এম্বুলেন্সেই নিভে গেল মেধাবী ছাত্রী রোদেলার জীবন প্রদীপ

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:০৪ পিএম
ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার আগেই নিভে গেল মানিকগঞ্জ এস কে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী সুবর্ণা ইসলাম রোদেলার জীবন প্রদীপ। করোনা উপসর্গ নিয়ে বুধবার বিকালে মানিকগঞ্জ থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে এম্বুলেন্সেই মারা যায় রোদেলা। শিক্ষা-সাংস্কৃতিতে তুখোড় মেধাবী রোদেলার অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার ও বিদ্যালয়ের সহপাঠীদের মধ্যে। রোদেলা মানিকগঞ্জ জেলা শহরের বেউথা এলাকার বাসিন্দা ও এনজিও কর্মকর্তা বশির উদ্দিন মোল্লার মেয়ে। রাতেই বেওথা কবরস্থানে রোদেলাকে সমাহিত করা হয়েছে। রোদেলার খালু মো. নাসিম উদ্দিন বলেন, গেল দুই-তিনদিন রোদেলার একটু জ্বর, ঠাণ্ডা ও বমি ছিল। এ অবস্থায় শহরের ইউনাইটেড ক্লিনিকে নাক কান গলার চিকিৎসক ডা. এনামুল হক খানের কাছে নিয়ে যাই। বুধবার দুপুরের পর হঠাৎ গলাব্যথা, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত ইসলামী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যবস্থা সন্তোষজনক না থাকায় নেয়া হয় মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রোদেলার অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে তাকে দ্রুত এইচআরসিটি পরীক্ষা করার জন্য বলে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষার রিপোর্ট চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানোর পরপরই রোদেলাকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেই তাৎক্ষণিক রোদেলাকে ঢাকা পাঠানোর সব ব্যবস্থা করে দিলে আমরা দ্রুত এম্বুলেন্স নিয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। হাসপাতালে যাওয়ার আগে ঢাকার টেকনিক্যাল এলাকায় পৌঁছানোর পরপরই রোদেলা অচেতন হয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ দেখে পাশের ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে নেয়া হলে চিকিৎসকরা রোদেলাকে মৃত ঘোষণা করেন। এম্বুলেন্সেই সে মারা গেছে। রোদেলার খালু বলেন, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান রোদেলার মতো এত মেধাবী ছাত্রী মানিকগঞ্জ জেলায় খুবই কম রয়েছে। লেখাপড়া, গান, আবৃতি, রচনাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সে সব সময়ই প্রথম হয়েছে। সেই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে আমরা ধরে রাখতে পারলাম না বলেই কেঁদে উঠেন। মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সংকটাপন্ন অবস্থায় রোগীকে আমাদের হাসপাতালে আনা হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে জরুরি বিভাগে নিয়ে ডাক্তার দেখানো হয়। রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে তাকে এইচআরসিটি পরীক্ষা করানো হলে তার ২টি ফুসফুসে ২৬% আক্রান্ত দেখা যায়। এই অবস্থায় রোগীর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দিলে আমরা দ্রুত রাজধানীর কুর্মিটোলা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দেই। আমাদের এখান থেকে ঢাকা পাঠানোর সব ধরনের ব্যবস্থা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দেই। মানিকগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাজী একেএম রাসেল বলেন, একজন ছাত্রী করোনায় আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্রী করোনা পরীক্ষার জন্য তাদের হাসপাতালে এসেছিল। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, মেয়েটি গত ১৫ই সেপ্টেম্বর সর্বশেষ স্কুলে গিয়েছিল। তখন তার শরীরে কোনো সমস্যা ছিল না। গত তিনদিন ধরে তার জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। বুধবার দুপুরে তাকে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। অবস্থা ভালো না হওয়ায় সেখান থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে ওই ছাত্রী মারা যায়। আসলে সে করোনায় আক্রান্ত ছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ তার কোভিড পরীক্ষা করা হয়নি। এদিকে এর আগে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী করোনা পজেটিভ হওয়ায় ওই শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে ৫৮ জন সহপাঠীকে করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছিল। তবে, কারও দেহে করোনা শনাক্ত না হওয়ায় এবং আক্রান্ত শিক্ষার্থী সুস্থ হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ওই শ্রেণির পাঠদান চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সুত্র: দৈনিকমানবজমিন

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: