১৬ হাজার গ্রাহকের সাথে প্রতারণা, ৩০০ কোটি টাকা হাতানো চক্রের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:৩৫ এএম
যশোরের ১৬ হাজার গ্রাহককে পথে বসিয়ে ৩শ’ কোটি টাকা হাতানো চক্রের বিরুদ্ধে করা দুটি মামলায় প্রতিবেদন দাখিল করেছে পিবিআই। এহসান সংস্থার চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের ফটিক ছড়ির মুফতি আবু তাহের নদভীসহ ২৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যশোরের বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন মুফতি ও মাওলানা শ্রেণির মানুষকে মৌখিকভাবে মাঠকর্মী পদ দিয়ে মাঠে নামিয়ে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে এ অঞ্চলের মানুষকে ঠকিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এহসান ইসলামী মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি ও এহসান রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভলপমেন্ট নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলে প্রতারণা। ১০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে পিবিআই আরো নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। মামলার নাম্বার ১৪০২ এবং মামলা ১৩৯৮ এর প্রতিবেদনটি দাখিল করেছেন পুলিশ পরিদর্শক একেএম ফসিহুর রহমান। ২০১৪ সালে যশোরের হতভাগ্য গ্রাহকদের প্রায় ৩শ’২২ কোটি টাকা হাতিয়ে গা ঢাকা দেয় এহসান এস এর প্রতারক চক্র। ভুক্তভোগীদের মধ্যে শ’ শ’ গ্রাহক ও লগ্নিকারী নানা রোগে ও টাকার শোকে এখন শয্যাশায়ী। কেউবা ক্যান্সারে আক্রান্ত ও কেউবা প্যারালাইজডে ভুগছেন। কেউবা দিনের পর দিন আহজারি করে চলেছেন ওই টাকা ফেরত পাওয়ার আসায়। সব মিলিয়ে চোখের জলে সময় কাটছে অধিকাংশের। মামলা চলছে, তদন্ত হচ্ছে। প্রতারকদের প্রতি নানা অভিশাপ দিয়ে আল্লাহর উপর বিচার ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে। আবার শেষ সম্বল বিক্রি করে দেয়া টাকা ফেরত পাওয়ার আসায় মামলাও করেন অনেকে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলার ভেকুটিয়া গ্রাামের আব্দুল মতিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম ও এক নারীর দায়ের করা মামলায় আদালতে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হচ্ছেন, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নিশ্চিন্তপুরের মুফতি আবু তাহের নদভী, প্রধান নির্বাহী ব্যবস্থাপক মাগুরা সদর উপজেলার সাজিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা কাজী রবিউল ইসলাম, ব্যবস্থাপক মাগুরা সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা জুনায়েদ আলী, পরিচালক মাগুরা সদর উপজেলার রাউতলা গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান, পরিচালক কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার লক্ষীধরদিয়াড় গ্রামের বাসিন্দা মঈন উদ্দিন, পরিচালক খুলনার লবনচরা হরিণটানা রিয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা মুফতি গোলাম রহমান, পরিচালক গাজীপুরের টঙ্গী উপজেলার চড়মাটিন এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মতিন, মহাপরিচালক (প্রশাসন) সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার খুবদিপুর এলাকার বাসিন্দা আমিনুল হক, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লিচুবাগান জামালকান রোডের বাসিন্দা কলিমুল্লাহ কলি, পরিচালক খুলনার খানজাহান আলীর শিরোমনি এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান, যশোর সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের বাসিন্দা মুফতি ইউনুস আহম্মেদ, খুলনার পাইকগাছা উপজেলার মরল এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম, মাগুরা সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব আলী, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধান্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সামসুজ্জামান টিটু, ব্যবস্থাপক (যশোর শাখা) মাগুরা সদর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আতাউল্লাহ, কেশবপুর উপজেলার বেতিখোলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হালিম, মাঠকর্মী যশোরের কারবালারোডের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম (সোনামিয়া), উপশহর এ-ব্ল¬ক এলাকার বাসিন্দা শামসুর রহমান, সমন্বয়কারী সেক্রেটারি যশোরের শহরতলী শেখহাটি জামরুলতলা এলাকার বাসিন্দা বাবর আলী, একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক, শার্শা উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা এস এম সেলিম উল চৌধুরী, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার সুন্দরকাটি গ্রামের বাসিন্দা মোকসেদ আলী, যশোর সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের বাসিন্দা মুফতি ফুরকান আহমেদ, যশোর শহরের পুলিশ লাইনস টালিখোলা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী ও উপশহরের বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান। প্রসঙ্গত প্রকাশ, আসামিরা এহসান এস বাংলাদেশের নামে ধর্মের বুলি আওড়িয়ে ২০০৮ সালে প্রতারণার যাত্রা শুরু করে ইসলামী মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটি এবং এহসান ইসলামী রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। যশোরের কাপুড়িয়া পট্টিতে এর শাখা খুলে ২০১২ সালে প্রতারণায় লিপ্ত হয় সংঘবদ্ধ চক্র। মূলত এহসান এস বাংলাদেশ, এহসান রিয়েল এস্টেট এবং এহসান মাল্টিপারপাস শরিয়া মোতাবেক সুদ বিহীন ব্যবসার ধুয়ো তুলে মাসে এক লাখে ১৬শ’ টাকা থেকে ১৮শ’ টাকা মুনাফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা জমা নিতে থাকে। এক পর্যায়ে বিনিয়োগের টাকা ফেরত না দিয়ে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে পালিয়ে যায়। তাদের অপতৎপরতায় এখন লগ্নিকারীরা কঠিন সময় পার করছেন। এই মামলার বাদী শফিকুল ইসলামের মত যশোরের ১৬ হাজার গ্রাহক টাকা ফেরত পেতে সব মহলে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আধো আধো করে অনেক গ্রাহক জানিয়েছেন, প্রলোভনে পড়ে সর্বস্ব তুলে দিয়েছিলেন ওদের হাতে। এখন তারা ওষুধ কিনতে পারছেন না।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: