ঝিনাইদহের ফুলের রাজ্যে করোনার থাবা, বিপাকে ফুলচাষিরা

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২১, ০৯:৫১ পিএম
দুই বিঘা জমিতে গাঁদা আর এক বিঘা জমিতে লাল গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন কৃষক রাজু। প্রায় অর্ধ-লক্ষাধিক টাকা খরচ করে চাষ করা ক্ষেতে সবে মাত্র ফুল উঠা শুরু করেছে। সপ্তাহে গড় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রিও করছিলেন। কিন্তু করোনাকালী লকডাউনে সব বন্ধ হয়ে গেছে। ফুলচাষী রাজু ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না গ্রামের পূর্বপাড়ার মিয়া বাড়ির ছেলে। ফুলচাষি রাজুর ভাষ্য, করোনার আগে দেশীয় জাতের গোলাপ দুই থেকে তিন টাকা এবং থাই জাতের গোলাপ পাঁচ থেকে সাত টাকায় বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনার কারনে লকডাউনের ফলে সে ফুল ৫০ পয়সা থেকে ২ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া এক বান্ডিল গোলাপ লকডাউনের আগে ঢাকা বা চট্রগ্রামে পাঠাতে ৩০০ টাকা খরচ হত সেখানে এখন প্রায় এক হাজার টাকা খরচ পড়ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ফুল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। যে কারনে গাছের গোলাপ শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে। একই রকম কথা জানালেন কালীগঞ্জ উপজেলার শাহুর ঘিঘাটির গ্রামের ফুলচাষি আনোয়ার হোসেন। লকডাউনের আগে এক ঝোপা ফুল বিক্রি হত ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। সরকার লকডাউন ঘোষনার পর সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফুলের তেমন একটা চাহিদা নেই। ফলে সে ফুল এখন ৪০ তেকে ৮০ টাকা ঝোপা বিক্রি হচ্ছে। তবে এক ঝোপা ফুল তুলতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা খরচ হয়। একই রকম অবস্থা জেলার হাজার হাজার ফুলচাষির। করোনা ভাইরাসের কারনে ৩০ জুন থেকে সারাদেশে চলছে সর্বাত্বক লকডাউন। ফলে দেশের সব ফুলের বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। এবছর ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ১৭৩ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছিল। এরমধ্যে গাঁদা ১১৩ ও রজনী ২৪ হেক্টর বাকি জমিতে অন্যান্য ফুলের চাষ হয়েছে। গেল বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টর। প্রতিবছর সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদর উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। গেল ২০২০ সালের মার্চে দেশের করোনার সংক্রমন ধরা পড়ার পর দেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। ফলে ফুল বিক্রিতে ধ্বস নামায় জেলার ফুলচাষিদের ব্যপক লোকসান হয়েছিল। ফুল বিক্রি করতে না পারায় ফুলক্ষেত গরু ছাগল দিয়ে খাওয়ে দিয়েছিল। করোনার প্রভাব কিছুটা কমে আসার পর আবারো চাষীরা নতুন করে ফুলের চাষ শুরু করে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠার স্বপ্ন নিয়ে সবেমাত্র ফুল বিক্রি শুরু করেছিল। কিন্তু এবারো করোনার কারনে সরকার লকডাউন ঘোষনা করায় সে স্বপ্ন দু:স্বপ্নে পরিনত হয়েছে। প্রতিবছর এ জেলার ফুলচাষিরা বসন্ত বরণ, বিশ^ ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং বাংলা নর্ববর্ষ উদযাপন সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে ফুলের যোগান দিয়ে থাকে। এ সময়ে ভালো লাভ পান কৃষকরা। কিন্তু গেল মৌসুম থেকে অব্যহত বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। বিপদে পড়েছে ফুলকর্মীরা যারা ফুল তোলা ও গাথার কাজ করে সংসারের খরচ যোগান দিত। কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষি লিটন হোসেন জানান, এবছর আমার দুই বিঘা জমিতে লাল ও হলুদ গোলাপের চাষ ছিল। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার গোলাপ ও দুই হাজার জারবেরা ফুল বিক্রি হত। কিন্তু করোনার কারনে কোন বেচা বিক্রি নেই। ক’দিন আগেও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বালিয়াডাঙ্গা, লাউতলা ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্টান্ড দুপুর গড়ালে ফুলে ফুলে ভরে যেত। এসব বাজারে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতেন। ফুলচাষি, ব্যাপরী আর ফুল কর্মীদের হাকডাকে মুখরিত থাকতো। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তুপ করে সাজানো হতো ফুল। ঢাকা-চট্রগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ও ভ্যান ভরে ফুল যেত। সেখানে এখন আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। একই রকম অবস্থা জেলার বড় ফুলের হাট গান্না বাজারেও। সদর উপজেলার গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জানালেন, ফুলের ভরা মৌসুমে করোনার হানায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ ফুলের বেচাকেনা হবে তাও অনিশ্চিত। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলী জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে ফুলচাষিরা বিপদে পড়েছে। তারা ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। অনেকে ফুল তুলে দিচ্ছেন। ফুলচাষ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখলেও দ্রুত পঁচনশীল হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: