চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হেনস্থার শিকার ২ ছাত্রী

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৪৫ পিএম
রবিউল হোসেন রবি, চট্টগ্রাম থেকে: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্যাম্পাসে হেনস্থার শিকার হয়েছেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই ছাত্রী। চার যুবক তাদের পথরোধ করে হেনস্থা করেছে বলে অভিযোগ ওই দুই ছাত্রীর। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় বাসায় যাওয়ার পথে চবির কেন্দ্রিয় মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, হেনস্থাকারীরা সবাই ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। তাদের একজন আরবি ডিপার্টমেন্টের এবং একজন ফিলোসফির। তবে বাকী দুইজনের ডিপার্টমেন্ট জানা যায়নি। ঘটনার পরপরই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন হেনস্থার শিকার ফারহানা আয়ুশি নামে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। পাঠকদের জন্যে ওই ছাত্রীর পোস্টটি হবহু তুলে ধরা হলো-‘একটা কাজ শেষ করে শহর থেকে আসছিলাম। বৃষ্টি থাকায় আর গাড়ি না পাওয়ার কারণে শহর থেকে আসতে দেরী হয়ে গেলো। তার উপর এক নাম্বার গেইটে সিএনজি পেতেও সমস্যা হওয়ায় জিরো পয়েন্ট যখন পৌছালাম তখন প্রায় ১১.৪০ বাজে। আর সাথে আমার ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র আপুও ছিলো। আপু ১৬-১৭ আর আমি ১৭-১৮ সেশনের। জিরো পয়েন্ট পার হতেই প্রক্টর স্যারের সাথে দেখা, স্যার আমাদেরকে জিজ্ঞেস করায় নিজেদের সমস্যাগুলো বললাম, স্যারও বুঝতে পেরে আমরা একা বাসায় যেতে পারবো কিনা জিজ্ঞেস করলেন আর সাবধানে যেতে বলে বিদায় নিলেন। আমরা স্যারের সাথে আলাপ করে ২ নাম্বার গেইটের দিকে হাঁটা ধরলাম।’ ‘হাঁটতে হাঁটতে যখন সোহরাওয়ার্দী মোড় পার হয়ে সেন্ট্রাল মসজিদের কাছাকাছি গিয়েছি, হুট করে পেছন থেকে ডাক দিলো কে জানি। ক্যাম্পাসে রাতের বেলা হাঁটতে গিয়ে মেয়েরা প্রায়ই এরকম উড়ো ডাক শুনে। তাই কানে না নিয়ে আমরা নিজেদের মতো হাঁটছিলাম। আমাদের সাড়া না পেয়ে এবার কেউ একজন জোরে থ্রেট দেওয়ার ভঙ্গিতে ডেকে বললো, "এই দাঁড়ান, ডাকছি না?" তিনি আরও লিখেন, ‘আমরা দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরলাম আর দেখলাম যে ৩টা ছেলে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে ততক্ষণে ৩টা ছেলেই এসে আমাদের রাস্তা আটকে দাঁড়ালো আর নানারকম প্রশ্ন করা শুরু করলো। তারা আমাদের সেশন, পরিচয়, ওদের ফোন বের করে টাইম দেখিয়ে এতো রাতে এখানে কেন, কি করছি আরো নানান কথা বলতে থাকলো। প্রথমে থতমত খেয়ে গেলেও সামলে নিলাম। বললাম যে আমরা ওদেরকে বলতে বাধ্য নই, একটু আগে প্রক্টর স্যারের সাথে দেখা হয়েছে, স্যার জানেন। তারপর আমাদের রাস্তা ছেড়ে দিতে বললাম। ওরা আমাদের রাস্তা না ছেড়ে আটকে রাখলো, আরও বেশি করে জেরা আর থ্রেট দেয়া শুরু করলো।’ ‘রাস্তা ছাড়ছে না দেখে বাধ্য হয়ে আমাদের সেশন বললাম। আমাদের সেশন বলে ওদের সেশন জিজ্ঞেস করতেই আরো রেগে গেলো, আমাদের আজেবাজে কথা বলা শুরু করলো। ওদের এরকম আজেবাজে কথাবার্তা শুনে আমরা বললাম যে রাস্তা না ছাড়লে প্রক্টর স্যারকে কল দিবো! তখন ওদের একজন বলে উঠলো যে প্রক্টর কে যে ওদেরকে প্রক্টরের ভয় দেখাচ্ছি, কাকে ফোন দিবো দিতে ওরাও দেখবে কি করতে পারি। ওদের সাথে তখন আরেকটা ছেলে এসে যোগ দিলো। এবার ৪জন মিলে আমাদেরকে শাসাতে শুরু করলো।’ ওই ছাত্রী অভিযোগ করে আরও লেখেন, ‘আমরাও তর্ক করছিলাম, একপর্যায়ে ওরা সবাই প্রায় তেড়ে আসছিলো আমাদের দিকে। তাদের মধ্যে একজন ছিলো লুংগী পড়া। সে লুংগীটা হাটুর উপরে তুলে বারবার আমাদের গায়ে পড়ার জন্যে তেড়ে আসছিলো। তখন আমরা চিৎকার করে কথা বলা শুরু করেছিলাম রাগে আর ভয়ে। ঠিক তখনই দুই নাম্বার গেইটের দিক থেকে একটা গাড়ি আসতে দেখি, কাছাকাছি আসতেই বুঝতে পারলাম এটা প্রক্টর স্যারেরই গাড়ি। আমরা চিৎকার করে ডেকে হাত নেড়ে স্যারের গাড়ি থামাই।’ ‘স্যারের গাড়ি থামতেই ওরা দৌড়ানো শুরু করে, স্যারদের মধ্যে একজন দৌড়ে গিয়ে ওদেট একজনকে ধরে ফেললেন। স্যারের সাথে আরো ৬-৭ জন স্যার ছিলেন। তারপর ছেলেটাকে জেরা করে জানা গেলো ওরা ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। একজন আরবী ডিপার্টমেন্টের, একজন ফিলোসফির আর বাকিদেরটা জানি না। প্রক্টর স্যার ছেলেটার আইডি আর নাম লিখে নিয়ে গেছেন। আমাদেরকেও আশ্বাস দিলেন যে এটার সঠিক বিচার ওনারা করবেন, আমরা যেনো লিখিত অভিযোগ দিই ওদের নামে।’ ভার্সিটির ক্যম্পাসকে নিরাপদ মনে করছেন না জানিয়ে তিনি লিখেন, ‘নিজের ভার্সিটিতে কখনোই সেইফ ফিল করিনি, তবুও বেশ কয়েকটা বছর কেটে যাওয়াতে ভাবতাম হয়তো এবার আর এরকম কিছু ফেইস করতে হবে না । আমি জানিনা ১৯-২০ সেশনের কয়েকটা ছেলের এতো সাহস কিভাবে হয় যে পরিচয় জানার পরেও নিজেদের চেয়ে ৩-৪ বছরের সিনিয়রদের এভাবে পথ আটকে হ্যারাস করতে পারে। ইমার্জেন্সি ইস্যুতে যদি ক্যাম্পাসে ফিরতে ১২টাও বেজে যায় তবে কি সেটা এখন পাপ হিসেবে গণ্য হবে যে তার মাশুল আমাদের থেকে ৩-৪ বছরের ছোট ছেলেদের কাছে হ্যারাসড হওয়ার মাধ্যমে দিতে হবে?’ ‘অবাক হচ্ছি এই ভেবে যে ভার্সিটি সম্পর্কে এদের ধারণা কতোটা নিচু হলে এরা ঠিক করে ক্যাম্পাসের ছাত্র হয়ে ওঠার আগেই রাস্তায় হেঁটে হেঁটে এরকম জানোয়ারের মতো আচরণ করে বেড়াচ্ছে। আজকে হয়তো স্যারেরা ঠিক সময়ে এসেছিলেন বলে আরও খারাপ কিছু হওয়া থেকে বেঁচে গেছি কিন্তু কাল কি হবে? আমাদের জায়গায় তো অন্য কোনো মেয়েও থাকতে পারতো। নিজের ক্যাম্পাসে একটু নিরাপদে থাকতে চাওয়া কি খুব বড় চাওয়া?’ এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‌‘বৃহস্পতিবার রাতে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আমরা গাড়ি নিয়ে ঘুরছিলাম। রাত ১১টার দিকে কেন্দ্রিয় মসজিদের গেটের সামনে দুইজন ছাত্রী আমাদের গাড়ি থামিয়ে তাদেরকে হেনস্থার কথা বলেন। আমরা গাড়ি থামিয়ে অভিযুক্ত ছেলেদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। তবে এর মধ্যে একজনকে আমরা দৌঁড়ে ধরে ফেলি। তার আইডি কার্ড ও মুঠোফোন জব্দ করেছি।’ ‘রবিবার দেখা করতে বলেছি। তার মাধ্যমে অন্য অভিযুক্তের পরিচয় জেনে আমরা ব্যবস্থা নিব।’— যোগ করেন তিনি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: