পড়াশোনার বদলে শিশু ছাত্রের চা বিক্রি!

প্রকাশিত: ২২ আগষ্ট ২০২১, ০৯:১৭ পিএম
চা খাবেন, চা। ভাই এক কাপ চা খান না। খুব ভালো চা ভাই। এভাবেই চা খাবেন, চা খাবেন বলে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে চায়ের ফ্লাস্ক নিয়ে ঘুরছে এক শিশু। মায়াভরা শিশুটিকে দেখলেই চা খাওয়ার মন না চাইলেও অনেক দোকানদার শিশুটির কাছ থেকে চা কিনে পান করেন। বলছিলাম, মোস্তাখার মিয়া (১০) এক শিশুর কথা। সে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার স্থানীয় হরিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী। করোনার করাল থাবায় দীর্ঘ ১৮ মাস যাবত দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিম্নআয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা পরিবারের বাড়তি আয়ের আশায় নেমেছেন রোজগারে। মোস্তাখার মিয়াও দিনমজুর বাবাকে সহায়তা করার জন্য হাতে নিয়ে ঘুরছেন চায়ের ফ্লাস্ক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯০-১০০ কাপ চা বিক্রি করে সে। প্রতি কাপ চায়ের দাম ৫ টাকা। এ হিসেবে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৪৫০ টাকা বিক্রি আসে চা থেকে। সারাদিন চা বিক্রি করে সে অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ক্লান্ত শরীরে রাতে আর পড়ালেখায় মন বসে না তার। ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ে পরের দিন চা বিক্রির আশায়। উপজেলার রেলস্টেশন সংলগ্ন ভাড়া বাসায় থাকে মোস্তাখারের পরিবার। সাত সদস্যের পরিবার চলে তার বাবা দুলাল মিয়ার ছোটখাটো ভাঙ্গারি ( পুরাতন মালামাল) ব্যবসায়। মা বেদনা বেগম একজন গৃহিনী। মা বাড়ির কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন কয়েকবার মোস্তাখার কে চা তৈরি করে দেন। মোস্তাখারের বাবা দুলাল মিয়া বলেন, তাদের দেশের বাড়ি শায়েস্তাগঞ্জে। জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা জুড়ীতে বসবাস করছে। জুড়ী বাজারের সিদ্দিক বীজ ঘরের মালিক ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রতিদিনই সে কয়েকবার চায়ের ফ্লাস্ক নিয়ে আমাদের কাছে আসে। চা খাওয়ার জন্য আমাদেরকে অনেক অনুরোধ করেন। তাকে দেখে মায়া লাগে তাই অনেক সময় মন না চাইলেও তার কাছ থেকে চা কিনে আমরা অনেকেই পান করি। মোস্তাখারের বাবা দুলাল মিয়া বলেন, আমি গরীব হলেও ছেলেকে পড়াতে চাই। কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় তাকে এখন চা বিক্রির কাজে দিয়ে রেখেছে। সে চা বিক্রি করা যা আয় করে তা আমাদের পরিবারের অনেক উপকারে আসে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক বলেন, ৫ম শ্রেনির শিক্ষার্থীর চা বিক্রি করা খুবই মর্মান্তিক একটি বিষয়। আমরা খবর নিয়ে তাকে যথাসাধ্য সহায়তা করার চেষ্টা করে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: