নার্সারিতে স্বাবলম্বী খলিল মোল্লা

প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২১, ১০:৩৯ পিএম
শামীম হোসেন সামন, দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) থেকে: নার্সারি করে সফল হয়েছেন ঢাকার নবাবগঞ্জের খলিল মোল্লা। মাত্র সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে নার্সারি করার স্বপ্ন দেখেন খলিল মোল্লা। পড়াশোনার পাশাপাশি ই শুরু করেন গাছের চারা রোপণ। বাড়ির আঙিনায় নিয়মিত বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছ রোপণ করে স্বল্প সময়ে বিক্রি করেন। ২০০১ সালে ৩০ শতাংশ জমিতে মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন নার্সারি। প্রথমে মেহগনি, আকাশি ও আম গাছ রোপণ করে। কয়েক বছরের মধ্যে গাছের গুনগত মান ভালো হওয়ায় অনেকেই আসেন তার বাগান দেখতে। শুরুটা শখের বসে হলেও এক সময় আয়ের উৎসও হয় এই নার্সারি। নার্সারিতে ফল গাছের পাশাপাশি আছে বিভিন্ন ফুল গাছ ও ঔষধি গাছ। একসময় নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের দীর্ঘগ্রাম নিজ গ্রামেই ছোট পরিসরে গাছের চারা রোপন ও বিক্রি শুরু করেন। ধীরে ধীরে চারা বিক্রি বাড়তে থাকে। মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই লাভের মুখ দেখতে পান তিনি। সফলতার হাতছানিতেই নার্সারির প্রতি আগ্রহ বাড়ে। বর্তমানে ৭৫ শতাংশ জমিতেই বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা নিয়ে উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের মাদলা গ্রামে গড়ে তুলেছেন নার্সারি। ছোটবেলা থেকেই নার্সারি করার স্বপ্ন একসময় পূরণ হয়েও যেন বন্যায় সব স্বপ্নই ভেসে যায়। ২০০৭ সালে কয়েক দফায় বন্যায় ব্যাপক পানিতে নার্সারির প্রায় বেশির ভাগ গাছই তালিয়ে যায়। সব গাছ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এক সময় সব কিছু শূন্য হয়ে যায়। অবশিষ্ট বলতেই কিছু নেই। এক টুকরো জমি ই যেন এখন ভরসা। সবুজ বাগানে পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নের চাদরে। তবুও স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়নি খলিল মোল্লার। আবারও শুরু করেন চারা গাছ রোপণ। স্বপ্ন দেখেন নতুন করে নার্সারি করার। এবার বাণ্যিজ্যিকভাবে শুরু করেন। পরিবারের অভাব অনটন থাকা সত্ত্বেও গাছের প্রতি ভালবাসা থেকেই আবার ঘুরে দাড়ান। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই আবার সফলতার মুখ দেখতে পান। এবার স্বপ্ন যেন সত্যি সত্যি পূরণ হয়েছে। খলিল মোল্লা জানান, বর্তমানে ৭৫ শতাংশ জমিতে নার্সারি রয়েছে। এবছর এই জায়গায় বিভিন্ন বনজ, ফলদ, ঔষধি ও ফুলের চারা রোপন করেছেন। এর মধ্যে এবছর তিনি তার নার্সারিতে নারিকেল ও সুপারি চারা বিক্রি করেছেন। তার এখানে ভিয়েতনাম ও বার্মার নারিকেল ও সুপারি চারা রয়েছে। এছাড়াও নার্সারিতে প্রায় দেড় শতাধিক প্রজাতির বনজ ও ফলজ গাছ রয়েছে। আমের জাতের মধ্যে সূর্যডিম, হাড়িভাঙ্গা, ল্যাংড়া, আম রুপালী হিম সাগর, গুটি ফজল সহ প্রায় ৩০টি জাতের চারা রয়েছে। ফুলের মধ্যে থাই গোলাপ, রজনীগন্ধা, চায়না টগর, হাছনাহেনা, বকুল, কৃষ্ণচূড়া সহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির চারা রয়েছে। এছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছও। তিনি আরও জানান, জীবিকার তাগিদে এই নার্সারিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। পরিবারের অভাব অনটনেও কখনোই নার্সারির স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়নি। কয়েকবার বন্যার পানিতে গাছের চারা ভেসে গেলেও তার স্বপ্ন কখনোই তাকে পিছনে ফিরতে দেয়নি। স্বপ্নবাজ হওয়ায় বার বার লোকসানের মুখে পড়েও আবারও নতুন করে শুরু করেছেন নার্সারি। গাছের চারা বিক্রি করে চার মেয়ে আর দুই ছেলে নিয়ে অতিকষ্টে দিনাদিপাত করেছেন। ছেলেকেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই নার্সারিতে কর্মসংস্থান হয়েছে আঞ্জুনি নামে এক মধ্যবয়সী মহিলার। তিনিও নার্সারির জন্য ভাগ্যের চাকাটা ঘুরিয়েছেন। নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় যারা নার্সারি করেছেন তাদের নার্সারি নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। তবে লকডাউনের কারনে বর্তমানে পরিদর্শনে যাওয়া হয়না। এছাড়াও নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। বৃক্ষমেলায় তাদের চারা গাছ বিক্রি করারও সুযোগ রয়েছে। পোঁকামাকড় আক্রমণ থেকে মুক্তির জন্য পরমার্শ দিচ্ছি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: