ইভ্যালির গ্রাহকেরা যেভাবে টাকা ফেরত পেতে পারেন

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:১১ পিএম
প্রতারণার মাধ্যমে গ্রহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী (চেয়ারম্যান) শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। পণ্য কিনলেই অর্থ ফেরতের অস্বাভাবিক ‘ক্যাশব্যাক’ অফার দিয়ে ব্যবসা করছে ই-ভ্যালি। ১০০ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দেওয়াও হচ্ছে। এই অফারে হাজার হাজার গ্রাহক আকৃষ্ট হয়েছে। লাভবানও হয়েছেন কেউ, বেশির ভাগই আছেন লাভবান হওয়ার অপেক্ষায়। তবে এরই মধ্যে বিপাকে পড়েছেন ইভ্যালির গ্রাহকরা। রিমান্ডের প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানান, তিনি কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি, প্রতারণার প্রশ্নই ওঠে না। গ্রাহক জেনে বুঝেই ইভ্যালিতে পণ্য অর্ডার করেছে, যারা ডেলিভারি পায়নি ভবিষ্যতে টাকা পেয়ে যাবে। এখানে প্রতারণার কোনো বিষয় ছিল না। রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রিমান্ডে রাসেল দাবি করেছেন, ইভ্যালির প্রতিটি পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপনের সঙ্গে পণ্য ডেলিভারির বিষয়ে শর্ত দেওয়া ছিল। এর মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিল ‘স্টক থাকা পর্যন্ত’। অনেক সময় স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেননি। যাদের পণ্য ডেলিভারি দিতে পারেননি তাদেরকে টাকা রিফান্ড (ফেরত) করেছেন। অনেকের রিফান্ড প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও প্রতিশ্রুত পণ্য সময়মত না দেওয়ার আরেক কারণ হিসেবে রাসেল জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি নির্দেশনা দিয়েছে, কোনো গ্রাহক পণ্য অর্ডার করলে তাকে ওই পণ্যের ১০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করতে হয়। বাকি ৯০ শতাংশ টাকা গ্রাহক পণ্য পাওয়ার পর প্রদান করবেন। আমরা অনেকের কাছ থেকে অর্ডার নিয়েছি, সাপ্লাইয়ারকে অর্ডারের বিষয়ে জানিয়েছি। বেশ কয়েকজন সাপ্লাইয়ার ইভ্যালিকে ফুল পেমেন্ট ছাড়া পণ্য দিতে চায়নি। তাই ডেলিভারিগুলো আটকে গেছে। এছাড়াও বেশ কয়েকজন সেলার (সাপ্লাইয়ার) বলেছেন করোনাকালীন সময়ে অনেক পণ্যের ‘উৎপাদন বন্ধ ছিল’, তাই তারা ইভ্যালিকে পণ্য দেয়নি। ফলে গ্রাহকদেরকে সব পণ্য ডেলিভারি দেওয়া যায়নি। গ্রাহকদের টাকা আটকানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রাসেলের দাবি, জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মোট তিন লাখ অর্ডার ডেলিভারি করেছে ইভ্যালি। যাদেরকে পণ্য দেয়া যায়নি তাদের টাকা রিফান্ড করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা (১০% অ্যাডভান্স) এবং ইভ্যালিতে কেনাকাটায় একের পর এক ব্যাংক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ইভ্যালির নগদ জমার পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে রিফান্ড প্রক্রিয়ার গতি ধীর হয়ে যায়। এদিকে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে গ্রেপ্তারের পর তাদের মুক্তির দাবিতে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করা গ্রাহকরা বিক্ষোভ করেছেন। তারা বলছেন, তাদের বিনিয়োগ করা টাকা যদি তারা না পান তাহলে তারা গণ-আত্মহত্যা করবেন। তাদের দাবী, ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করে এখন তারা নিঃস্ব। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে ইভ্যালির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তিনটি পথ খোলা আছে। এর একটি হচ্ছে, ক্ষতিপূরণ চেয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের, দ্বিতীয়টি, দাবি আদায়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ দিতে হবে। তৃতীয়, প্রতারণার জন্য বাংলাদেশ প্রতিযোগী কমিশনে অভিযোগ দিতে হবে গ্রাহকদের। একই সঙ্গে তিনটি পথই তাদের অনুসরণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, ই-কমার্স সংক্রান্ত আলাদা কোনও আইন না থাকায় বিদ্যমান আইনে তাদের সাজা এবং এই তিন কৌশলে টাকা ফেরত পাওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আদালতে গ্রাহকদের টাকা ফেরত চেয়ে আবেদন করতে হবে। আদালতের নজরে বিষয়টি আনলে আদালত হয়তো বিবেচনায় নেবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কেউ প্রতারিত হলে সে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করতে পারে। তবে এর আগে একটি আইন করা দরকার। কারণ ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণে আলাদা কোনও আইন দেশে নেই। বাংলাদেশ প্রতিযোগী কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, চাইলেই কোম্পানিগুলো বাজারে অস্বাভাবিক কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারে না। প্রতিযোগী আইনে এ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ থাকায় তারা ইভ্যালির বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও গ্রাহকের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে নতুন করে আইনের আওতায় আনা যাবে। উল্লেখ্য। ইভ্যালির ‘সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার। এর আগে ডেসটিনি, ইউনিপে-টু, যুবক নামে প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় ফাঁদে আটকা পড়েন হাজার হাজার গ্রাহক। এখনো গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত পাননি। টাকা না পেয়ে অনেক গ্রাহক পথে বসে গেছেন। এসব ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষ এবং ব্যক্তির পক্ষ থেকেও ফৌজদারি মামলা হয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: