কক্সবাজারে বন্যার পানি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২১, ১০:২৯ পিএম
কক্সবাজারে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। ফলে ৯ উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি। তবে এইসব উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত রয়েছে এখনো। বিভিন্ন এলাকায় পানি বন্দি মানুষ দূর্ভোগের মধ্যে আছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাড়িঘর, মাছের পুকুর, চিংড়ি ঘেরসহ রোপা আমন ধানের ও শাকসবজীর আবাদ। বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বাড়িঘরে ফিরে আসছেন কেউ কেউ। কিন্তু বন্যাকবলিত মানুষের জীবনে দেখা দিয়েছে নতুন দুর্ভোগ। ঘরে এখন বেড়া, মাথার ওপর চাল, খাবার, ওষুধ কিছুই নেই তাদের। গরু-ছাগল, পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল সব ভেসে গেছে। এছাড়া আয়-রোজগার বন্ধ। সব মিলিয়ে বন্যার্তরা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ও সদরের ঝিলংজায় বানভাসিদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার রামু-সদরসহ ৯টি উপজেলার কম-বেশি বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট ও হাট বাজার ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একদিকে মহামারি করোনা ভাইরাস অন্যদিকে বন্যা। বন্যায় কারো ঘরে পানি, কারো দুয়ারে। এমন সময়ে গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও তারা পড়েছেন বিপদে। বন্যা কবলিত এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে অন্যের বাড়ি, উঁচু স্থানে। অনেকের রাত দিন কাটেছে নৌকায়। হাট-বাজার ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। তবে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করে। যদিও মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। নৌকা ছাড়া বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতে পারছেন না। বিপদে আছেন চাকরিজীবীরাও। এছাড়া বন্যায় বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতশত ঘর-বাড়ি। দুর্গতরা জানিয়েছেন–এবারের বন্যায় রোপা আমন ধানের আবাদ ও সবজি ক্ষেত ভেসে গেছে। অনেকের বাড়িঘর পানিতে ডুবে আছে। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়ে কম দামে বেচে দিয়েছেন কেউ কেউ। পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। টিউবওয়েল ডুবে গেছে। আর যেসব টিউবওয়েল জেগেছে সেগুলো দিয়ে পানি ওঠে না। নদী ও খাল-বিলের পানিতে বিভিন্ন আবর্জনা ভাসছে। পানি ফুটিয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে খাওয়ার উপযোগী করার উপায় নেই। বন্যাকবলিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন রোগবালাই। আমাশয়, ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগের সঙ্গে রয়েছে চর্মরোগ। বিদ্যুতের খুঁটির গোড়ার মাটি সরে যাওয়ায় সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। এ কারণে অন্ধকারে আছেন অনেক বানভাসিরা। রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ির সাহাদত হোসেন বলেন, ‘পানি কমতে শুরু করায় ঘরে ফিরেছি। কিন্তু বাড়িতে বসবাসের কোনও উপায় নাই। কয়েকদিন পানিতে ডুবে ঘরের ভিটা কাদা হয়ে গেছে। কয়েকদিনের কড়া রোদেও এই কাদা শুকাবে বলে মনে হয় না। ঘরের খুঁটির গোড়ার মাটি সরে গেছে। বেড়া পানিতে বিলীন। সব নতুন করে বানাতে হবে। কিন্তু হাতে তো কোনও টাকা-পয়সা নাই।’ শাহাদতের মুখে আরও শোনা গেলো, ‘মাঠের ফসল তলিয়ে গেছে। মাছের চাষ করেছিলাম, তাও ভেসে গেছে। হাঁস-মুরগি আগেই বেচে দিয়েছি। আয়ের কোনও পথই খোলা নাই। ঘর-দুয়ার ঠিক করবো কী দিয়ে তা ভেবে পাই না। বন্যার পানি কমলেও রোগবালাই দেখা দেওয়ায় বিপদে আছি। ওষুধপত্র নিতে পারছি না টাকার অভাবে।’ ঝিলংজার চান্দেরপাড়া রাবারড্রাম সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নুরুল আবছার বলেন, ‘মহামারি করোনা ভাইরাসের পর থেকে কাজকর্ম বন্ধ। এখন আবার বন্যা। চারদিকে বিপদ। আয় রোজগার নাই, শুধু খরচ। ঋণ করে সংসারের খরচ চালাচ্ছি। এভাবে কতদিন চলবো। বন্যায় চারদিক তলিয়ে গেছে। মনে হয় ঘরবাড়ি নিয়ে পানির উপর ভেসে আছি। তবে গত গত রাত থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু হয়েছে।’ মুহুরীপাড়ার বাসিন্দা কফিল উদ্দিন বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি। ঘরে-বাইরে সবখানেই শুধু পানি আর পানি। বন্যার কারণে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারছি না। আরও কতদিন এভাবে কষ্ট করে থাকতে হবে কে জানে। বিগত কয়েক বছরে এখানে বন্যায় এত পানি হয়নি।’ একই রকম হতাশা ঝিলংজার মুক্তারকুল এলাকার আব্দুল করিমের কথায়, ‘বন্যার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়িঘর ছেড়ে যাইনি। মাচা করে ছিলাম। পরবর্তী সময়ে মাচা কোনও কাজে আসেনি। ঘরের চাল বরাবর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে উপজেলা সদরে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে এতদিন ছিলাম। শুক্রবার (৩০ জুলাই) ভোর রাত থেকে পানি কমতে শুরু করায় সকালে বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু ঘরে থাকার তো কোনও উপায় নাই। বেশিরভাগ বাড়িতে বিদ্যুৎ নাই। তাছাড়া রোগ-ব্যাধি তো আছেই।’ রোগ-ব্যাধি দেখা দেওয়ার বিষয়টি নজরে আছে বলে জানালে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান। তার দাবি, ‘বিভিন্ন উপজেলা থেকে সামান্য রিপোর্ট পাচ্ছি। তবে রোগবালাই এখনও প্রকট আকার ধারণ করেনি। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’ কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল। তিনি বলেন, ‘বন্যা কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে। ক্ষত্রিগ্রস্ত মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতেরও।’ তিনি আরোও বলেন, ‘ইতোমধ্যে জেলার বন্যা কবলিত মানুষের সহায়তায় ৩০০ মেট্রিক টন চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১৫ লাখ নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বন্যায় এবং পাহাড় ধসে নিহতদের পরিবারকে জনপ্রতি ২৫ হাজার নগদ টাকা দেয়া হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: