নারীদের সর্বনাশ করতেন সুভাষ, অতিষ্ঠ হয়ে খুন করলেন স্ত্রী-ছেলে ও পুত্রবধূ

প্রকাশিত: ২৪ আগষ্ট ২০২১, ০৪:৪৮ এএম
নারীদের দিকে ছিল তার লোলুপ দৃষ্টি। সুভাষের বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়েছেন বহু নারী। যাদের মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী-আত্মীয় স্বজন। স্বামী ও পিতার এরকম কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে খুন করলেন স্ত্রী ও পুত্র মিলে। এমনই এক ঘটনার সুনামগঞ্জের মধ্যনগর থানা পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস নির্মম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন পূর্বক হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। শনিবার দুপুরে মধ্যনগর থানা পুলিশ এ হত্যার রহস্য প্রকাশ করে। গত বুধবার রাত আড়াইটার দিকে মনাই নদী থেকে সুভাষ চন্দ্র সরকারের লাশ উদ্ধার করে মধ্যনগর থানা পুলিশ। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের ফারুকনগর গ্রামের উত্তরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, ষাটোর্ধ সুভাষ রাতে বাড়ির সামনে নদীর ঘাটে তাদের নৌকায় ঘুমায়। কিন্তু হঠাৎ এক রাতে তাকে নৌকায় পাওয়া যাচ্ছিলো না। সুভাষের ছেলে সুজিত চন্দ্র সরকার প্রতিবেশীদের নিয়ে তাকে খুঁজতে বের হয়। নৌকার অদূরে নদীর পানিতে গলায় ও পায়ে রশি বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় সুভাষের লাশ। বাবার এমন ভয়নক পরিণতিতে সুজিতের কান্না ও চিৎকার শুনে ছুটে আসে পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ স্থানীয়রা। সুজিত সাথে সাথে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুভাষের লাশ উদ্ধার করে। পরদিন সুভাষের মেয়ে নীভা রানী তালুকদার মামলা করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুজিতসহ সুজিতের স্ত্রী খেলা রানী সরকার ও তার মা আরতী রানী সরকারকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ সুভাষকে হত্যার দায় স্বীকার করে। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। আর এতেই বেরিয়ে আসে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য। মধ্যনগর থানার ওসি নির্মল দেব জানান, বিকৃত মানসিকতার অধিকারী ও নারী লোভী ব্যক্তি সুভাষ শারীরিকভাবে ছিল শক্তপোক্ত। সুযোগ পেলেই সে যেকোনো নারীকে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ করতো। যা তার পুত্রবধূ তাদের জানিয়েছে। সুভাষের বিকৃত যৌনাচার থেকে রেহাই পায়নি পুত্রবধূ, ভাগনিসহ নারী প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা। বিষয়টি নিয়ে সুভাষের পরিবারের লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। দিনদিন সুভাষের বিকৃত আচরণ বেড়েই চলেছিল। পরিবারের লোকজন চেষ্টা করেও তাকে এ কাজ থেকে ফেরাতে পারেনি। ফলে তারা এসব নীরবে সহ্য করে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় তারা কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না। লোকলজ্জায় কাউকে কিছু বলতেও পারছিল না তারা। পরে বাধ্য হয়ে সুভাষের স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। তিনজনের জবানবন্দি অনুযায়ী- সুভাষ বাড়ির পূর্বপাশে নদীর ঘাটে প্রায় রাতেই নৌকায় ঘুমায়। ১৮ আগস্ট সন্ধ্যায় স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ সুভাষকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার উপকরণ হিসেবে নিজেদের গোয়াল ঘর থেকে সংগ্রহ করা হয় রশি। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা সুভাষের পা বাঁধে এবং শ্বাসরোধে করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। যাতে কেউ সন্দেহ না করে সেজন্য সুভাষের ছেলে প্রতিবেশীদের জানায়, তার বাবাকে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর পেয়ে রাত আড়াইটার ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকারের উপস্থিতিতে সুভাষের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হলেও পুলিশ কৌশলে সুভাষের পরিবারের লোকজন, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। পরদিন সুভাষের স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করলে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। শুক্রবার সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: