অল্প বেতনে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় শিশু শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে বেশি কাজ করাচ্ছে। অথচ আইন অনুযায়ি ১৮ বছরের নীচে সবাই শিশু। তাদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া আইনত দ-নীয় অপরাধ। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) কনভেশন, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সদন অনুযায়ি কর্মক্ষেত্রে শিশুদের বয়স নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু দেশের বাস্তবতা হলো কেউ আইন মানে না। সরকারের পক্ষ থেকে কারখানা গুলোতে শিশু শ্রমিক নিয়োগ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও চোখে পড়ে না। এমন বাস্তবতায় শিশুদের আলোকিত ভবিষ্যত নিশ্চিত করা ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যে কোন মূল্যে কারখানা গুলোতে শিশু শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেয়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ি সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। খেলাঘর নেতৃবৃন্দ দেশের অধিকাংশ কারখানাকে শ্রমিকের মৃত্যুফাঁদ উল্লেখ করে বলেছেন, অগ্নিকান্ডে, ভবন ভেঙে শ্রমিক হত্যার পর যথাযথ বিচার না হওয়ায় এ ধরণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। নেতৃবৃন্দ সেজান কারখানায় অগ্নিকা-ের ঘটনায় শুধু মালিককে নয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরের প্রধানদের গ্রেফতার, বিচার ও নিহত-আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দাবী করেছেন। তারা বলেন, সরকারের দায়িত্বহীনতা, কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত না করায় এ ধরণের কারখানা গড়ে উঠার সুযোগ পায়। ফলে দুর্ঘটনার নামে হত্যাকা- ঘটেই চলেছে। চোখের সামনে ঝড়ে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। খালি হচ্ছে মায়ের বুক। পথে বসছে বহু পরিবার। নেতৃবৃন্দ বলেন, সেজান কারখানায় যারা পুড়ে কয়লা হলো, তাদের অধিকাংশ শিশু-কিশোর। যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। চোখের সামনে বছরের পর বছর একটি কারখানা চললো নিরাপদ কর্মপরিবেশ ছাড়াই। সেখানে শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। অথচ দেখার কেউ ছিল না। এটা হতে পারে না। কাদের গাফিলতিতে এমন একটি কারখানা বছরের পর বছর নিরাপদে কাজ চালিয়ে গেছে, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে। মানববন্ধনে খেলাঘর সংগঠকরা, বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ, কলকারখান প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে সক্রিয় করা, কারখানায় শ্রম আইন বাস্তবায়ন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কারখানা নিশ্চিত করা, আহতদের চিকিৎসা সহ নিহতদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান। মানববন্ধনে খেলাঘরের সভাপতিম-লীর সদস্য কামাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, আবদুল মতিন ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা, শফিকুর রহমান শহীদ, হান্নান চৌধুরী, সাংবাদিক রাজন ভট্টাচার্য,নসরু কামাল খান, আশরাফিয়া আলী আহমেদ নান্তু, শামীম আহমেদ, সুজন মজুমদার, জিতু জলিল প্রমুখ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: