মারা গেলেন রাষ্ট্রপতির শিক্ষক আবদুল জব্বার মাস্টার

প্রকাশিত: ০৮ আগষ্ট ২০২১, ০৩:১৬ এএম
কিশোরগঞ্জের নিকলী জি সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক আবদুল জব্বার মাস্টার ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন। শুক্রবার (৬ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে বার্ধক্যের কারণে নিকলীর নিজ বাড়িতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের শিক্ষক। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রেখে গেছেন। আবদুল জব্বার মাস্টার বিভিন্ন সমাজসেবার সাথে যুক্ত ছিলেন। একজন সৎ ও প্রাজ্ঞ মানুষ হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলায় তাঁর খ্যাতি ছিলো। পেশাগত জীবনে শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি সুনামগঞ্জের মহকুমা জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। শনিবার (৭ আগস্ট) দুপুর ২ ঘটিকায় নিকলী কেন্দ্রীয় মসজিদে তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাঁর লাশ নেওয়া হয় জন্মস্থান দামপাড়া গ্রামে। বাদ আছর দামপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে গ্রামের পারিবারিক গোরস্তানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। বঙ্গভবন প্রেস উইং এর এক শোকবার্তায় শিক্ষাবিদ আবদুল জব্বার মাস্টারের রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনাও জানান। আবদুল জব্বার মাস্টার নিকলীর দক্ষিণ দামপাড়া গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৪৭ সালে নিকলী জি সি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে অধ্যায়নরত অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভ’মিকা পালন করেন। সেসময় বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫২ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে আইএ পাশ করেন এবং ১৯৫৬ সালে একই কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেন। পরে ১৯৫৬ সালে নিকলী জি সি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি সুনামগঞ্জে মহকুমা জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন।সেখানে তিন বছর চাকরির পর আবারও জি সি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় ফিরে যান। সেসময় তাঁর প্রচেষ্টায় ভাটি এলাকার এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি জেলার অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠে। ১৯৯৯ সালে তিনি শিক্ষকতা পেশা থেকে স্থায়ীভাবে অবসর নেন। তাঁর অনেক ছাত্র বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মধ্যে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একজন। এছাড়া সরকারের সাবেক সচিব কারার মাহামুদুল হাসান, সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত নূরুল ইসলাম তালুকদার, বিচারপতি মো. আমির হোসেন, মতিয়র রহমান বীর বিক্রম, ইদ্রিস আলীসহ অনেকেই তাঁর ছাত্র ছিলেন।মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। ২৬ মার্চ সারা দেশের মতো নিকলী পোস্ট অফিসে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি বরাবর একটি তারবার্তা যায়। তখনকার পোস্ট অফিসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ওই বার্তাটি আবদুল জব্বার মাস্টারের হাতে তুলে দেন। ২৬ মার্চ বিকালে স্কুলের বারান্দায় তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশে ওই বার্তাটি পড়ে শুনান। পরে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। যুদ্ধের পুরো নয় মাস তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন, খাবার পাঠাতেন এবং দিকনির্দেশনা দিতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারের কিছু উদ্বৃত্ত টাকা আবদুল জব্বার মাস্টারসহ কয়েকজনের হাতে তুলে দেন মতিয়র রহমান বীর বিক্রম। এ টাকা দিয়ে অনগ্রসর নিকলীর জন্য একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন আবদুল জব্বার মাস্টার। ভাষাশহিদ ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মৃতি রক্ষার্থে বিদ্যালয়টির নাম রাখা হয় ‘শহীদ স্মরণিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় আরো অনেকের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ও টাকা সংগ্রহ করেন আবদুল জব্বার মাস্টার।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: