যেভাবে বুঝবেন আপনি আল্লাহর প্রিয়

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:৪১ এএম
আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে ভালোবাসেন। বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া অবারিত। কিন্তু কোনো কোনো বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া ও ভালোবাসা একটু বেশি। একনিষ্ঠ আমল, বেশি বেশি নফল ইবাদত ও নৈকট্য অর্জনের নানা প্রচেষ্টা আল্লাহর প্রিয় হয়ে ওঠার মাধ্যম। আল্লাহর এই বিশেষ ভালোবাসা প্রকৃত মুমিনরা উপলব্ধি করতে পারে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো— নবীজির প্রতি ভালোবাসা মুমিনমাত্রই নবীজি (সা.)-কে ভালোবাসা আবশ্যক। নবীজির প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা ছাড়া প্রকৃত মুমিন হওয়া অসম্ভব। তাই নবীর সুন্নত যথাযথ পালনের মাধ্যমে নবীজিকে ভালোবাসতে পারলে আল্লাহর ভালোবাসা অনুভব করা যাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তাহলে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন ও তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।’ (সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ৩১) নফল ইবাদতে মনোযোগী হওয়া ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি বেশি পরিমাণ নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই (রূপক অর্থে), যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দিই। আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২) ইসলামী বিধান পালনে কঠোর হওয়া ইসলামের সব বিধান পালনে শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান হওয়া আল্লাহর প্রিয় হওয়ার উপায়। কোনো বিধানের প্রতি অনাস্থা ও শৈথিল্য মনোভাব পোষণ করা যাবে না। কেউ আল্লাহর কোনো বিধানের প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য প্রদর্শন করলে তাঁর বিশেষ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ঈমান থেকেও বের হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের মধ্যে যে নিজ ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরেই আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদের তিনি ভালোবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালোবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা: মায়েদা, আয়াত : ৫৪) আল্লাহর জন্য পারস্পরিক সুসম্পর্ক রাখা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমেও আল্লাহর প্রিয় হওয়া যায়। যে সম্পর্কে আখিরাতের স্বার্থ মুখ্য থাকে—সেটাই আল্লাহর জন্য ভালোবাসা। পারস্পরিক এমন সম্পর্ক স্থাপনকারীরা আল্লাহর প্রিয় হয়ে যায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার ভালোবাসা সেই সব লোকের জন্য ওয়াজিব হয়েছে, যারা আমার (সন্তুষ্টির) জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে। আমার জন্য একত্রে বসে, আমারই জন্য একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং আমার জন্য একে অন্যের জন্য খরচ করে। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস : ১৭২১) দুঃখ-দুর্দশায় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা আল্লাহ মুমিনদের নানা সংকটে পতিত করে পরীক্ষা করে থাকেন। এটা মুমিনদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ধৈর্যের মাধ্যমে এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মুমিন আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বিপদ যত তীব্র হবে, প্রতিদানও তদনুরূপ বিরাট হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতিকে ভালোবাসলে তাদের পরীক্ষা করেন। যে ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য আছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যে তাতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য আছে অসন্তুষ্টি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০৩১) দুনিয়ার মোহ থেকে বেঁচে থাকা দুনিয়ার মোহ সব অনিষ্টের মূল। দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নসহ সামাজিক নানা বিশৃঙ্খলার পেছনে দুনিয়ার মোহ প্রধান কারণ। দুনিয়ার প্রতি প্রবল আকর্ষণ হলে বুঝতে হবে সে আল্লাহর ভালোবাসা থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। কাতাদা ইবনু নুমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তাকে দুনিয়া (প্রাচুর্য দান) থেকে বাঁচিয়ে রাখেন, যেমন তোমাদের কেউ তার রোগীকে পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৬) আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের ব্যাকুলতা একজন মুমিনের পরম কাঙ্ক্ষিত বিষয় হচ্ছে আল্লাহর সাক্ষাৎ অর্জন। আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে প্রতীক্ষারত মুমিনকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। আল্লাহকে দেখার ব্যাকুলতা যে অন্তরে যত বেশি থাকবে আল্লাহর ভালোবাসা সে তত বেশি অর্জন করতে পারবে। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ ভালোবাসে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ ভালোবাসেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ ভালোবাসে না, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ ভালোবাসেন না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫০৮)

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: